রাঙামাটির পাহাড়ি নারীদের তৈরি উটের বেল্ট যাচ্ছে দুবাইয়ে - Southeast Asia Journal

রাঙামাটির পাহাড়ি নারীদের তৈরি উটের বেল্ট যাচ্ছে দুবাইয়ে

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রাঙামাটির পাহাড়ি নারীদের হাতে তৈরি উটের জন্য বিশেষ কাপড়ের বেল্ট যাচ্ছে দুবাইয়ে। গত ১৪ বছর ধরে এই কাপড় তৈরি করছেন কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক পাহাড়ি নারী। ওই ইউনিয়নের জুনুমা ছড়া গ্রামের এসব নারী কৃষিকাজের পাশাপাশি হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত।

২০০৬ সালে এক দুবাই প্রবাসীর অনুরোধে উটের গায়ে ব্যবহৃত বিশেষ এই বেল্ট তৈরির কাজ শুরু করেন ওই গ্রামের মিকা দেওয়ান। তার দেখাদেখি একই কাজ শুরু করেন আরও অনেক নারী। স্থানীয় এক মহাজন কাপড়ের তৈরি এসব বেল্ট সংগ্রহ করে দুবাই প্রবাসী আনু মিয়ার কাছে পাঠান। তিনি উটের গায়ের জন্য এসব কাপড় দুবাইয়ে বিক্রি করে থাকেন।

এসব কাপড় বা বেল্ট তৈরি সময়সাপেক্ষ। একসেট বেল্টের মধ্যে ছোট-বড় সাইজের ১৫টি বেল্ট তৈরি করা হয়। এক মাসে প্রতিজন তিন সেট বেল্ট তৈরি করতে পারেন। এতে (তিন সেট) মজুরি পান তিন হাজার টাকা। কাপড় তৈরিতে মহাজন বাজার থেকে সুতা কিনে দেন। এরপর সুতা থেকে কাপড় তৈরি করা হয়। কাপড় বোনা শেষ হলে এসব বেল্ট সেলাই করে প্রস্তুত করতে হয়।

তবে এসব কাপড় তৈরিতে পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি কম। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পাহাড়ি নারীরা এই পেশায় জড়িত। তবে পরিশ্রম ও মজুরি কম হওয়ায় দিন দিন তারা এ কাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন। অন্য পেশায় চলে যাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

কাপড় তৈরির টিম লিডার মিকা দেওয়ান জানান, ১৪ বছর ধরে কাপড়ের বেল্ট তৈরি করে আসছি। বর্তমানে ৫০ জন নারী কাপড় তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন। তবে কাপড় তৈরি অনেক কষ্টের। আমাদের এ কাজে মাসে গড় আয় হয় তিন হাজার টাকা। ২০০৬ সাল থেকে যে মজুরি পাচ্ছি এখনও একই মজুরি পাচ্ছি। ফলে এই অল্প টাকায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই পেশা বদলের কথা ভাবছি। তিনি সরকারি সহায়তা কিংবা অন্য কোনো উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সহায়তা কামনা করেছেন।

একই পেশার সঙ্গে জড়িত এলি চাকমা, সুমা চাকমা, সোনামিকা চাকমা জানান, তারা হাতে তৈরি এই কাজ শিখেছেন মিকা দেওয়ানের হাত ধরেই। তবে জীবিকার তাগিদে বেল্ট বুনলেও পরিশ্রম অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না তারা। একসেট বেল্ট বুনে পান এক হাজার টাকা। এতে সংসারের ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কাজে সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থা থেকে সহায়তা পেলে তারা আরও ভালো কাজ করতে পারবেন বলে জানান।

বিভিন্ন সময়ে এসব নারীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন জানিয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মহিলা সদস্য ও উটের জন্য ব্যবহৃত কাপড় সরবরাহকারী ঝর্ণা খীসা বলেন, জেলা পরিষদ থেকেও সরকারি সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে এখনও কিছু করে দিতে পারিনি তাদের জন্য। বর্তমানে সুতার দাম বাড়ার কারণে এখন বেল্ট বানানোর ব্যবসা তেমন একটা পোষাচ্ছে না। তারপরও দীর্ঘদিন ধরে এ কাজে জড়িত রয়েছি।

রাঙামাটি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের কর্মকর্তা দীপা তালুকদার বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনামূলক বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। সেই প্রকল্পটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে সেলাইসহ কয়েকটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া যারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হতে চান তারা রাঙামাটির যেকোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন।