রোহিঙ্গা গণহত্যাঃ সাখারাভ প্রাইজ কমিউনিটি থেকে বাদ সু চি, নিরাপদ প্রত্যাবাসন চায় হাঙ্গেরি
 
নিউজ ডেস্ক
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন সমর্থন করার কারণে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিকে ‘সাখারভ প্রাইজ কমিউনিটি’ থেকে বাদ দিয়েছে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট (ইপি)। ইপির একটি সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালের আগের কৃতকর্মের জন্য সুচিকে সাখারভ পুরস্কার দেওয়া হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুরস্কার প্রত্যাহার সম্ভব না হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) তাঁকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ইপির সবচেয়ে শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা এটি।
এর আগে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা তাঁদের প্রতিবেদনে উপসংহার টেনেছেন, এই অভিযান গণহত্যার অভিপ্রায়ে পরিচালিত হয়েছে। মিয়ানমার এই গণহত্যা ও সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা দাবি করে আসছে, রোহিঙ্গা জঙ্গিদের হাত থেকে দেশকে রক্ষায় এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) ডিসেম্বরে দেওয়া এক ভাষণে সু চি গণহত্যায় অভিযুক্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন জানান। ৩০ মিনিটের ভাষণে তিন হাজার ৩৭৯টি শব্দ থাকলেও একবারও তিনি রোহিঙ্গা উচ্চারণ করেননি।
উল্লেখ্য, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার এক বছর আগে ১৯৯০ সালে সু চিকে সাখারভ পুরস্কার দেয় ইপি। এটি মানবাধিকারের পক্ষে লড়াইরতদের জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু এখন আর এই পুরস্কারজয়ীদের কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না সু চি।

অন্যদিকে, গত বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সফররত হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী পিটার সিজিজ্জার্তি সাংবাদিকদের বলেছেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন চায় হাঙ্গেরি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তিনি। এরপরই যৌথ প্রেস বিফ্রিংয়ে অংশ নেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই দিন মধ্যরাতে হাঙ্গেরির মন্ত্রী বাংলাদেশে আসেন।
হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল দুই দেশের কূটনীতিকদের মধ্যে প্রশিক্ষণ বিনিময়। রোহিঙ্গা বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের অধিকার রয়েছে নিজ বাসস্থানে বসবাসের। হাঙ্গেরি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে বোঝাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে। বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে তা সমর্থন করে হাঙ্গেরি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ১৮.৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে এবং জুলাই-মার্চ সময়ে আমদানি করেছে ১১.৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরি জয়েন্ট ট্রেড কমিশন গঠনের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব প্রেরণ করবে। পরে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে সে দেশের কিংবদন্তি ফুটবলার ফেরেঙ্ক পুসকাসের স্বাক্ষরিত একটি ফুটবল উপহার দিয়েছেন।
