ইউপিডিএফের বাঁধায় বন্ধ নির্মান কাজ, সেনাবাহিনীর কাছে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন উপজাতি গ্রামবাসীর

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিজস্ব প্রতিবেদক

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের চাঁদাবাজি ও বাঁধার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে একটি সড়ক ও কালভার্টের নির্মান কাজ, আর এতে চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি উপজাতি অধ্যুষিত এই এলাকার প্রায় ২হাজার মানুষ।

সম্প্রতি উল্লেখিত সড়ক ও কালভার্টের নির্মান কাজ পুনরায় চালু করে এলাকার মানুষের দূর্ভোগ কমাতে স্থানীয় মাটিরাঙ্গা সেনা জোনের সহায়তা চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন উক্ত এলাকার একজন শিক্ষক ও একজন ইউপি সদস্য (মেম্বার)।

আবেদনের সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামেও বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলেও প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফের লোকজন খাগড়াছড়ি জেলায় মাটিরাঙ্গায় এসব উন্নয়নমূলক কাজে বাঁধার সৃষ্টি করেছে, যার দরুণ বন্ধ রয়েছে উপজেলার সাপমারা এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে খাগড়াছড়ি-মাটিরাঙ্গা প্রধান সড়কে সাপমারা ব্রীজ এলাকায় সাপমারা হতে রামানন্দ হেডম্যান পাড়ায় যাতায়াত রাস্তা নির্মান ও উক্ত রাস্তায় প্রয়োজনীয় ব্রীজ/কালভার্ট নির্মান প্রকল্প’র ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন খাগড়াছড়ির স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, এমপি। খাগড়াছড়ির সেলিম ট্রেডার্সের কাজটির প্রাক অনুমোদন পেয়ে কাজ শুরু করলেও ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের বাঁধার কারণে অল্প দিনের মধ্যেই তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়।

কাজ শুরুর প্রাক্কালে রাস্তা নির্মানের সুবিধার্থে বিভিন্ন স্থানে সামান্য পরিমানে মাটি ও কিছু কিছু স্থানে কালভার্ট নির্মানের জন্য মাটি কেটে গর্ত তৈরী করা হয়। কিন্তু এরপর কাজ থমকে গেলে এসব গর্ত ও কাটা মাটিই গলার কাটা হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় উপজাতি গ্রামবাসীর। এছাড়া দীর্ঘদিন কাঁদা মাটিতে পড়ে থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে গেছে।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, গর্ত ও মাটি কাটার ফলে স্থানীয়দের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা সংকুচিত হয়েছে, যেকোন প্রয়োজনে স্থানীয়রা বাজারে, স্কুল-কলেজে যেতে চরম বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে যাতাযাতে ব্যর্থ হচ্ছে। এলাকার গর্ভবতীসহ মুমূর্ষ রোগীদের আনসা-নেওয়ার জন্য এলাকায় কোন গাড়ি কিংবা এম্বুলেন্স প্রবেশ করতে করতে পারেনা। গত বছরে করোনার প্রাক্কালে উক্ত এলাকায় হামে আক্রান্ত হয় শতাধিক উপজাতি শিশু, এসময় প্রয়োজনীয় গাড়ি প্রবেশ ও সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারায় মারা যায় বেশ কয়েকটি শিশু।

উক্ত উপজাতি এলাকায় রাস্তাটির নির্মান কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকার অন্তত ২ হাজার মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে উল্লেখ করে মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য মলেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও বরণ কুমার ত্রিপুরা স্বাক্ষরিত আবেদনে বলা হয়, এসবিউপজাতি সন্ত্রাসীদের বাঁধার কারণে উক্ত এলাকায় বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নে নির্দিষ্ট ঠিকাদার প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, ব্রীজ/কালভার্ট, টিউবঅয়েল নির্মান করতে না পারায় এলাকাবাসী চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

উক্ত সমস্যাগুলো নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন এলাকার লোকজন অতিদ্রুত বন্ধ হয়ে যাওয়া উন্নয়ন কাজগুলো সম্পন্ন ও সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা কামনা করেছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মলেন্দ্র লাল ত্রিপুরা মুঠোফোনে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বর্তমানে এলাকার লোকজন বর্তমানে রাস্তাটির কারণে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। মাঝখানে একবার কাজ শুরুর চেষ্টা করা হলে সন্ত্রাসীরা স্বশরীরে এসে কাজ বন্ধ করে দিয়ে যায়, এরপর কাজটি মূলত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে তিনি সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেলিম ট্রেডার্সের কর্ণধার মোঃ সেলিম বলেন, উক্ত এলাকায় রাস্তা ও উক্ত রাস্তায় প্রয়োজনীয় ব্রীজ/কালভার্ট নির্মানের একটি প্রকল্পের কাজ আটকে আছে। তবে এর বেশী কিছু মন্তব্য করতে তিনি রাজি হন নি।