রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র
 
নিউজ ডেস্ক
২০১৭ সালের আগষ্টে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে একটি পুলিশ পোস্টে হামলার অভিযোগে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে শান্তিপূর্ণ যেকোন সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থেকে সহায়তা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স সেক্রেটারি ড. মার্ক টি. এসপার। গত শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এক ফোনালাপে একথা জানান যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স সেক্রেটারি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। সেক্রেটারি এসপার কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেয়া পদক্ষেপ এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর মঙ্গলার্থে তাঁর সাম্প্রতিক কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। এ সময় উভয় নেতা সকল দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি তাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং সামুদ্রিক ও আঞ্চলিক সুরক্ষা, বৈশ্বিক শান্তিরক্ষা, এবং বাংলাদেশের সামরিক সামর্থ্যকে আধুনিকীকরণের উদ্যোগসহ সুনির্দিষ্ট দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক অগ্রাধিকারগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স সেক্রেটারি ড. মার্ক টি. এসপার, পারস্পরিক স্বার্থ ও মূল্যবোধের সমর্থনে ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্ক অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন জানিয়ে টেলিফোনে তাদের কথোপকথনের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, ঢাকার পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে জানানো হয়।
এদিকে, শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে ২৭তম আসিয়ান রিজিওনাল ফোরামের (এআরএফ) ভার্চুয়াল সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, দুর্ভাগ্যক্রমে আজ অবধি একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যায়নি। চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার তার দেশে রোহিঙ্গা ফেরাতে অনুকূল পরিবেশ তৈরির পরিবর্তে রাখাইন রাজ্যে লড়াই ও গোলাগুলি চলছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে গণহত্যার হাত থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ নিপীড়িত মানুষকে মানবিক আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ । বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী চেতনায় গঠনমূলক কূটনীতির মাধ্যমে সংকট সমাধানে বাংলাদেশ আগ্রহী। মিয়ানমার আমাদের বন্ধুদেশ তাই প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে তিনটি সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাইয়ের পরে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছিল। তারা তাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতেও সম্মত হয়েছিল এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তারা সম্মত হয়। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে আজ অবধি কেউ মিয়ানমারে ফিরে যায়নি এবং অনুকূল পরিবেশ তৈরির পরিবর্তে রাখাইন রাজ্যে লড়াই ও গোলাগুলি চলছে।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা মূলত তাদের স্বদেশে ফিরছে না কারণ তারা সুরক্ষার বিষয়ে তাদের সরকারকে বিশ্বাস করে না। আস্থা ঘাটতি ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা মিয়ানমারকে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ আসিয়ান, চীন, রাশিয়া, ভারত বা তাদের পছন্দের অন্যান্য বন্ধু দেশ থেকে অ-সামরিক ও বেসামরিক পর্যবেক্ষকদের জড়িত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলাম। এগুলো টেকসই ফেরতের জন্য আস্থার ঘাটতি হ্রাস করতে পারে। আমরা আমাদের এআরএফ অংশীদারদের কাছ থেকে এ বিষয়ে সমর্থন প্রার্থনা করি যাতে এই অসহায় রোহিঙ্গারা সুরক্ষা এবং মর্যাদায় তাদের বাড়িতে ফিরে আসতে পারে। সেখানে পুনর্বাসিত করতে এবং তাদের সমাজে পুনরায় সংহত করতে পারে। একবার তারা স্বদেশে ফিরে গেলে তারা মিয়ানমারের উন্নয়নে রাখতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগষ্টে দেশটির আরাকান রাজ্যে একটি পুলিশ পোস্টে হামলার অভিযোগে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয় প্রায় সাড়ে ৭লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এর আগেও মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।
