কেএনএফ জঙ্গীদের সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই পাহাড়িদের- পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ - Southeast Asia Journal

কেএনএফ জঙ্গীদের সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই পাহাড়িদের- পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ

বুধবার বান্দরবান অরুণ সারকি টাউন হলে ম্রো, লুসাই, খুমী, খেয়াং ও পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর নেতারা সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অবস্থান জানান। ছবি: সংগৃহীত

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা রাঙামাটি ও বান্দরবানের একাংশে নতুন করে গড়ে ওঠা সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ও ইসলামী জঙ্গী কার্যকলাপের সাথে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকজন জড়িত নেই বলে দাবি করেছেন পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ। সম্প্রতি এই সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে তিনটি পার্বত্য জেলার বম, পাংখোয়া, লুসাই, ম্রো, খুমী ও খিয়াং জাতির সমন্বয়ে এই সশস্ত্র সংগঠন গঠিত হয়েছে এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের বলে দাবি করে কেএনএফ। যা সম্পূর্ণ অসত্য বলে দাবি করেন পাহাড়ি নেতারা।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বান্দরবান জেলা সদরে অরুন সারকী টাউন হলে বান্দরবানের শান্তি প্রিয় জনসাধারণের ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলায় বসবাসরত লুসাই, খুমী, খিয়াং, ম্রো ও পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা এমন দাবি করেন।

জানা যায়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেএনএফ এর সাথে পাহাড়ের ম্রো, লুসাই, বম, খুমি, খিয়াং সহ ছয়টি জনগোষ্ঠী জড়িত রয়েছে এমন সংবাদ প্রচার হবার প্রেক্ষিতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন পাহাড়ি নেতারা।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, লুসাই জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি শিক্ষাবিদ প্রফেসর থানজামা লুসাই, ম্রো জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি থানচি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো, খিয়াং জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ম্রাচা খিয়াং, খুমি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি চিংইয়ং খুমি, জেলা পরিষদের সদস্য চিং ইয়ং ম্রো ও এনজিও কর্মী লেলুং খুমি।

এসময় বক্তারা বলেন, ‌‘বান্দরবানে নব গঠিত সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট আর্মির (কেএনএফ) সঙ্গে লুসাই, খুমী, খিয়াং, ম্রো ও পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার যে দাবি তুলেছেন তা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। কেএনএফের এই দাবি আদৌ সত্য নয়। বান্দরবান জেলাসহ তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত লুসাই, খুমী, খিয়াং, ম্রো ও পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর লোকজন অত্যন্ত শান্তি প্রিয় ও নিরীহ প্রকৃতির।’

বক্তার আরো বলেন, ‌‌‌‘আমাদের জনগোষ্ঠীর লোকজন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা ও দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল। আমাদের জনগোষ্ঠীর লোকজন কেএনএফ ও ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীর মত অস্ত্র ও সন্ত্রাসবাদ কার্যক্রমের সাথে জড়িত নেই এবং থাকতে পারেনা।’

সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে নেতারা বলেন পাংখোয়া, লুসাই, ম্রো, খুমী ও খিয়াং কেএনএফের সশস্ত্র আন্দোলনের সাথে এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয় এবং কেএনএফ এইসব জনগোষ্ঠীর নাম ব্যবহার করে কখনো কুকিচিন রাজ্য, কখনো বা খ্রিষ্টান রাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিরোধীতা করে এবং বান্দরবান জেলার সাধারণ জনগণ ও জনমতকে বিভ্রান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে বান্দরবান জেলার জাতিগত বিভাজন তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

বক্তারা আরও বলেন, কেএনএফের কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই। সমাজের অলস, অসেচতন ও মাদকাসক্তরা এর সঙ্গে জড়িত। কেএনএফ সন্ত্রাসীদের কারণে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার জনসাধারণ, জুমচাষীরা কোনো কাজকর্ম করতে পারছে না। একদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাপ আর অন্যদিকে কেএনএফের চাপ।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এখনো কেওক্রাডং ও তাজিংডং এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছে কেএনএফ। সেখানে তারা অপহরণ, চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কারণে স্থানীয়রা এখন আতঙ্কিত ও অতিষ্ঠ। এসময় বক্তারা তাদের জনগোষ্ঠীর লোকজন কেএনএফ কর্তৃক নির্যাতনের চিত্র বর্ণনা দিয়ে কেএনএফকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং তাদের শাস্তির দাবি জানান।

এছাড়াও, গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ম্রো, লুসাই, খুমী, খিয়াং ও পাংখোয়াসহ পাহাড়ের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর পক্ষে ৮ বিশিষ্ট নাগরিক প্রফেসর থানজামা লুসাই, সিং ইয়াং খুমী, খামলাই মো, সিং ইয়াং ম্রো, ম্রা চা খেয়াং, বাচ্চা খেয়াং, লেলুং খুমী, জলরম থং এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বান্দরবান পার্বত্য জেলার ম্রো, লুসাই, খুমী, খিয়াং ও পাংখোয়া প্রভৃতি পাঁচ জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।

আপনারা নিশ্চয় জানেন, সাম্প্রতিক সময়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন আবির্ভূত হয়েছে। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, তিন পার্বত্য জেলার বম, পাংখো, লুসাই, ম্রো, খুমী ও খিয়াং- এই ছয় জাতির সমন্বয়ে এই সশস্ত্র সংগঠন গঠিত হয়েছে এবং এই ছয় জাতির লোকজনদের সাথে নিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এই সংগঠন আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়েছে।

এই ছয় জাতির মধ্যে আমরা ম্রো, লুসাই, খুমী, খিয়াং ও পাংখোয়া জাতি বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বসবাস করে আসছি। বস্তুত এই সংগঠনের কার্যকলাপের সাথে আমাদের এই পাঁচ জাতির নাম জড়িত করে প্রচার করা হলেও আমরা ম্রো, লুসাই, খুমী, খিয়াং ও পাংখোয়া জাতি এই সশস্ত্র গ্রুপ গঠনের ক্ষেত্রে জড়িত নই এবং এই সংগঠনের কার্যকলাপের সাথেও সম্পৃক্ত নই।

কেএনএফ আমাদের ম্রো, লুসাই, খুমী, খিয়াং ও পাংখোয়া জাতির নাম ব্যবহার করে কখনো ‘কুকি- চিন রাজ্য’, কখনো বা ‘খ্রীষ্টান রাজ্য’ প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিকে বিরোধিতা করে জনমতকে বিভ্রান্ত করে বান্দরবান জেলায় জাতিগত বিভাজন তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

কেএনএফ শুধু সশস্ত্র গ্রুপের কার্যকলাপের সাথে একতরফাভাবে ম্রো, লুসাই, খুমী, খিয়াং ও পাংখোয়া জাতির নাম ব্যবহার করছে না, তাদের আস্তানায় জঙ্গীদের আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে দেশে-বিদেশে এই জাতিসমূহকে সন্ত্রাসী জনগোষ্ঠী হিসেবে প্রতিপন্ন করে তুলেছে। এতে করে কেএনএফ ম্রো, লুসাই, খুমী, খিয়াং ও পাংখোয়া জাতির নিরাপত্তা, জীবন-জীবিকা ও অস্তিত্বকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে আমরা মনে করি।

প্রিয় গণমাধ্যম বন্ধুগণ,
এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ম্রো, লুসাই, খুমী, খিয়াং এবং পাংখোয়া জাতির প্রতিনিধি হিসেবে আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে, কেএনএফ গঠন, সশস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, জাতিগত বিভাজন ও জঙ্গীদেরকে আশ্রয় প্রদান, পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা ইত্যাদি হঠকারী তৎপরতার সাথে আমরা এই পাঁচ জাতির জনগণ কোনক্রমে জড়িত নই।

আমরা এই পাঁচ জাতি কেএনএফের সশস্ত্র তৎপরতা ও কার্যক্রম এবং জঙ্গী প্রশ্রয় প্রদানের নীতিকে সমর্থন করি না। আমাদের এই পাঁচ জাতির নাম জড়িত করে কেএনএফের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।’

উল্লেখ্য, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার মায়ানমার-ভারত সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘ দুমাসের বেশি সময় ধরে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও জঙ্গি তৎপরতা দমনে সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের যৌথ অভিযান চলমান রয়েছে।