উপজাতি যুবকের দেয়া তথ্যে হবিগঞ্জের সাতছড়ি উদ্যান থেকে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার
নিউজ ডেস্ক
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলার এক উপজাতি যুবকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে অভিযান চালিয়েছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এ সময় ১৫টি মর্টার শেল, ২৫টি বুস্টার ও ৫১০ রাউন্ড অটো মেশিনগানের গুলি উদ্ধার করা হয়।
গত সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে চুনারুঘাট থানা চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর (রোববার) রাতে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আপেল ত্রিপুরা অমিত (৩৩) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। আটককৃত যুবক খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার বাসিন্দা বিশু ত্রিপুরার ছেলে। তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সাতছড়ির গহীন অরণ্যে গোলাবারুদ থাকার তথ্য দেন। এরপর তাকে নিয়ে সোমবার ভোরে সাতছড়িতে অভিযান শুরু করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তার দেখানো পৃথক দুটি জায়গা থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান আরও বলেন, এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি কেন, কী উদ্দেশ্যে, কোথা থেকে এসব গোলাবারুদ এনে মজুত করেছেন।
তিনি বলেন, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা ভোর ৪টার দিকে আটক অমিতকে নিয়ে সাতছড়ি আসে। টিকিট কাউন্টারের গেট থেকে প্রায় এক ঘণ্টা হাঁটার পর তিনি একটি পাহাড়ের টিলার নিচে অস্ত্র আছে বলে জানান। সেখানে আমাদের সদস্যরা মাটি খুঁড়ে দুটি বাক্স উদ্ধার করে। অমিতের দেখানো আরও দুটি জায়গায় মাটি খুঁড়ে আরও চারটি বাক্স পাওয়া যায়। পরে আরেকটি টিলার ওপর মাটি খুঁড়ে একটি বড় ড্রামে ভর্তি ১৫টি মর্টার শেল পাওয়া যায়। এছাড়া চারটি বক্সে ৫১০ রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়। এগুলো অটোমেটিক মেশিনাগানের গুলি। উদ্ধারকৃত গোলাবারুদ সাধারণত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে না। এগুলো সাধারণত সেনাবাহিনী ব্যবহার করে থাকে।
আসাদুজ্জামান বলেন, আটক অমিতকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। তার দখলে বা তার নলেজে আর কোনো গোলাবারুদ আছে কি না, তা আমরা জানার চেষ্টা করছি।
সংবাদ সম্মেলন কালে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা ছাড়াও হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি ও চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী আশরাফ ও পরিদর্শক (তদন্ত) চম্পক ধাম উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, এ ঘটনায় আপেল ত্রিপুরার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে তার নিজ জেলা জুড়ে। উদ্ধারকৃত এসব মর্টার শেল, বুস্টার ও অটো মেশিনগানের গুলিগুলো কার হতে পারে? এ নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষন। কেউ কেউ মনে করছেন, এ ঘটনায় পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা দরকার, আর যদি তাদের সংশ্লিষ্টতা থাকে, তবে এটি পাহাড়ের নিরাপত্তার জন্য অশনি একটি সংকেত বলে মনে করছেন পাহাড়ের সচেতন মহল।
উল্লেখ্য, সাতছড়ি বনে এর আগে ২০১৪ সালের ১ জুন থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দফায় অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ৩৩৪টি কামান বিধ্বংসী রকেট, ২৯৬টি রকেট চার্জার, একটি রকেট লঞ্চার, ১৬টি মেশিনগান, একটি বেটাগান, ছয়টি এসএলআর, একটি অটোরাইফেল, পাঁচটি মেশিনগানের অতিরিক্ত খালি ব্যারেল, প্রায় ১৬ হাজার রাউন্ড বুলেটসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করে র্যাব।
এর পর আবারও ওই বছরের ১৬ অক্টোবর থেকে চতুর্থ দফার প্রথম পর্যায়ে উদ্যানের গহীন অরণ্যে মাটি খুঁড়ে তিনটি মেশিনগান, চারটি ব্যারেল, আটটি ম্যাগাজিন, ২৫০ গুলির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আটটি বেল্ট ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি রেডিও উদ্ধার করা হয়।
পরে একই বছরের ১৭ অক্টোবর দুপুরে এসএমজি ও এলএমজির আট হাজার ৩৬০ রাউন্ড, থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ১৫২ রাউন্ড, পিস্তলের ৫১৭ রাউন্ড, মেশিনগানের ৪২৫ রাউন্ডসহ মোট ৯ হাজার ৪৫৪ রাউন্ড বুলেট উদ্ধার করা হয়।
পঞ্চম দফায় ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সাতছড়িতে অভিযান পরিচালনা করে ১০টি হাই এক্সক্লুসিভ ৪০ এমএম অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট উদ্ধার করা হয়।
ষষ্ঠ দফায় ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর ১৩টি রকেট লঞ্চারের শেলসহ কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। গত ২ মার্চ অভিযান চালিয়ে ১৮টি ট্যাংক বিধ্বংসী রকেট গোলা উদ্ধার করে বিজিবি।
সবশেষ ১৩ আগস্ট হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন একটি ব্রিজের পাশ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় নয়টি একনলা বন্দুক, তিনটি পিস্তল ও ১৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে বিজিবি।