অবাস্তব প্রকল্প নিয়ে আরেকবার ভাবুন: মোমেনকে জয়শঙ্কর
নিউজ ডেস্ক
যেসব বন্দর বা এয়ারপোর্ট খালি পড়ে থাকে তেমন অটেকসই অবকাঠামো প্রকল্প নির্মাণের জন্য ঋণপ্রত্যাশী দেশগুলোর উদ্বেগ থাকা উচিত। চীন যেভাবে আর্থিক সহায়তা দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়াড জোটগুলো তেমনটা দিতে পারবে কিনা- বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এমন প্রশ্ন করলে তার জবাবে কড়া সুরে এমন কথা বলেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
গত শনিবার জার্মানির মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের আলোচনা চলাকালে মোমেন ও জয়শঙ্করের মধ্যে এসব কথা হয়। এসময় চীনের সাথে “সীমান্ত পরিস্থিতির কারণে” ভারতের সম্পর্ক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন জয়শঙ্কর। ভারতের একটি প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য হিন্দুর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সীমান্তের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ২০২০ সালের এপ্রিল থেকেই চীনা সেনারা ‘অনুপ্রবেশ’ করছে।
ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সম্মেলনের প্যানেল আলোচনায় জয়শঙ্কর বলেন, “আমাদের এই অঞ্চলের অনেক দেশের ওপর আমরা এখন দেনার বোঝা চাপিয়ে দিতে দেখছি। যে এয়ারপোর্টে একটি বিমানও অবতরণ করবে না, বা যে বন্দরে একটি জাহাজও আসবে না- বাণিজ্যিকভাবেও টেকসই নয় এমন সব প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।” একথার মাধ্যমে তিনি যেন শ্রীলঙ্কার দেনা সংকটের দিকেই সরাসরি ইঙ্গিত দেন।
দেশটির হাম্বানটোটো সমুদ্রবন্দর এবং মাত্তালা বিমানবন্দর দুটি অবকাঠামোই চীনের দেওয়া ঋণে নির্মিত হয়। শ্রীলঙ্কা সে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে হাম্বানটোটো বন্দর ৯৯ বছরের জন্য চীনা একটি কোম্পানিকে লিজ দিতে হয় কলম্বোকে। নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনসহ পশ্চিমা দেশগুলোও চীনের বিরুদ্ধে এমন দেনার কূটনীতির অভিযোগ করে আসছে।
জয়শঙ্কর বলেন, “সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা দেশগুলোকেই নিজ স্বার্থে সচেতন থাকতে হবে, তবে এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যেও উদ্বেগের। কারণ অটেকসই অবকাঠামো প্রকল্পের প্রভাব সুদুরপ্রসারী, তার হাত ধরে সৃষ্টি হয় দেনার সম্পদ (চীনের জন্য)। পরে আবার তা অন্য কিছুতে পরিণত হয়”- শ্রীলঙ্কার সংকটকে ইঙ্গিতপূর্ণ ব্যাখ্যায় এভাবেই তুলে ধরেন তিনি।
জয়শঙ্করের প্যানেল আলোচনা চলাকালে তার সাথে ছিলেন ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাসহ যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ সিনেটর জিন শাহিন। দর্শক সাড়িতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মোমেন এসময় অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়নের প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে উন্নয়ন চলছে, এই বাস্তবতায় (ঋণের ক্ষেত্রে) কী করা উচিত সে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। জনগণও আরও অবকাঠামো চায়।”
“উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে আমাদেরও আরও তহবিল দরকার। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বহু শর্তের বেড়াজালে এসব ঋণ আসে, যা সামাল দেওয়া খুবই কঠিন। আজ আমাদের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ আর এডিবি। তবে উন্নয়ন প্রক্রিয়া অনেক উচ্চগতির হওয়ায় এখন আমরা অন্যদের থেকেও কিছু অর্থায়ন পাওয়ার চেষ্টা করছি। এখান থেকে কী চাইলেই সহজে বের হওয়া সম্ভব?”- প্যানেলের প্রতি প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন মোমেন।
আলোচনায় কোয়াডের অর্থায়ন পরিকল্পনাও উঠে আসে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তার ঠেকাতে এই অঞ্চলে টেকসই অবকাঠামো নির্মাণে অর্থায়ন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে জোটটি। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে “ব্লু ডট শীর্ষক” প্রস্তাবনা। ভারত ও জাপানও এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নের আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। তবে এখনও এটির কোনো বাস্তবিক কাঠামো তৈরি হয়নি।