মাদকের বিষয়ে মিয়ানমার অনেক কিছু বলে কিন্তু কিছু করে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী - Southeast Asia Journal

মাদকের বিষয়ে মিয়ানমার অনেক কিছু বলে কিন্তু কিছু করে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে মাদক আসা বন্ধ করা যাচ্ছে না উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সে দেশের কর্তৃপক্ষকে মাদকের বিষয়টি অবহিত করা হলে তারা অনেক কিছুই বলে কিন্তু কিছু করে না। তারা সব বুঝলেও কোনো পদক্ষেপ নেয় না।

আজ রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

বাংলাদেশে কোনো মাদক উৎপাদিত হয় না দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও ভৌগোলিকভাবে বিশ্বের প্রধান দুটি মাদক উৎপাদনকারী বলয়ে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ মাদক চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারতকে অনুরোধ করার পর তাদের সীমান্ত এলাকা থেকে ফেনসিডিলের কারখানা সরিয়ে নিয়েছে। তবে মিয়ানমার থেকে আসা মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে মাদক আসা রোধ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে। সে দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে। এমনকি সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা সবই বোঝে কিন্তু কিছু করে না।’

বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দুর্গম সীমান্ত দিয়ে মাদক আসছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, সীমান্ত দিয়ে মাদক আসা বন্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) শক্তিশালী করা হচ্ছে। এমনও দুর্গম এলাকা রয়েছে যেখানে বিজিবির একটি বিওপি থেকে অন্য বিওপিতে যেতে সাত দিন লাগত। এখনো এসব এলাকার এক বিওপি থেকে অন্য বিওপিতে যেতে এক দিন লাগে। এ জন্য হেলিকপ্টার দিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। কোন কোন সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ হচ্ছে, তা চিহ্নিত করতে সেন্সর বসানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

দেশে ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ মিলিয়ন (৭৫ লাখ থেকে ৮০ লাখ) মাদকাসক্ত ব্যক্তি রয়েছেন জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, মোট মাদকাসক্তের মধ্যে ৪৮ শতাংশ শিক্ষিত। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ আবার যৌন অপরাধী। জেলখানায় থাকা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই মাদক পাচারকারী কিংবা মাদক ব্যবসায়ী। মাদকসেবীদের ৮০ শতাংশই যুবক।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, অধিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে, জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ ও অন্যান্য বিধিমালা যুগোপযোগী করে সংশোধন করা হয়েছে। অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে। চারটি বিভাগীয় শহরে টেস্টিং ল্যাব নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বলেন, সমাজকে মাদক ও ধূমপানমুক্ত করতে সরকার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন চাহিদা কমাতে হবে। চাহিদা কমাতে না পারলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। যাঁরা দেশের বাইরে থেকে মাদক আনছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মোকাব্বির হোসেন বলেন, যদি পরিবারের কেউ মাদকাসক্ত হন, তবে সেটি লুকিয়ে না রেখে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার পাশাপাশি স্বজন ও বন্ধুদের তাঁর পাশে থাকতে হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের অধিবেশনে ২৬ জুনকে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৮৮ সাল থেকে সারা বিশ্বে এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ বছর এই দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মাদক সেবন রোধ করি, সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি’।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বে) আজিজুল ইসলাম।