মহানবী (সা.)–কে অবমাননার প্রতিবাদে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ
![]()
নিউজ ডেস্ক
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নূপুর শর্মাসহ শীর্ষস্থানীয় দুই নেতার অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে গতকাল শুক্রবার বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে। এসব বিক্ষোভে কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। প্রায় সব জায়গাতেই বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। তবে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, অনুমতি না নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নয়াদিল্লি ছাড়া বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকেও। লক্ষ্ণৌ, সাহারানপুর, প্রয়াগরাজ (সাবেক এলাহাবাদ), দেওবন্দ, ফিরোজাবাদ, মোরাদাবাদসহ বেশ কিছু স্থানে আজ জুমার নামাজের পর বিক্ষোভে শামিল হন মানুষজন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, মহানবী (সা.)–এর অবমাননাকারীদের গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।
সাহারানপুরের নবাবগঞ্জে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিরাট মিছিল বের হয়। একপর্যায়ে পুলিশ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ হলেও তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আজ প্রয়াগরাজে বিক্ষোভ চলাকালে কিছু ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পার্ক সার্কাস ময়দানে কয়েক শ মানুষ বিক্ষোভে শামিল হন। তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী হায়দরাবাদেও বিক্ষোভ হয়। পাঞ্জাবের লুধিয়ানা, গুজরাটের আহমেদাবাদ, মহারাষ্ট্রের নাবি মুম্বাই ছাড়া কাশ্মীরের শ্রীনগরের বিভিন্ন এলাকা থেকেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে ঝাড়খন্ডের রাজধানী রাঁচির এক মন্দিরের সামনে উত্তেজিত বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে গিয়ে বেশ কিছু পুলিশ সদস্য আহত হন। ওই এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।
আজ সব এলাকাতেই জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ শুরু হয়। দিল্লির জামে মসজিদে নামাজের পর কয়েক শ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। মসজিদের সিঁড়িতে জড়ো হয়ে তাঁরা মহানবী (সা.)–এর বিরুদ্ধে কুমন্তব্যকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। কারও কারও হাতে নূপুর শর্মাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল। প্রায় আধা ঘণ্টা পর বিক্ষোভকারীরা মসজিদ চত্বর ছেড়ে মূল সড়কে চলে যান। এ সময় পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
দিল্লির জামে মসজিদের শাহি ইমাম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, জুমার নামাজের পর কাউকে বিক্ষোভ দেখানোর আহ্বান জানানো হয়নি। পুলিশের ডেপুটি কমিশনার শ্বেতা চৌহান সাংবাদিকদের বলেন, প্রতি শুক্রবারের মতো দেড় হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল জুমার নামাজে। নামাজ শেষ হলে প্রায় ৩০০ মানুষ জামে মসজিদের প্রশস্ত সিঁড়িতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশি হস্তক্ষেপে তাঁরা চলে যান। বিনা অনুমতিতে বিক্ষোভ দেখানোর অপরাধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
মহানবী (সা.)–কে নিয়ে কুমন্তব্যের জন্য শাসক বিজেপির দুই নেতা নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নবীনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, নূপুর সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন।
দিল্লি পুলিশ গত বৃহস্পতিবার ওই দুজনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে। ঘৃণা ভাষণ ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণার অভিযোগে এফআইআর করা হয়েছে হিন্দু–মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে। যাঁদের মধ্যে সংসদ সদস্য আসাউদ্দিন ওয়েইসি ও সাংবাদিক সাবা নাকভি রয়েছেন। কিন্তু মূল অভিযুক্ত নূপুর ও নবীনকে পুলিশ আজও গ্রেপ্তার করেনি। বিক্ষোভকারীদের মূল দাবি ছিল, এই দুজনকে গ্রেপ্তার করা।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরেও শুক্রবার বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে পার্ক সার্কাসের সাতমাথার মোড়ে। কলকাতায় শুধু পার্ক সার্কাসই নয়, সর্বভারতীয় মুসলিম সমাজের একটি সংগঠন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব ইন্ডিয়ার (এসডিপিআই) নেতৃত্বে অন্তত আরও দুই জায়গায় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। এর একটি হলো পশ্চিম কলকাতার খিদিরপুর ও অপরটি মধ্য কলকাতার রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে। কলকাতার তিন জায়গা থেকেই কোনো সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।
তবে হাওড়া জেলার ধুলাগড়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়েন, গাড়ির টায়ারে আগুন দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে লাঠিপেটা করতে হয়।
সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয় পার্ক সার্কাসে, যেখানে প্রতিবাদকারীদের তরফে অনেকেই বক্তব্য দেন। বক্তারা সবাই ভারতবর্ষে ক্রমবর্ধমান মুসলমান বিদ্বেষের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, মহানবী (সা.)-কে কটূক্তি ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির ধারাবাহিক উসকানিমূলক আচরণের জন্যই হয়েছে।
একজন বক্তা বলেন, যেভাবে ভারতে উসকানিমূলক প্রচার ও ভাষণ বাড়ছে, তাতে মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হচ্ছে। এই আতঙ্ক থেকে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টি হলে ক্ষমতাসীন দলকে দায়িত্ব নিতে হবে।
এই সমাবেশে অন্তত ২০ হাজার মানুষ এসেছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। সমাবেশের ফলে মধ্য কলকাতাজুড়ে ব্যাপক যানজট দেখা দেয়।
পার্ক সার্কাসের সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, মুসলমান সমাজের পক্ষে আজকে ভারতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান-বিক্ষোভ দেখানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহানবী (সা.)-কে কটাক্ষের ঘটনায় উত্তর প্রদেশের কানপুরে সম্প্রতি কিছু মুসলমান বিক্ষোভ দেখালে অন্তত এক হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এ ছাড়া সমাবেশে একটি বিষয় নিয়ে অনেক বক্তাই বলেন। সেটি হলো, ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি। ‘ভারতের সেক্যুলার দলগুলো আরও বড় বিপদ ডেকে আনছে। কারণ, মুসলমান সমাজ বিপদে পড়লে তাঁরা মুখ খুলছেন না। তাঁদের ভয়, হিন্দু ভোট তাঁদের বিরুদ্ধে চলে যাবে। কিন্তু এর ফলে পরবর্তী সময়ে হিন্দু ও মুসলমান দুই ভোটই তাঁরা হারাবেন’—বলেন মোহাম্মদ আশরাফ নামের এক বক্তা।