শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট: টেক্সটাইল খাতের কার্যাদেশ পাচ্ছে ভারত
নিউজ ডেস্ক
শ্রীলঙ্কা থেকে যেসব দেশ/ ব্রান্ড টেক্সটাইল পণ্য আমদানি করতো, তারা এখন ভারতমুখী হচ্ছে। দ্বীপরাষ্ট্রটির চরম অর্থনৈতিক দুর্দশার কালে আন্তর্জাতিক ক্রেতারাও হাত গুটিয়ে নেওয়ায়, আরও কমছে কলম্বোর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ।
গত শুক্রবার ভারতের বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শ্রীলঙ্কার অর্ডার লাভের কথা জানান।
বার্তাসংস্থা এএনআই’কে বস্ত্রবয়ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইউপি সিং বলেন, “যেসব দেশ আগে শ্রীলঙ্কা থেকে টেক্সটাইল সংগ্রহ করতো, তারা এখন ভারতের প্রস্তুতকারকদের সাথে যোগাযোগ করছে। এরমধ্যেই কিছু অর্ডার পেয়েছে তামিলনাড়ুর তিরুপুর জেলার কিছু কোম্পানি।”
ভারতের দক্ষিণের রাজ্যটিতে তিরুপুর-ই যে টেক্সটাইল শিল্পের হাব সেকথাও উল্লেখ করেন সচিব।
সিং জানান, গত বছর ভারতের টেক্সটাইল শিল্প রপ্তানি আয় করে প্রায় ৪,৩০০ কোটি ডলার। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১০ হাজার কোটি ডলারের। ভারত বর্তমানে ৩৪০ লাখ বেল তুলা উৎপন্ন করে, তবে শ্রীলঙ্কার অর্ডার আসায় উৎপাদনের তুলনায় তুলার ব্যবহার বেশি হবে।
বাড়তি চাহিদার কারণে ভারতকে তুলার আমদানি বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো দেশকে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল থেকে তুলা আমদানিতে কোনো শুল্ক দিতে হয় না বলেও উল্লেখ করেন ভারতীয় এ সচিব।
ভারত সরকার সম্প্রতি তুলা আমদানি শুল্ক আদায় চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মওকুফ করেছে। গত ১৪ এপ্রিল থেকেই কার্যকর হয়েছে এ সিদ্ধান্ত।
এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে সিং বলেন, “আমাদের আমদানিকারকদের ১১ শতাংশ শুল্ক দিয়ে তুলা আমদানি করতে হয়, ফলে তারা প্রতিযোগী সক্ষমতা হারায়। একারণে, ভারতীয় আমদানিকারকেরা সরকারের প্রতি তুলায় আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি করছেন। ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের মতো নির্দিষ্ট কিছু বাজারে বাড়তি সুবিধা পেলেও, তা থেকে বঞ্চিত আমাদের রপ্তানিকারকেরা।”
“ভারতীয় রপ্তানিকারকদের এসব বাজারে সাড়ে ৯ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক দিতে হয়। তুলার ১১ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং সাড়ে ৯ শতাংশ রপ্তানি শুল্কের মিলিত প্রভাবে আমাদের রপ্তানিকারকদের জন্য এসব বাজারে প্রতিযোগিতা করা কঠিন হয়ে পড়ছিল। এখন আমদানিতে কোনো শুল্ক না থাকায় রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগী সক্ষমতা নিশ্চিতভাবে বাড়বে”- যোগ করেন তিনি।
ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্টার্স অর্গানাইজেশনের সভাপতি এ. শক্তিভেল বলেছেন, “(বিদেশি) ক্রেতারা তিরুপুরের রপ্তানিকারক সমিতির সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে। ভারতের অন্যান্য স্থানেও তারা খোঁজখবর নিচ্ছে কারণ শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি আসলেই অনেক খারাপ। এটি আমাদের জন্য এক সুযোগ। তাদের (ক্রেতা) সাথে ভালো আলোচনা চলছে, যার সুবাদে আমরা শ্রীলঙ্কা থেকে বেশকিছু বড় অর্ডার ভারতে চলে আসার আশা করছি।”
“যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ থেকে আমরা ক্রেতাদের আগ্রহের কথা জানছি। তারা মূলত টি-শার্ট এবং বাচ্চাদের পোশাকের মতো উভেন আইটেমের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছেন। এসব জিজ্ঞাসা একপর্যায়ে কার্যাদেশে পরিণত হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
ভারত যখন বাজার ধরতে ব্যস্ত, সেই মুহূর্তে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশজুড়ে তীব্র জ্বালানি সংকট, বিদ্যুৎ ঘাটতিতে বিপর্যস্ত জনজীবন।
করোনা মহামারির শুরুর দিক থেকেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ভেঙে পড়তে শুরু করে। মহামারিকালে নামে পর্যটন খাতেও ধস।
বর্তমানে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ প্রায় তলানিতে। এতে করে দেশটির খাদ্য ও জ্বালানি আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। নিত্যপণ্যের মারাত্মক সংকটের মুখে দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছেও সহায়তা চাইছে কলম্বো।