কূটনীতিক বহিষ্কারের আরেক রকম যুদ্ধ
নিউজ ডেস্ক
প্রাচীনকালে রাজা-বাদশারা বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে যোগাযোগ করতে দূত ব্যবহার করতেন। এ দূতেরা খবর নিয়ে অন্য রাজ্যে পৌঁছাতো, তারপর প্রত্যুত্তর নিয়ে ফিরে যেত। দূতেদের কখনো হত্যা বা ক্ষতি করার বিধান ছিল না।
আধুনিক যুগে রাজ্যের বদলে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে। দূতিয়ালির স্থান নিয়েছে কূটনীতি। বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রতিটি দেশ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য অন্য দেশে কূটনীতিবিদ পাঠায়।
পররাষ্ট্র বিষয়ে কৌশলপূর্ণ নীতিতে পারদর্শী কূটনীতিকেরা নিজেদের দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ ও অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য অন্য দেশে বসে কাজ করেন। কূটনীতিকদের সক্ষমতার ওপর দুই দেশের সম্পর্কের মাত্রাও কিছুটা নির্ধারিত হয়।
সেজন্য আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কূটনীতিকেরা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে সর্বদা বিবেচিত হন। প্রায়ই দেখা যায়, একটি দেশ অন্য দেশের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করছে। এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। কখনো কখনো দুই দেশের মধ্যে আচমকা তৈরি হওয়া বৈরী সম্পর্কের কারণে কূটনীতিকেরা বহিষ্কৃত হন।
আবার অনেক সময় দেখা যায়, কূটনৈতিকদের আড়ালে বিভিন্ন দেশ অন্য দেশে গোয়েন্দা পাঠায়। ওই গোয়েন্দারা কূটনৈতিকের ছদ্মবেশে তাদের মিশন পরিচালনা করেন। কোনো দেশ অন্য দেশের কূটনীতিবিদকে গোয়েন্দা হিসেবে সন্দেহ করলে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে পারে, যাকে পার্সোনা নন গ্রাটা বলা হয়।
পৃথিবীর পরাশক্তি ও উন্নত দেশগুলোতে প্রায়ই আমরা দেখি কূটনৈতিক বহিষ্কারের হিড়িক পড়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই রাশিয়ার, এবং রাশিয়া প্রায়শই যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক বহিষ্কার করে। এ ধরনের বিপরীতমুখী বহিষ্কারের ঘটনাকে ‘টিট-ফর-ট্যাট’ বলা হয়। বিশ্বে নানান সময়ই বিভিন্ন দেশ বড় সংখ্যায় অন্য দেশের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছিল। জেনে নেওয়া যাক এরকম কয়েকটি বড় আকারে কূটনৈতিক বহিষ্কারের ঘটনার কথা।
ইউক্রেনে আক্রমণ ও বিশ্বব্যাপী রাশিয়ার কূটনৈতিক বহিষ্কার
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এ যুদ্ধে রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু এ দেশগুলোর পক্ষে সরাসরি রাশিয়াকে প্রতিহত করা বা ইউক্রেনকে সহায়তা করা সম্ভব নয়।
এমনকি ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোও রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তার বদলে এ দেশগুলো ইউক্রেনকে অস্ত্র, রসদ ইত্যাদি দিয়ে সহায়তা করছে।
তবে রাশিয়াকে জব্দ করার আরেকটি উপায় এসব দেশগুলোর হাতে রয়েছে। সেটি হচ্ছে দেশ থেকে রাশিয়ার কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এর তথ্যমতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এখন অব্দি প্রায় ৪০০ জনের মতো রাশিয়ান কূটনীতিবিদকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এসব কূটনীতিকদের অনেককে বহিষ্কারের পেছনে একটি কারণ হিসেবে রাশিয়ার গুপ্তচরবৃত্তিকে দায়ী করা হয়েছে। ইউরোপের দেশগুলোর দাবি, রাশিয়া তাদের কূটনীতিকদের আড়ালে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া অনেক দেশ ইউক্রেনকে সংহতি জানাতে রাশিয়ান কূটনৈতিকদের বহিষ্কার করেছে।
রাশিয়ার গণমাধ্যম তাস তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাশিয়ায় অবস্থিত পোল্যান্ড দূতাবাস; ও ইরকুতস্ক, কালিনিনগ্রাদ, এবং সেইন্ট পিটার্সবার্গ-এ অবস্থিত কনস্যুলেট জেনারেল অফিস থেকে ৪৫ জনকে পার্সোনা নন গ্রাটা ঘোষণা করেছে রাশিয়া।
একইসাথে মস্কোর বুলগেরিয়ান দূতাবাস থেকেও দুইজনকে পার্সোনা নন গ্রাটা ঘোষণা করেছে রাশিয়া। এর আগে মার্চ মাসে এ দুই দেশ একই সংখ্যক রাশিয়ান কূটনৈতিক বহিষ্কার করেছিল।
তাস-এর খবর অনুযায়ী, ২০২২ সালের ৪ মার্চ মন্টিনেগ্রো রাশিয়ার এক কূটনৈতিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। তার প্রতিবাদে ২৪ মার্চ রাশিয়ায় অবস্থিত মন্টিনেগ্রো’র দূতাবাসের একজন কূটনৈতিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে রাশিয়া।
১৪ মার্চ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাশিয়ান দূতাবাসের তিনজনকে বহিষ্কার করে স্লোভাকিয়া। তার প্রতিশোধ হিসেবে ২৮ মার্চ স্লোভাকিয়ার তিন দূতাবাসকর্মীকে পার্সোনা নন গ্রাটা ঘোষণা করে রাশিয়া।
ইউক্রেনের সাথে সংহতি প্রকাশের অংশ হিসেবে ১৮ মার্চ লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, ও এস্তোনিয়া ১০ জন রাশিয়ান কূটনৈতিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। তার পরদিনই এ দেশগুলোর ১০ জন কূটনীতিবিদকে বহিষ্কারের কথা জানায় রাশিয়া।
একইভাবে আয়ারল্যান্ডে রাশিয়ান কূটনৈতিকদের বহিষ্কারের জবাবে রাশিয়া গত ৭ এপ্রিল কয়েকজন আইরিশ কূটনৈতিককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।
গত ৫ এপ্রিল তাস এখন পর্যন্ত যেসব দেশ থেকে বড় সংখ্যায় রাশিয়ান কূটনৈতিকদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এ দেশগুলো হলো পোল্যান্ড (৪৫), জার্মানি (৪০), স্লোভাকিয়া (৩৫), ফ্রান্স (৩৫), ও ইতালি (৩০)।
এছাড়া রাশিয়ান দূতাবাসের কর্মীদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার তালিকায় আছে বেলজিয়াম (২১), নেদারল্যান্ড (১৭), লাটভিয়া (১৬), ডেনমার্ক (১৫), এস্তোনিয়া (১৪), বুলগেরিয়া (১৩) ইত্যাদি।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বুধবার (২০ এপ্রিল) রাশিয়া তিনটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ থেকে নতুন করে আরও ৩১ জন কূটনৈতিককে বহিষ্কার করতে যাচ্ছে।
এগুলোর মধ্যে নেদারল্যান্ডের ১৫ জন কূটনৈতিককে পার্সোনা নন গ্রাটা ঘোষণা করে তাদেরকে মস্কো ছাড়ার জন্য দুই সপ্তাহের সময় দিয়েছে রাশিয়া।
একই সময়ের মধ্যে বেলজিয়াম দূতাবাসের ২১ কর্মীকে রাশিয়া ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছে ক্রেমলিন।
অন্যদিকে অস্ট্রিয়ার চার জন কূটনৈতিককে রবিবার নাগাদ রাশিয়া ছাড়ার আদেশ করেছে দেশটি।
২০২১, চেক প্রজাতন্ত্র
২০২১ সালে চেক প্রজাতন্ত্র রাজধানী প্রাগে অবস্থিত রাশিয়ান দূতাবাসের প্রায় ৬০ জন কর্মীকে বহিষ্কার করে।
২০১৪ সালে দেশটিতে একটি গোলাবারুদের ডিপোতে দুইটি বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। এর জন্য চেক রিপাবলিক রাশিয়ার স্পাইদের দায়ী করে।
চেক প্রজাতন্ত্রের গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী রাশিয়ার সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখা জিআরইউ ওই বিস্ফোরণের পেছনে দায়ী ছিল। ওই বিস্ফোরণে দুই জন মারা যায়।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে চেক প্রজাতন্ত্র রাশিয়ার ১৮ জন কর্মীকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত করে বহিষ্কার করে। রাশিয়া তার জবাবে মস্কোতে চেক প্রজাতন্ত্রের দূতাবাসের ২০ জনকে বহিষ্কার করে।
পলিটিকো’র খবর অনুযায়ী, এরপর ওই ২০ জনকে দূতাবাসে ফেরত পাঠানোর জন্য চেক প্রজাতন্ত্র রাশিয়ার কাছে দাবি জানায়। রাশিয়া সেই দাবি না মানলে চেক প্রজাতন্ত্র রাশিয়ান দূতাবাসের আরও ৬০ জন কর্মীকে বহিষ্কার করে।
২০২০, পাক-ভারত বহিষ্কার পর্ব
বছরের জুন মাসে ভারত নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাসের অর্ধেক কর্মীকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেয়। ভারতের দাবি ছিল দূতাবাসের কর্মীরা ভারতের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন।
ভারতের এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তান ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীসংখ্যা অর্ধেক করার আদেশ দেয় ভারতকে।
২০১৮, সলসবেরি ঘটনা-পরবর্তী বহিষ্কার
২০১৮ সালের ৪ মার্চ ইংল্যান্ডের সলসবেরিতে রাশিয়ার সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও ব্রিটিশ গোয়েন্দাবাহিনীর ডাবল এজেন্ট সার্গেই স্ক্রিপালর ও তার মেয়ে ইউলিয়া স্ক্রিপ্যালকে নভিচক নার্ভ এজেন্ট দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
এ ঘটনার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে ব্রিটিশ সরকার। রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেয় ব্রিটেন। এ ব্যবস্থার অন্যতম ছিল রাশিয়ান কূটনৈতিকদের বহিষ্কার করা।
আল জাজিরা’র প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তীসময়ে ঘটনার জেরে উভয়পক্ষের প্রায় ৩৪২ জন কূটনৈতিককে বহিষ্কার করে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো বিশাল সংখ্যক রাশিয়ান কূটনৈতিককে বহিষ্কার করে। প্রতিবাদে রাশিয়া এসব দেশগুলোর ১৮৯ জন কূটনৈতিককে বহিষ্কার করে।
নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘে রাশিয়ান মিশন থেকে ৬০ কূটনীতিবিদ ও ১৩ গোয়েন্দা অফিসারকে বহিষ্কার করে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ৬০ জনকে বহিষ্কার করে।
ব্রিটেন কূটনৈতিক পরিচয়ে গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য ২৩ জন রাশিয়ানকে বহিষ্কার করে। তার উত্তরে রাশিয়া ৭৩ জন ব্রিটিশকে বহিষ্কার করে।
একই প্রক্রিয়ায় ইইউ’র দেশগুলো ৩৫ জন, ইউক্রেন ১৩ জন, অন্যান্য দেশ ১৫ জন, ও ন্যাটো ৭ জন রাশিয়ান কূটনীতিবিদকে বহিষ্কার করে। তার জবাবে রাশিয়া ৩৩ জন ইইউ কূটনৈতিক, ১৩ জন ইউক্রেনীয় কূটনৈতিক, ১০ জন বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিককে বহিষ্কার করে।
২০১৬, ওবামা প্রশাসনের রাশিয়ান কূটনৈতিক বহিষ্কার
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওবামা প্রশাসন রাশিয়ার ৩৫ কূটনীতিবিদকে বহিষ্কার করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা অনুযায়ী ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি (ডিএনসি), হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচন ক্যাম্পেইন, ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনে রাশিয়া সাইবার হামলার নির্দেশ দিয়েছিল।
সেই হামলার জবাবেই কূটনৈতিকদের বহিষ্কার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
২০০৮, বেলারুশের মার্কিন কূটনৈতিক বহিষ্কার
২০০৮ সালের মে মাসে বেলারুশ মিনস্কে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের ১০ জন কূটনৈতিককে বহিষ্কার করে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেলারুশের ওপর নিষেধাজ্ঞা কঠিন করার জবাবে এ বহিষ্কার কার্যক্রম চালিয়েছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ বেলারুশ।
এ বহিষ্কারের পর মিনস্কে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস চারজন কর্মীকে নিয়ে কাজ চালিয়ে যায়।
২০০১, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া টিট-ফর-ট্যাট
২০০১ সালে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ছয়জন কূটনৈতিক ও ৪৫ জন অন্যান্য কর্মীকে দেশ ছাড়ার আদেশ দেয়।
তার প্রতিক্রিয়ায় ৫১ জন মার্কিন কূটনৈতিককে বহিষ্কার করে রাশিয়া।
ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ সালে প্রকাশিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেইট-এর ফরেইন অ্যাফেয়ার্স নোট থেকে জানা যায়, ১৯৭০ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কূটনৈতিক ও অন্যান্য কর্মীদের বহিষ্কার করা হয়েছিল।
এগুলোর মধ্যে আফ্রিকা, পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, ইউরোপ, উত্তর আমেরিক, মধ্যপ্রাচ্য, ও লাতিন আমেরিকা প্রভৃতি অঞ্চলের দেশ ছিল।
১৯৮৬, রিগ্যানের সোভিয়েত কূটনৈতিক বহিষ্কার
১৯৮৬ সালের অক্টোবর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ৮০ জন সোভিয়েত কূটনৈতিককে বহিষ্কার করেন। তাদেরকে ২৫ ও ৫৫ জন করে দুইবারে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রথমে ২৫ জন সোভিয়েত কূটনৈতিককেই বহিষ্কার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তার জবাবে মস্কো থেকে পাঁচজন মার্কিন কূটনৈতিককে বহিষ্কার করে সোভিয়েত ইউনিয়ন।
তার প্রতিশোধ নিতে দ্বিতীয় ধাপে আরও ৫৫ জন সোভিয়েত কূটনৈতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন রিগ্যান। মস্কো ও লেনিনগ্রাদে থাকা মার্কিন দূতাবাসগুলোতে কর্মীর সংখ্যা’র সাথে ওয়াশিংটন ও সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত সোভিয়েত কর্মীদের সংখ্যার সমতা আনতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৮৫, ব্রিটেনের রাশিয়ান কূটনৈতিক বহিষ্কার
১৯৮৫ সালে লন্ডন থেকে গণহারে সোভিয়েত গোয়েন্দাদের বহিষ্কার করা হয়। স্নায়ুযুদ্ধ তখন তুঙ্গে, ব্রিটিশ সরকার ২৫ জন সোভিয়েত কূটনৈতিককে লন্ডন ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়।
এই বহিষ্কারের ঘটনার দুই দিন পর টিট-ফর-ট্যাট কৌশলের অংশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ২৫ জন ব্রিটিশ দূতাবাস কর্মী, সাংবাদিক, ও ব্যাবসায়ীকে বহিষ্কার করে।
১৯৭১, আবারও ব্রিটেন
১৯৭১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ব্রিটেন গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে ৯০ জন সোভিয়েত কূটনৈতিককে বহিষ্কার করে। এছাড়া ব্রিটেনের বাইরে অস্থায়ীভাবে থাকা আরও ১৫ জন কূটনৈতিককে ব্রিটেনে ফেরার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
এই ঘটনা অপারেশন ফুট নামে পরিচিতি পায়। দ্য গার্ডিয়ান-এর তথ্য অনুযায়ী ওই সময় ব্রিটেনে প্রায় ৫৫০ জন কূটনৈতিক ছিলেন। তাদের মধ্যে ২০ শতাংশকেই নিষিদ্ধ করে ব্রিটেন।
ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৫-এর প্রতিবেদন এবং লন্ডনে অবস্থিত সোভিয়েত দূতাবাসের একজন কেজিবি অফিসার ওলেগ লিয়ালিনের ডিফেকশন ও সোভিয়েতদের ব্রিটেনে সাবোটেজের পরিকল্পনার কথা জানানোর পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার।
তবে অপারেশন ফুটের মাধ্যমে গণহারে কূটনৈতিকের ছদ্মবেশে স্পাইদের বহিষ্কার করা হলেও তা যে কাউন্টার-এসপিওনাজ হিসেবে পুরোপুরি সফল, সেটিও বলা যাবে না। দ্য পলিটিকো’র তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭০-এর দশকে কেজিবি’র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্রিটিশ এজেন্ট ছিল জিওফ্রে প্রাইম।
১৯৭১-এ অপারেশন ফুট-এর জালে তিনি ধরা পড়েননি। ব্রিটেনের সিগন্যালস ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি জিসিএইচকিউ-তে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সবার নজর এড়িয়ে কাজ করেন এ সোভিয়েত স্পাই।
কেবল কূটনৈতিকেরাই নয়
কূটনৈতিকদের বাইরেও অনেক সময় অন্যরা কোনো দেশ থেকে বহিষ্কার ও অবাঞ্ছিত হয়েছেন। ১৯৯৭ সালে ‘সেভেন ইয়ার্স ইন টিবেট’ সিনেমায় অভিনয় করার জন্য চীনে হলিউড তারকা ব্র্যাড পিট-কে পার্সোনা নন গ্রাটা ঘোষণা করা হয়। তবে ২০১৪ সালে তার ওপর থেকে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
১৯৯৯ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়া জার্মান সাহিত্যিক গুনটার গ্রাসকে ২০১২ সালে পার্সোনা নন গ্রাটা ঘোষণা করেছিল ইসরায়েল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি ইসরায়েলকে বিশ্ব শান্তি হন্তারক হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার জীবনের একটি পর্যায়ে রিয়াল-এস্টেট টাইকুন ও রিয়ালিটি টিভি তারকা ছিলেন। সেসময় পানামা সিটি’র মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিল তাকে পার্সোনা নন গ্রাটা ঘোষণা করে। ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘কোনো কিছুর বিনিময় ছাড়া পানামা খাল ছেড়ে দিয়ে’ ‘বুদ্ধু’র মতো কাজ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট