বর্ণাঢ্য আয়োজনে পাহাড়ে পালিত হলো পার্বত্য শান্তিচুক্তির রজত জয়ন্তী
![]()
জার্নাল ডেস্ক
পার্বত্য শান্তিচুক্তির রজত জয়ন্তী আজ (২রা ডিসেম্বর)। তৎকালীন সংঘাতময় পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিসহ তিন পার্বত্য জেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, গণসমাবেশ। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং জেলা আওয়ামী লীগ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে গণসমাবেশ ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। তিন জেলা থেকে সাউথইস্ট এশিয়া জার্নাল এর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

খাগড়াছড়ি রিজিয়ন ও জেলা পরিষদ:
সকালে জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদ মর্যাদা) ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর অংশগ্রহণের র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাপলা চত্বর হয়ে টাউন হল প্রাঙ্গণে এসে চেতনা মে’র বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও জীবন ধারা তুলে ধরেন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা। এরপর শুরু হয় আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর বর্ণিল ডিসপ্লে সবাইকে মুগ্ধ করে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, ডিজিএফআইয়ের ডেট কমান্ডার কর্নেল সরদার ইসতিয়াক আহমেদ, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, জেলা পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক, জেলা পরিষদের সদস্য কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, নিলোৎপল খীসা, পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল, শুভ মঙ্গল চাকমা, হিরনজয় ত্রিপুরা, খোকনেশ্বর ত্রিপুরা, জেলা পরিষদের সদস্য শতরূপা চাকমা, জেলা সিভিল সার্জন মো. ছাবের, বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির সময়, জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম, জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ. সাইফুল্লাহ, জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা চিংলামং চৌধুরীসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তারা।
এসময় খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ী জনগোষ্ঠী যদি সে সময়ে তাদের রাগ ক্ষোভ ও আশা আকাঙ্খার কথা সরকারকে প্রকাশ না করত তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম এত অগ্রসর হত না। প্রধানমন্ত্রীর পাহাড়ের মানুষের প্রতি আন্তরিক তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা চিহ্নিত করে পাহাড়ের মানুষের জন্য কাজ করছেন।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা আরও বলেন, পাহাড়ের মানুষ সারা বিশ্বে শান্তি ও সহাবস্থানে কি ভাবে থাকতে হয় তার নজির স্থাপন করেছেন। পাহাড়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা ধরে রাখতে পাহাড়ী বাঙ্গালীর মধ্যে সম্প্রীতি ও এলাকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সকলের সহযোগীতা চান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির রজতজয়ন্তী তথা ২৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিকাল ৩টায় অস্ত্র সমর্পণের স্থান খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে শুরু হয় সম্প্রীতি কনসার্ট। কনসার্টে সংগীত পরিবেশন করেন ফোক সম্রাজ্ঞী খ্যাত মমতাজ বেগম এমপি। এছাড়াও সংগীত পরিবেশন করেন, হৃদয় খান, নাজমা সুইটি, প্রতীম, অরণ্য ব্যান্ড ও হিল স্টার মিউজিক্যাল গ্রুপ। এছাড়াও একই স্থানে সন্ধ্যায় ছিলো অন্যতম আকর্ষণ প্রদীপ প্রজ্জলন, আতশবাজি ও ফানুস উড়ানো।

গুইমারা রিজিয়ন:
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫তম বার্ষিকী (রজত জয়ন্তী) উপলক্ষ্যে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের আওতাধীন গুইমারা রিজিয়ন কর্তৃক নানাবিধ কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় জালিয়াপাড়া বাজার থেকে একটি বর্ণাঢ্য সম্প্রীতি র্যালি বের হয়ে গুইমারা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
র্যালি শেষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামাল মামুন।

এছাড়াও আলোচনা সভায় রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী, মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম, মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, রামগড় পৌর মেয়র রফিকুল আলম কামাল, গুইমারা কলেজের অধ্যক্ষ জয়নুল আবেদীনসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া এই ঐতিহাসিক দিবসে গুইমারা রিজিয়ন মানবিক সহায়তা, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, সম্প্রীতি মেলা, প্রীতি ফুটবল খেলা এবং মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করে। গুইমারা রিজিয়নের আওতাধীন জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও সংস্কৃতি নির্বিশেষে জনসাধারণ আয়োজিত সকল কর্মসূচিতে স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।
আলোচনা শেষে সম্প্রীতি মেলা উদ্বোধন, মানবিক সহায়তা, বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চলমান থাকে। এছাড়াও গরিব ও দুস্থ্য জনসাধারণের মধ্যে ১৫০টি শীতবস্ত্র, ১০টি সোলার প্যানেল, ১০টি সেলাই মেশিন, ১১টি পরিবারকে গৃহনির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তা, ৬টি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা, ২৭ জনকে চিকিৎসার জন্য অনুদান এবং ২০টি দু:স্থ্ পরিবারকে আর্থিক সহায়তাসহ সর্বমোট ২২৮টি পরিবারের মাঝে বিভিন্ন মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

পরিশেষে রিজিয়ন কমান্ডার বলেন, গুইমারা রিজিয়নে নিয়োজিত সেনা, বিজিবি, আনসার, পুলিশসহ সকল নিরাপত্তা বাহিনী শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলসভাবে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এধারা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে গুইমারা রিজিয়ন মাঠে অনুষ্ঠিত হয় প্রীতি ফুটবল ম্যাচের। খেলায় খুবতাং ক্লাব বাল্যাছড়ি, মাটিরাঙ্গা বনাম জালিয়াপাড়া একাদশ ক্লাব, গুইমারা অংশ নেয়। এতে জালিয়াপাড়া একাদশ ক্লাব খুবতাং ক্লাব বাল্যাছড়িকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে।

দীঘিনালা:
দীঘিনালায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর দীঘিনালা জোনের আয়োজনে দিবসটি পালন উপলক্ষে সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।
জোনের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর মুহিত ইবনে জামান খান পিএসসির নেতৃত্বে কবাখালী বাজার থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে বাস টার্মিনাল ঘুরে এসে জোন সদরে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজি মোহাম্মদ কাশেম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জসিম, মেরুং ইউপি চেয়ারম্যানের মাহমুদা বেগম লাকি অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া স্থানীয় নেতারাসহ কয়েকশ পাহাড়ি-বাঙালি উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া দিবসটি পালন উপলক্ষে কবাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বাবুছড়া ইউনিয়নের দুর্গম জারুলছড়ি এলাকায় দরিদ্র শীতার্ত ২০০ পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।

রামগড়:
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে রামগড়ে ৪৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উদ্যোগে শান্তি চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়েছে।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) পৌরশহরে বর্ণাঢ্য একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রামগড় পৌরভবন চত্বরে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রামগড় ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ হাফিজুর রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারি, পৌরসভা মেয়র মো. রফিকুল আলম কামাল, জোন স্টাফ অফিসার এডি রাজু আহমেদ, রামগড় থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ।
এছাড়াও শোভাযাত্রায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী অংশগ্রহণ করেন।
পরে জোন সদরে শান্তি চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিজিবি সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে “ আগুনের পরশমনি” চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করা হয়।

মহালছড়ি:
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকালে শান্তির প্রতীক পায়রা ও রঙিন বেলুন উড্ডয়নের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরপরই মহালছড়ি টাউন হল থেকে বের হয় বিশাল এক শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি মহালছড়ি সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় টাউল হলে এসে আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়।
উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহাছড়ি জোনের জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহরিয়ার সাফকাত ভূইঁয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহালছড়ি উপজেলার উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, মহালছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগণ, শিক্ষক-ছাত্র, জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
আলোচনা সভায় বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তির ফলে ব্যপকহারে যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং সেই উন্নয়নের ধারা একই হারে অব্যাহত রয়েছে সে বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন। বক্তারা আরো আলোকপাত করেন, পাহাড়ের মানুষ এখন অনেক শান্তিতে ঘুমাতে পারছে, উন্নত রাস্তা ঘাট নির্মিত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সজলভ্য হয়েছে এবং সহজেই ব্যবসা বাণিজ্য করে তারা আর্থিক ও মানসিক উভয় শান্তি লাভ করছে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের এ ধারাকে অব্যহত রাখতে তারা সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান ও ঔষুধ বিতরণ করেন মহালছড়ি জোনের একটি চিকিৎসা টিম। এছাড়া, শীতার্ত পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে শিক্ষা ও খেলাধূলা উপকরণ বিতরণ এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

রাঙামাটি রিজিয়ন:
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকালে বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটি রিজিয়নের আয়োজনে সর্বসাধারণের অংশগ্রহনে একটি বর্ণাঢ্য শান্তি র্যালী রাঙামাটি সরকারী কলেজ প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে রাঙামাটি রিজিয়নের মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
রাঙামাটি কলেজ মাঠে শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমতাজ উদ্দিন ও রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী।
এ সময় রাঙামাটি বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল তরিকুল ইসলাম, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, রাঙামাটি সদর জোন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আশিকুর রহমান, রাঙামাটি পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, রাঙামাটি সিভিল সার্জন ডাঃ বিপাশ খীসা।

বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণ, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকসহ গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ র্যালীতে অংশগ্রহণ করেন।
পরে রাঙামাটি রিজিয়নের প্রান্তিক হল মাঠে ১৭ জন দুঃস্থ ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান, ঢেউটিন, এতিমখানার এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ অনুদান, নারীদের সেলাই মেশিন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান প্রদান করেন রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমতাজ উদ্দিন।

এসময় কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমতাজ উদ্দিন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি বৈষম্যহীন প্রতিষ্ঠান এবং আমরা আশা করি সেনাবাহিনীকে অনুকরনীয় হিসাবে গ্রহণ করে ধর্ম, বর্ণ, জাতি-উপজাতি এবং লিঙ্গ ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। এছাড়াও যে কোন প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর এরূপ সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

কাপ্তাই:
“ঐক্যের মাঝে শান্তি পাই, পাহাড়ি-বাঙালি ভাই ভাই” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় কাপ্তাই সেনা জোনের আয়োজনে শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এক বর্ণাঢ্য র্র্যালি, মোটর শোভাযাত্রা কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয় হতে শুরু করে শহীদ আফজাল হলে গিয়ে শেষ হয়।
কাপ্তাই সেনা জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ নূর উল্লাহ জুয়েল শান্তির পায়রা ও রঙিন পতাকা উড়িয়ে শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। পরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি কাপ্তাই জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল নূর উল্লাহ জুয়েল বলেন, কাপ্তাই জোন এলাকায় কেউ অশান্তি সৃষ্টি করলে তাকে এক বিন্দুও ছাড় দেয়া হবেনা। পাহাড়ে বর্তমান সরকার উন্নয়ন করে চলছে। কেউ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা সর্বদা শান্তি-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত রয়েছি । আসুন আমরা সকলে বিভেদ ভুলে গিয়ে পার্বত্য এলাকায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী সবসময় শান্তি, উন্নয়ন ও সর্বদা নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।
সভায় বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরী, ৪নং ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ ও ভাইজ্যাতলী হেডম্যান থোয়াই অং মারমা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর শেখ নাজমুল আরেফিন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী, পুলিশ পরিদর্শক শাহিনুর রহমান, স্কুল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা,পাহাড়ি-বাঙালিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

এদিকে, শান্তি চুক্তির ২৫ বছর পূর্তিতে কাপ্তাই ৪১ বিজিবির ওয়াগ্গা জোনের আয়োজনে বণার্ঢ্য র্যালি, আলোচনা সভা ও ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে ৪১ বিজিবি’র উদ্যোগে শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে উপজেলা সদর থেকে একটি র্যালী বের করা হয়। র্যালীটি কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়ক প্রদক্ষিণ করে ওয়াগ্গাছড়া জুম রেস্তোরায় এসে শেষ হয়। র্যালীতে বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেয়। পরে ওয়াগ্গা প্যানোরোমা জুম রেস্তোঁরার সামনে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বক্তব্য রাখেন কাপ্তাই ৪১ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল সাব্বির আহমেদ। কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মফিজুল হক, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান, কাপ্তাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জসীম উদ্দীন, চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল বাহার চৌধুরী, কাপ্তাই ৮ আনসার ব্যাটালিয়নের সহকারি পরিচালক আল আমিন সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল, তার ফলে আজ পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইছে এবং পার্বত্যাঞ্চলের অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নতি ঘটেছে।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে ৪১ বিজিবির উদ্যোগে ওয়াগ্গা রামছড়ি পাড়ায় ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়। ৪১ বিজিবির মেডিকেল অফিসার মেজর কাজী সামিউর রহমান এই মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করেন। এ সময় ৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হয়।

এছাড়া, রাঙামাটি কাপ্তাইয়ের ১০ আরই ব্যাটালিয়নের আয়োজনে শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপযাপন করা হয়েছে। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় লেকশোর জীবতলী আর্মি ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ মাঠ হতে পিকনিক স্পট পযন্ত এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়।
ঐক্যের মাঝে শান্তি পাই পাহাড়ি বাঙালি ভাই,ভাই” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বার্ণঢ্য র্র্যালি উদ্বোধন করেন ১০ আরই ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল রোমান জামান। র্যালিতে স্কুল, কলেজ, হেডম্যান, কার্বারি, শিক্ষক, মেম্বারসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।পরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ১০ আরই ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল রোমান জামান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি করেছে।এ শান্তিচুক্তি করার ফলে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইছে। পাহাড়ে উন্নতি অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সকলে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।
এসময় ব্যাটালিয়নের অফিসার, জেসিও ও অন্যান্য পদবীর সৈনিকসহ নানা পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। শেষে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
লংগদু:
রাঙামাটির লংগদু উপজেলার রাজনগর (৩৭ বিজিবি) জোনের উদ্যোগে শান্তি র্যালী, শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাসহ ঔষধ ও কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকালে গুলশাখালী বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সামনে থেকে শান্তি র্যালী বের হয়ে চৌমুহনী বাজার প্রদক্ষিণ করে রাজনগর জোনের খেলার মাঠে এসে শেষ হয়।
এ সময় রাজনগর (৩৭ বিজিবি) জোন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল শাহ মোঃ শাকিল আলম শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন। এরপরই তিনি জোনের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাসহ ২ শতাধিক দরিদ্রদের মাঝে শীত কম্বল বিতরণে অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় বিজিবি জোনের ক্যাপ্টেন মোঃ রসুল আমিন, এডি মোঃ হাফিজুর রহমান, বর্ডার গার্ড মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক, ভাসান্যাদম ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী, গুলশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, এলাকার পাহাড়ী বাঙালি হেডম্যান-কার্বারী, ইউপি মেম্বার, গণ্যমান্য ব্যক্তিগণসহ শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন।

বাঘাইছড়ি:
ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে বিজিবি মারিশ্যা জোন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন কমিটি।
ঐতিহাসিক এই দিনটি উপলক্ষে বিজিবি মারিশ্যা জোন ও পাহাড়ি সুশীল সমাজ আলাদা ভাবে উদযাপন করে। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকালে বিজিবি শোভা যাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিজিবি মারিশ্যা জোন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল শরিফুল্লাহ আবেদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাঘাইছড়ি পৌরসভার মেয়র জমির হোসেন, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাগরিকা চাকমাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ে উন্নয়নের সুবাতাস বইছে, পাহাড়ের মানুষ উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে।
পরে বিজিবি’র জনকল্যাণমুখী কাজের নিয়মিত অংশ হিসেবে অসহায় ও দুঃস্থ পরিবারের মাঝে কম্বল ও শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়।

নানিয়ারচর:
ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় শান্তি র্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকালে নানিয়ারচর জোনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের মাঠ হতে নানিয়ারচর জোন উপ-অধিনায়ক মেজর মোঃ জাওয়াদ বিন ফারুক এর সভাপতিত্বে একটি র্যালী বের হয়ে নানিয়ারচর বাজারে প্রদক্ষিণ করা হয়।
পরে নানিয়ারচর মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় দুস্থ লোকজনের মাঝে কম্বল বিতরণ এবং ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন করে সেনাবাহিনী।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফজলুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান নুরজামাল হাওলাদার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আসমা মল্লিক, নানিয়ারচর থানা ওসি সুজন হালদারসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।

জুরাছড়ি:
রাঙামাটির জুরাছড়িতে শান্তি চুক্তির ২৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) জুরাছড়ি সেনা জোনের উদ্যোগে উপজেলা মাঠে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় জোন উপ-অধিনায়ক মেজর মোঃ এহতে শামুল হকের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিতেন্দ্র কুমার নাথ, থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ শফিউল আজম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আল্পনা চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
রির্সোস সেন্টারের ইন্সট্রাক্টটর মোঃ মরশেদুল আলমের ধারা চঞ্চলনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, কুসুমছড়ি মৌজার হেডম্যান মায়া নন্দ দেওয়ান, বনযোগীছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ বিকাশ চাকমা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার অনন্যা চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা, বাজার সমিতির সভাপতি তপন কান্তি দে।
এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ের উন্নয়নের সু-বাতাস বয়ে আনছে। বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর সম্মত না হলে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদন সম্ভব ছিলনা। সেনাবাহিনীর অগ্রনী ভূমিকা রাখলেই পার্বত্য শান্তি চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব।
আলোচনা সভা শেষে উপজেলা পরিষদ থেকে র্যালি বের করে থানা, যক্ষা বাজার প্রদক্ষিণ করে শিশুপার্কের ফটকে এসে শেষ হয়।
এদিকে, পার্বত্য শান্তি চুক্তি উপলক্ষে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, দরিদ্রদের সহায়তা, শিক্ষা উপকরণ বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে সেনাবাহিনী।

বান্দরবান:
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকাল নয়টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে র্যালি উদ্বোধন করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জিয়াউল হক। এরপর বান্দরবানে বসবাসরত ম্রো, ত্রিপুরা, মারমা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমীসহ ১১টি বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব পোশাক ও বিভিন্ন সাজে সজ্জিত বর্ণাঢ্য র্যালি শহর প্রদক্ষিণ করে।
পরে টাউন হলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈহ্লা-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
সভায় বক্তারা বলেন, আমরা শান্তি চাই। এলাকায় কোনো অশান্তি চাই না। আমরা এগিয়ে যেতে চাই। ১৯৭১ সালে পার্বত্য এলাকায় শিক্ষার হার ছিল দুই শতাংশ, বর্তমানে ৭১ শতাংশ। শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। রাস্তাঘাট-ব্রিজ-কালভার্টসহ বিভিন্ন অবকাঠামো হয়েছে।
দুর্গম এলাকা সোলার বিদুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে। পার্বত্য চুক্তির সিংহভাগ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বান্দরবান ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার মো. জিয়াউল হক, সদর জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহমুদুল হাসান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মো. শফিকুর রহমান, বান্দরবান ডিডিএলজি লুৎফুর রহমান, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম কাউছার, পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম, পৌর মেয়র মো. ইসলাম বেবী, সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী প্রমুখ।

এছাড়া বান্দরবান রাজার মাঠে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান, গরিব দুস্থদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। বিকেল তিনটায় বান্দরবান জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয়েছে সাউথ এশিয়ান কারাতে প্রতিযোগিতায় পদকপ্রাপ্ত বিজয়ীদের সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

নাইক্ষ্যংছড়ি:
নাইক্ষ্যংছড়িতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা এবং হত দরিদ্র শীতার্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে নাইক্ষংছড়ি ১১ বিজিবি জোনের পক্ষ থেকে এক বিশাল শোভাযাত্রা বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় ব্যাটালিয়নের স্কুল মাঠে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ রেজাউল করিম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা, বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর মোঃ মঞ্জুর আলম, দোছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইমরান ও সোনাইছড়ি ইউপি চেযারম্যান এন্যানিং মার্মা সহ সাংবাদিক, কারবারি, শিক্ষক, ছাত্র ছাত্রী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

আলীকদম:
বান্দরবানে আলীকদমে বর্ণাঢ্য আয়োজনে শান্তি চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি পালন করা হয়েছে। “সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখি সমৃদ্ধ বান্দরবান গড়ি” এই স্লোগানে পায়রা উড়িয়ে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়।
আজ শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকালে পাহাড়ে বসবাসরত ১১ টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বয়সের মানুষ নিজস্ব পোশাকে প্লেকার্ড ফেস্টুন নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে শেষ হয়। উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আলীকদম জোনের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল সাব্বির হাসান।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে লামার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান, আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম,আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাবের মোঃ সোয়াইব, জেলা পরিষদের সদস্য দুংড়িমং মার্মা, দুই উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিরিন আক্তার, মিল্কি দাশ, পাঁচ ইউপি চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন, বাথোয়াইচিং মার্মা, জয়নাল আবেদিন, কফিল উদ্দিন, ক্রাতপুং ম্রো প্রমুখ। এছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে আলীকদম সেনা জোনের উদ্যোগে মাঠে অসহায়, দুঃস্থ ও গরীবদের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও শীতবস্ত্র বিতরণ এবং প্রীতি ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে সরকারের সাথে তৎকালীন শান্তি বাহিনীর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তাই এ দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে প্রতি বছর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শান্তি চুক্তি দিবস পালন করা হয়।

পিসিজেএসএস:
রাঙামাটিতে পার্বত্য শান্তিচুক্তি দিবস উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির আয়োজনে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২ডিসেম্বর) সকালে দিবসটি উপলক্ষ্যে কুমার সুমিত রায় জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার ।
সংগঠনটির জেলার সভাপতি গঙ্গা মানিক চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুদ, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহসভাপতি ভবতোষ দেওয়ান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মণি চাকমাসহ সংগঠনটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া, শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা।
এসময় বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির, অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবিন্দ্রনাথ সরেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গণতান্ত্রিক (ইউপিডিএফ):
বান্দরবানে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বান্দরবানে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৫ বর্ষপূর্তি উদযাপন করেছে ইউপিডিএফ।
শুক্রবার ( ২ ডিসেম্বর) সকালে বান্দরবান উজানী পাড়া পুকুরপাড় থেকে এ উপলক্ষ্যে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয় যা হিলভিউ কনভেনশন হলে গিয়ে শেষ হয়। এতে পার্বত্য এলাকার ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায় বর্ণিল পোশাক, ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে অংশ নেন। পরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- গণতান্ত্রিক বান্দরবান জেলার সভাপতি মং প্রু মারমার সভাপতিতে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওমর চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আ প্রু মং মারমা, বান্দরবান জেলার সাধারণ সম্পাদক উবামং মারমা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সংগঠনের সদস্যবৃন্দসহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরীহ জুম্ম জাতির জন্য কাজ করছে ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-গণতান্ত্রিক। আমরা চাই সংঘাত দিয়ে নয় সংগ্রাম ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হোক।
তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের এই শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে নিরীহ জুম্মজাতি তথা সকল সচেতন সমাজের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। বিশেষ করে সরকারের হস্তক্ষেপ চায় পার্বত্য জুম্মা জাতি। যাতে করে আর কোন রক্ত না ঝরে পাহাড়ের মধ্যে।

জেএসএস (এমএন লারমা)
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্তিতে খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) আয়োজিত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকালে জেলার মহালছড়ি উপজেলার করল্যাছড়িতে জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহালছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি চাকমা।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি বিভূ রঞ্জন চাকমা, প্রণব চাকমা ও সুধাকর ত্রিপুরা প্রমুখ।
সমাবেশে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, পাহাড়ে প্রায় দুই দশকের সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালের এই দিনে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির স্বাক্ষরের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালের ১০ ফ্রেরুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর হাতে গেরিলা নেতা সন্তু লারমার অস্ত্র সমর্পণের মধ্য দিয়ে জনসংহতি সমিতির সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। এর পর কেটে গেছে ২৪ বছর।
চুক্তির অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকি ধারাও বাস্তবায়িত হবার পথেও। তাও পাহাড়ি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাহাড়িদের ৬টি সশস্ত্র সংগঠনের লড়াইয়ে রক্তাক্ত হচ্ছে পাহাড়। এসব সংগঠনের অপতৎপরতায় পাহাড়ের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা সবকিছু ধূলিস্যাতে অস্থির হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, গোলাগুলির মত ঘটনায় আরো শঙ্কিত পাহাড়ের সাধারণ মানুষ।
চুক্তির পর গত ২৪ বছরে ৬টি পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপ নিজেদের মধ্যে সংঘাত ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৮শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী এবং সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়াও এদের বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। সংঘাত সহিংসতা মাঝে-মধ্যে পাহাড়ের সম্প্রতির উপরও আঘাত হানছে। উন্নয়নের গতি বাড়াতে ৬ সশস্ত্র সংগঠন নিষিদ্ধসহ চাঁদাবাজি বন্ধ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি সকল মহলের।