উত্তাল পাকিস্তান: পিটিআই মহাসচিব গ্রেফতার, তিন দেশের সতর্কবার্তা
![]()
নিউজ ডেস্ক
গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর নেতা ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয় দেশটির দুর্নীতি দমন সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)-এর পরোয়ানার ভিত্তিতে। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলা হয় এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। গ্রেফতারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করছেন পিটিআইয়ের সমর্থকরা। নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে প্রায় এক হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
ইমরান খানের পর এবার একই জায়গায় থেকে গ্রেফতার হয়েছেন তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)- এর মহাসচিব আসাদ উমর। ইসলামাবাদের আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ডিপার্টমেন্ট (সিটিডি)। খবর জিও নিউজের।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইসলামাবাদের হাইকোর্টের বার রুম থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় সিটিডির কর্মকর্তারা।
পাকিস্তানের সাবেক এই অর্থমন্ত্রীকে কোন মামলায় আটক করা হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। তাকে আটকের সময় সঙ্গে ছিলেন পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কুরেশি, সিনেটর সাইফুল্লাহ সারওয়ার খান এবং গুলাম সারওয়ার খান।
পিটিআইয়ের তিন নেতা বার রুমে ফিরে আসলেও উমরকে সঙ্গে করে নিয়ে যায় পুলিশ। তাকে আটকের ঘটনায় টুইট বার্তায় নিন্দা জানিয়েছেন তেহরিক-ই-ইনসাফের আরেক নেতা শিরিন মাজারি। দলটির নেতাদের গ্রেফতারে জন্য এখন উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়েছে আইএসসির প্রাঙ্গণ।

পাকিস্তান ভ্রমণে তিন দেশের সতর্কবার্তা
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর নেতা ইমরান খানের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী ইসলামাবাদসহ বিভিন্ন প্রদেশে। এই পরিস্থিতিতে নিজ নিজ নাগরিকদের পাকিস্তান ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা।
পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলছে না মার্কিন দূতবাস। ফলে যারা ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছেন তাদের সার্বিক দিক ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের মিডিয়ার ওপর নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।
সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং যুক্তরাজ্য তাদের নাগরিক এবং দূতাবাসের কর্মীদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতামূলক পরামর্শ জারি করেছে।
মার্কিন দূতাবাস বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসলামাবাদে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছে দূতাবাস। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ১০ তারিখের একটি শিডিউল বাতিল করা হয়েছে। পাকিস্তানে থাকা মার্কিন নাগরিকদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি জনসামগম স্থান এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) নিজ দেশের নাগরিকদের পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমাবেশ ও জনসভা এড়িয়ে চলতে একইভাবে পরামর্শ দিয়েছে। সতর্কতার অংশ হিসেবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যগুলোতে চোখ রাখতে বলা হয়েছে।
এদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি জোর দিয়ে বলেছেন, আমরা পাকিস্তানে শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র দেখতে চাই। আমরা চাই দেশটিতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক।

গ্রেফতার বৈধ: আদালত
ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি) পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতারকে ‘বৈধ’ বলে রায় দিয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণের বাইরে থেকে মঙ্গলবার পাকিস্তানি রেঞ্জারদের (আধাসামরিক বাহিনী) হাতে দ্বারা গ্রেফতার হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এ রায় আসে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির প্রধান ইমারান লাহোর থেকে ফেডারেল রাজধানী ইসলামাবাদে এসেছিলেন। রেঞ্জাররা কাঁচের জানালা ভেঙে আইনজীবী এবং ইমরানের নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর করার পরে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের ৭০ বছর বয়সী চেয়ারম্যানের গ্রেফতারের একদিন আগে ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করার অভিযোগ আনে।
আইএইচসি বিভিন্ন কর্মকর্তাকে তলব করে গ্রেফতারের বৈধতা এবং আদালতের ভেতর উপস্থিত কাউকে গ্রেফতার করা বৈধ কি না, তা নিয়ে যুক্তি শুনেছে।‘’
মামলার শুনানি শেষে আইএইচসি’র প্রধান বিচারপতি আমের ফারুক রায় সংরক্ষণ করেন এবং দিনের পরের অংশে রায় ঘোষণা করেন।

সেনা সদর দফতরে ইমরান সমর্থকদের ঝড়
ইমরান খানের গ্রেফতারের পর তার সমর্থকরা রাওয়ালপিন্ডিতে সেনা সদর দফতর এবং লাহোর কর্পস কমান্ডারের বাড়িতে ঢুকে পড়ে।
প্রতিবাদী জনতার মধ্যে কয়েকজনকে কর্পস কমান্ডারদের বাড়ির বাইরে নিরাপত্তা কর্মীদের বলতে শোনা যায়, ‘কাহা থা ইমরান খান কো না চেদনা’ (সতর্ক করেছিলাম, ইমরান খানকে হয়রানি করবেন না)।
গত বছরের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হয়েছেন। তিনি এসব মামলাকে ক্ষমতাসীন জোটের রাজনৈতিক প্রহসন উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বর্তমানে সন্ত্রাস, ধর্ম অবমাননা, খুন, সহিংসতা এবং সহিংসতার পৃষ্ঠপোষক সম্পর্কিত ১৪০টিরও বেশি মামলা রয়েছে ইমরান খানের বিরুদ্ধে।

শুনানি হবে বিশেষ আদালতে
আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা গ্রেফতার পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শুনানি হবে বিশেষ আদালতে। হেফাজতে থাকা অবস্থায় বুধবার (১০ মে) নির্ধারিত শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন ইসলামাবাদের প্রধান কমিশনার।
নিরাপত্তা হুমকির কারণেই খানকে আদালতে আনা হবে না। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিশেষ আদালতে ইমরান খানের শুনানি হতে পারে। কাভারেজের জন্য বিচারকদের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশের অনুমতি থাকবে।
পিটিআই জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ইসলামাবাদের এইচ-১১-এর পুলিশ লাইনস গেস্ট হাউজে উপস্থিত করা হবে।
সেনা মোতায়েনের নির্দেশ
ইমরান খান গ্রেফতার হওয়ায় দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। তার মুক্তি দাবিতে রাজধানী ইসলামাবাদের পাশাপাশি অন্যান্য প্রদেশেও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও পাঞ্জাব সরকার।
প্রশাসন এবং অন্যান্য বাহিনীকে সহায়তায় সেনা নামানোর অনুরোধ জানায় পাঞ্জাব সরকার। এরই অংশ হিসেবে অনুমোদন দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইমরান খানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ইসলামাবাদ ছাড়াও কয়েকটি জায়গায় সহিংস বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। সহিংসতার কারণে প্রায় এক হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
এক বিবৃতিতে পাঞ্জাব পুলিশ জানিয়েছে, প্রদেশে সরকারি সম্পত্তি, পুলিশের বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর, জনগণের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করাসহ বিভিন্ন কারণে তাদের আটক করা হয়।
বিক্ষোভকারীদের হামলায় পুলিশের ১৩০ জনের বেশি পুলিশ কর্মকর্তা গুরুতর আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে বিবৃতিতে। পাঞ্জাব পুলিশের মুখপাত্র বলেন, পুলিশ ও সরকারি সংস্থার ২৫টির বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেছেন পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. ওসমান আনোয়ার।
উল্লেখ্য, আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে মঙ্গলবার লাহোর থেকে ইসলামাবাদের আদালতে এসেছিলেন ইমরান খান। এসময় আদালতের বাইরে থেকে আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা কাঁচের জানালা ভেঙে আইনজীবী এবং ইমরানের নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর করার পরে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের প্রতিবাদ এবং মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে পাকিস্তানে।
ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়েছে দেশটির দুর্নীতি দমন সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)-এর পরোয়ানার ভিত্তিতে। ১ মে সংস্থাটির চেয়ারম্যান লে. জেনারেল (অব.) নাজির আহমেদ বাট এই পরোয়ানা জারি করেন। ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি অর্ডিন্যান্স ১৯৯৯-এর ৯এ ধারায় ইমরানকে কাস্টডিতে নেওয়া হয়। ইসলামাবাদ/রাওয়ালপিন্ডির পুলিশ সদর দফতরে ইমরান খানকে আটকে রাখা হয়েছে।