রাজধানীতে ভবনে বিস্ফোরণে ৬ জন নিহত, তদন্তে দুই কমিটি

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রাজধানী ঢাকার মগবাজারের আউটার সার্কুলার রোডের শরমা হাউজ রেস্টুরেন্ট মাত্র এক সেকেন্ডের বিস্ফোরণেই কেঁপেছে পুরো এলাকা। লণ্ডভণ্ড হয়েছে তিনতলা ভবন। বিধ্বস্ত হয়েছে রাস্তায় থাকা ৩টি বাসও। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশপাশের আরো ১৪টি ভবন। বিস্ফোরণের এ ঘটনায় এ পর্যন্ত প্রাণ গেছে ৬ জনের। আহত দুই শতাধিক, যার মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অর্ধশতাধিক।

মগবাজারের আউটার সার্কুলার রোডের রাখী নীড় এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস। সকাল থেকেই ভবনটি ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, তাদের ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি ভবনটির ধ্বংসস্তুপ থেকে আলামত সংগ্রহ করবে। ভনটির সবগুলো পিলারেও ফাটল রয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ৩ তলা ভবনটি সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ভবনটি ধস ও বিস্ফোরণের আলামত সংগ্রহ করছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর। গ্যাসের লিকেজ থেকেই বিস্ফোরণ বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস। বোমার বিস্ফোরণ নয় বলে সাফ জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। ঘটনা তদন্তে গঠন হয়েছে ৪ সদস্যের কমিটি।

মগবাজারের শপিংমল আড়ং। সন্ধ্যা সাতটা ২৭ মিনিট। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তখনও স্বাভাবিকভাবেই কেনাকাটার জন্য প্রধান ফটকে অপেক্ষমান ক্রেতারা। ঘড়ির কাটায় সাতটা ২৭ মিনিট ৪০ সেকেন্ড হতেই হঠাৎ মুহূর্তের বিস্ফোরণ। তাতেই লণ্ডভণ্ড হয়েছে সব। বিস্ফোরণের ফুটেজ ধরা পড়ে মগবাজার ফ্লাইওভারে থাকা একটি গাড়ির ক্যামেরাতেও।

আউটার সার্কুলার রোডের তিনতলা ভবন, রাখি নীড়ের নিচতলা থেকেই বিস্ফোরণের সূত্রপাত। তাতে বিধ্বস্ত শরমা হাউজ ও সিঙ্গারের ওয়ার হাউজ। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে থাকা তিনটি বাসও। ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, শরমা হাউজের গ্যাসজাতীয় কিছু থেকেই বিস্ফোরণের সূত্রপাত। তবে, এর সঙ্গে এসি, জেনারেটর বিস্ফোরণও যুক্ত হয়েই বড় মাত্রার বিস্ফোরণ হয়।

বড় বিস্ফোরণের কারণে জঙ্গি হামলার গুজব উঠলেও ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সাফ জানালেন, বোমা হামলার কোন আলামত মেলেনি।

ঘটনার পর থেকেই আহতদের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে হাসপাতাল। মগবাজারের ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালের ছুটে যান দুই শতাধিক। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অর্ধশতাধিককে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেলে।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেয়া হয় ১৭ জনকে। গুরুতরদের আইসিউতে রেখে বাকিদের পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল।

নিহত ছয়জনের মধ্যে রয়েছে মগবাজারের জান্নাত কাকলি ও তার ৯ মাসের মেয়ে তায়েবা। এছাড়া, মগবাজারের স্বপন মিয়া, পূর্ব জুরাইনের মোস্তাফিজুর রহমান ও গাজীপুরের আবুল কাসেম মোল্লাও মারা গেছে বিস্ফোরণে।

এদিকে, মগবাজারের বিস্ফোরণ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে না, গ্যাস জমেই বিস্ফোরণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানানা তিনি। বিধ্বস্ত ভবনের ভেতরে মিথেন গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

প্রাথমিক তদন্তে এলপিজি সিলিন্ডারে মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনা হতে পারে বলে ধারণা করছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি, জানিয়েছেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল্লাহ।

তিতাস গ্যাস কোম্পানির এমডি জানান, ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে তিতাসের দল। তিতাস গ্যাসের কোনো পাইপ লাইন সেখানে নেই বলেও জানান তিনি। দুর্ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে তিতাস। একসঙ্গে কমিটিকে আজকের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

রোববার সন্ধ্যায় মগবাজারের ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে লণ্ডভণ্ড হয় একটি তিনতলা ভবন। আগুনে পুড়েছে সড়কে থাকা দুটি বাসও। এ ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের । আহত দুই শতাধিকের মধ্যে ৪৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিটে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।