বান্দরবানে নওমুসলিম ফারুক হত্যার প্রতিবাদে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ
 
                 
নিউজ ডেস্ক
বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে উপজাতি স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে ঈমাম নওমুসলিম ওমর ফারুক হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশসহ বিক্ষোভ মিছিল করেছে পাহাড়ের বিভিন্ন সংগঠন ও ইসলামী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।
২২ জুন মঙ্গলবার সকালে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে এই হত্যাকান্ডের জন্য সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসকে দায়ী করে সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন করেছে ক্বওমী মাদ্রাসা ও ওলামা ঐক্য পরিষদ, ইসলামী রেনেসাঁ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। জেলা শহরের শাপলা চত্ত্বরে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকালে হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এতে সংহতি প্রকাশ করে যোগ দেয় ইসলামী রেনেসাঁ খাগড়াছড়ি জেলা শাখাসহ স্থানীয় মুসলিম ধর্মের সাধারণ মানুষসহ ইমাম ও ওলামারা।

ক্বওমী মাদ্রাসা ও ওলামা ঐক্য পরিষদের পক্ষ বক্তারা ৭ দফা দাবী জানিয়ে অবিলম্বে ঈমাম নওমুসলিম ওমর ফারুক এর হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবী জানান। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচী ঘোষনার হুশিয়ারী জানান সংগঠনটি। একই সাথে পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প স্থাপন, চিরুনী অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের দাবী জানান। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সন্ত্রাস নিমূলে সরকারের হস্থক্ষেপে কামনা করেন।
ক্বওমী মাদ্রাসা ও ওলামা ঐক্য পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি মাওলানা কারী উসমান গণির সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের মুফতি ইমামুদ্দীন কাসেমী, হাবিবুল্লাহ জাহাঙ্গীর,
ইসলামী আন্দোলনের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, ইসলামী রেনেসাঁর খাগড়াছড়ির সমন্বয়ক ইব্রাহীম খলিল প্রমূখ।
এদিকে, নওমুসলিম মোহাম্মদ ওমর ফারুক ত্রিপুরা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। মঙ্গলবার সকালে জেলার লামা ও বিকেলে আলীকদমে উপজাতীয় মুসলিম কল্যাণ সংস্থা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ লামা শাখার যৌথ উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়।

এ সময় বক্তারা বলেন, রোয়াংছড়িতে জেএসএস সন্ত্রাসীরা বাড়ি থেকে জোরপূর্বক বের করে নতুন মুসলিম হওয়া মোহাম্মদ ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে গুলি করে হত্যা করে। তারা দাবি করেন, শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তারা সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বিক্ষোভ মিছিলে বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি মো. নাছির উদ্দিন, সহ-সভাপতি মো. রুহুল আমিনসহ জেলা ও লামা-আলীকদম উপজেলার নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া, ওমর ফারুকের আত্নারাগফিরাত কামনা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সারাদেশের সকল মসজিদ দোয়া ও মোনাজাত করার জন্য ইমাম সাহেবদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রেরিত এক প্রেস বার্তায় সংগঠনটি জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ মনে করে এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিনিয়ত বিনষ্ট হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাজ করা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উচিত এই সমস্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জেনেছি, শুধুমাত্র ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণেই এই ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন ধরে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছিল। কাল নামাজ পড়ে যাওয়ার পথে তাকে হত্যা করা হয়। শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে এভাবে হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশ ইতিপূর্বে ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই। আমরা মনে করি ধর্ম প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনতার বিষয়। ধর্মান্তরিত হলে কোন ব্যক্তি তার জাতীয়তা পরিবর্তন করতে পারেনা, জাতীয়তা থেকে যায় কারণ ধর্ম বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত।
পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ঠকারী সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধনও করে সংগঠনটি।
উল্লেখ, গত শুক্রবার (১৮ জুন) বান্দরবানের রোয়াংছড়ির তুলাছড়ি পাড়ায় রাতে নামাজ আদায় শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর সন্ত্রাসীরা তাকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা কারে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পূর্বে তার নাম ছিল পূর্ণচন্দ্র ত্রিপুরা। তিনি ইতি পূর্বে খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম ত্যাগ করায় দীর্ঘ দিন ধরে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছি। এরই সূত্র ধরে গত ১৮ জুন শুক্রবার তাকে ব্রাঁশ ফায়ার করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
