পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন আইন বলবৎ রাখার জন্য সরকারের কাছে পাহাড়ের হেডম্যন ও কার্বারীগণের আবেদন
নিউজ ডেস্ক
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০’ আইন বলবৎ রাখা ও এর স্বপক্ষে সরকারের অবস্থান গ্রহনের আহ্বান জানিয়ে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের হেডম্যন ও কার্বারীগণ।
বুধবার (২ মার্চ) ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের কাছে এই স্মারকলিপি তুলে দেন হেডম্যান এসোসিয়েশন ও কার্বারী নেতৃবৃন্দ। এর আগে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা দুই শতাধিক হেডম্যান-কারবারী খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সামনে একত্রিত হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২০০৩ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সময় হাইকোটে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ সালের আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করা হয়। কিন্তু তৎকালীন সরকার পক্ষে অ্যাটনীজেনারেল কার্যালয় থেকে বিদ্বেষপ্রসুত, ত্রুটিপূর্ণ, পক্ষপাটদুষ্ট ও বৈষম্যমুলক অবস্থানের কারনে হাইকোট পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন-১৯০০ আইনকে ‘মৃত আইন’ বলে রায় দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০১৭ সালে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়কে খারিজ করে দেন এবং ১৯০০ সালের আইনকে বৈধ ও কার্যকর আইন মর্মে ঘোষণা করেন। এই রায়ের পরও ২০১৭ ও ২০২১ সালে আপিল বিভাগে দুইটি রিভিউ পিটিশন মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলাগুলো বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারের প্রক্রিয়াধীন। এই অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর ঐতিহ্যবাহী নেতৃত্ব হেডম্যান ও কার্বারীগণ বর্তমান সরকারের কাছে ১৯০০ সালের আইনের স্বপক্ষে অবস্থান গ্রহনের আহ্বান জানান।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি(শান্তি চুক্তি নামে পরিচিত) অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন সংশোধন ও প্রনয়ন করা হয়েছিল।পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্রজাতিগোষ্ঠী গুলোর প্রচলিত আইন, প্রথা, রীতি, পদ্ধতি ও রেওয়াজ সমূহ অব্যাহত ও কার্যকর রাখতে ১৯০০ সালের আইন পূর্ণাঙ্গভাবে বলবৎ রাখা খুবই জরুরী।
খাগড়াছড়ি জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি ও হাফছড়ি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগনের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐহিত্য, পাহাড়ী জনগোষ্ঠির রীতিনীতি ও প্রথা সমূহ সংরক্ষণের জন্য ১৯০০ সনের হিলট্র্যাক্টস রেগুলেশন প্রণয়ন করা হয়। আইনটি বলবৎ রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের কাছে এই স্মারকলিপি প্রদান কালে উপস্হিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি ও হাফছড়ি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হিরন জয় ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আনেউ চৌধুরী নয়ন, খাগড়াছড়ি জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ প্রীতি চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিত ত্রিপুরা, মাটিরাঙ্গা উপজেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি চাইলাপ্রু চৌধুরী, সিএইচটি নারী হেডম্যান নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া ত্রিপুরা,বাইল্যাছড়ি মৌজার হেডম্যান ত্রিদ্বীব নারায়ন ত্রিপুরা, বাঙালকাটি মৌজার হেডম্যান নিবুল লাল রোয়াজা, দলদলি মৌজার হেডম্যান দ্বীন মোহন ত্রিপুরা ছাড়াও বিভিন্ন মৌজার দুই শতাধিক হেডম্যান ও কারবারী উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, হিলট্র্যাক্ট রেগুলেশন ১৯০০ (পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি) মৃত্যু আইন পুন:বহাল রাখার দাবীতে মৌজার হেডম্যানগণ স্মারকলিপি প্রদান করেছে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজ বরাবর। আজ বুধবার সকাল ১১ টায় বান্দরবান জেলার বিভিন্ন মৌজার হেডম্যানগণ এই স্মারকলিপি প্রদান করেন।
গত ৩ ফেব্রুয়ারী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে হিলট্র্যাক্ট রেগুলেশন ১৯০০ (পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি) নিয়ে আপিল রিভিউর জন্য উত্থাপন করা হয়। আদালত আইনটি আরো পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য সময় নেয়। সর্বোচ্চ আদালত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০’- কে সাংবিধানিকভাবে বৈধ ও কার্যকর হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়া রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিভিউ পিটিশনের পুনরায় শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দিন ধার্য করে। মূলত এই প্রেক্ষিতে মৃত্যু আইনটি পুন:বহাল রাখার অংশ হিসেবে ডিসি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে হেডম্যান এসোসিয়েশন।
হিলট্র্যাক্ট রেগুলেশন ১৯০০ কে ২০০৩ সালে হাইকোর্ট মৃত্যু আইন হিসেবে রায় দেয়। পরবর্তীতে বিচারপতি এসকে সিনহা রাঙ্গামাটি ফুড প্রডাক্ট ও কাপ্তাই ওয়াগ্গাছড়া চা-বাগান মামলার রায়ের মাধ্যমে হিলট্র্যাক্ট রেগুলেশন ১৯০০ কে সাংবিধানিক বৈধতা ও কার্যকর করার রায় দেন।
উল্লেখ যে, হিলট্র্যাক্ট রেগুলেশন ১৯০০ কে সাংবিধানিক বৈধতা দিলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালীরা ভূমি অধিকার হতে বঞ্চিত হবেন এবং এ অঞ্চল থেকে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ হারাবে।