রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে জাপানের কৌশলগত ভূমিকা কী? - Southeast Asia Journal

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে জাপানের কৌশলগত ভূমিকা কী?

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

ইরিনা হক

গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর অনুসারে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রতি তার দেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও জাপান তাদের সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করেছে। বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় এক মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিকে আশ্রয় দিয়েছে এবং আমরা তার প্রচেষ্টাকে সমর্থন দান অব্যাহত রাখব।

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি তার অফিসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে একটি শীর্ষ বৈঠক শেষ করে প্রেস বিবৃতিতে বলেন, আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করেছি।

ফুমিও কিশিদা বলেন, উভয় দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর করতে এবং আন্তর্জাতিক মহলে সহযোগিতা সম্প্রসারণে কাজ করবে। আজকের বৈঠকে উভয়েই কৌশলগত অংশীদার হিসেবে আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে অবাধ ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা বজায় রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন, যখন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। গত মাসে ঘোষিত অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক পয়েন্টের নতুন পরিকল্পনার ভিত্তিতে দুই দেশ ব্যাপক ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, আমরা জাপান-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির সম্ভাবনার ওপর যৌথ গবেষণায় আরও অগ্রগতি লাভ করতে সম্মত হয়েছি। আমাদের প্রত্যাশা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্রমাগত উপস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি কারণ চরমপন্থা এবং সীমান্ত অতিক্রমকারী অপরাধ আরও খারাপ হতে পারে। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে বাংলাদেশ বছরে ৩.৬ বিলিয়ন ডলার বা মাসে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। এতে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ পড়ছে।

বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের নিষেধাজ্ঞা ও অনুমোদিত প্রস্তাব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বার্মা আইনের খসড়া প্রণয়ন এবং ২০২১ সালের এপ্রিলে আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐক্যমত গৃহীতসহ বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর চাপ সত্ত্বেও—মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকট এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

বাংলাদেশের তিন ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন, রাশিয়া ও ভারতকে রোহিঙ্গা সংকটে সাহায্য করতে বলা হয়েছে। তারা তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হয়েছে, অথবা তাদের নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলোর কারণে অনিচ্ছুক।

রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র জাপানকে নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে হবে। জাপান সরকার সংকট সমাধানে সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিল এবং জাপান বিশ্বাস করে যে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই এই সংকটের সমাধান সম্ভব হবে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইন রাজ্যে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করা মিয়ানমারের জন্য অপরিহার্য। জাপান রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে আরও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানায় এবং এই সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত জাপান সরকার মিয়ানমারকে এই অনুরোধ জানিয়ে যাবে।

২০১৯ সালে জাপান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছিল এবং দুই দেশের মধ্যে সংলাপ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছিল। জাপান রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান চায় তাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান উদ্বেগজনক বলে মনে করে। জাপান বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চলমান আলোচনায় সহায়তা করতে আগ্রহী, যাতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত হয়।

শেখ হাসিনার সরকার সংলাপ ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তির জন্য একটি আউটলুক বা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের আগে ২৪ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে এই অঞ্চলের জন্য নির্দেশিকা ও উদ্দেশ্য প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এটি অবিলম্বে বঙ্গোপসাগর দিয়ে শুরু হতে পারে এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এবং নিরাপত্তার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ দেশ, বাণিজ্য রুট ও ফ্ল্যাশপয়েন্টগুলো কভার করতে পারে।

এই উপযোগী পন্থাটি বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তার ফোকাসকে তীক্ষ্ণ করতে সাহায্য করবে এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে টেনে আনা এড়াতে সাহায্য করবে যেখানে এটির কোনো অংশ নেই।

সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ নথি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য সুরক্ষিত, অর্থনৈতিক সুযোগ অন্বেষণ, সংযোগ উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সমর্থন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ওপর জোর দেয়। ইউএস এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক ফর প্রসপারিটি (আইপিইএফ) চালু করেছে এবং জাপানের বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট উদ্যোগ (বিআইজি-বি) রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাস দমন, সমুদ্র নিরাপত্তা, সামরিক প্রশিক্ষণ এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষার মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ও জাপান একসাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর বিভিন্ন কারণে জাপান ও ভারতের জন্য একটি কৌশলগত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ কোয়াড অংশীদারদের লক্ষ্য চীনা প্রভাব মোকাবিলা করা।

বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর মাতারবাড়ির ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ২০২৩ সালের মার্চে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার ভারত সফরের সময় স্পষ্ট হয়েছিল। বন্দরটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক এজেন্ডার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

আবার একই মাসে অবকাঠামো নির্মাণ খাতে বাংলাদেশকে ১৬৫ বিলিয়ন ইয়েন (১.২ বিলিয়ন) নতুন ঋণ দিতে সম্মত হয় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি। নয়াদিল্লি সফরকালে কিশিদা বলেছিলেন, যে টোকিও দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের সহযোগিতায় বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তর-পূর্ব ভারত পর্যন্ত রাজ্যগুলোর উন্নয়ন চায়। এই কারণে কয়েকদিন আগে আগরতলায় একটি আলোচনা সভা হয়েছে।

তাই মাতারবাড়ি শুধুমাত্র সবচেয়ে সুবিধাজনক বন্দরই হবে না বরং ইন্দো-জাপানের জন্য সবচেয়ে বিচক্ষণ পছন্দও হবে, কারণ ঢাকার সঙ্গে নয়াদিল্লির অন্যান্য প্রতিবেশীদের তুলনায় অনেক বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার-জাপান এই সুযোগে উপকৃত হবে। এই ক্ষেত্রে জাপান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে নিয়ে একসাথে কাজ করতে পারে। কিন্তু তার আগে জাপানকে অবশ্যই মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে চলমান রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করে সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে হবে।

বাংলাদেশ এখন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল গ্রহণের কাছাকাছি চলে এসেছে। চীনের ভূমিকা পালনের আগেই জাপান ভূমিকা পালন করলে এই অঞ্চলে জাপানের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে। তাই মিয়ানমার-বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে জাপানেরই কৌশলগত লাভ।

জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। জাপান এই দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। জাপান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে এই সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। উভয় দেশে জাপানের ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে।

৩১০টি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা করছে। দায়বদ্ধতা ও নৈতিকতাবোধ থেকে জাপান রোহিঙ্গা সমস্যার শুরু থেকে নীরবে কাজ করে যাচ্ছে এবং এর সমাধানের জন্য তৎপর রয়েছে। বাংলাদেশে কর্মরত জাপানের রাষ্ট্রদূতগণ বিভিন্ন সময়ে বহুবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছে।

জাপানিরা ব্যক্তি, সাংগঠনিক ও সরকারি ইত্যাদি নানা পর্যায়ে সমস্যার একটি স্থায়ী ও টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জাপানের জনগণ, নানা সংগঠন ও জাপান সরকার অবিরত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী ও সেবা দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর সহায়তা চলমান রেখেছে।

কূটনৈতিকভাবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, প্রত্যাবাসন ও বাস্তু সমস্যা সমাধানকল্পে জাপান সরকার মিয়ানমার সরকার, আসিয়ান ও জি-৭ ইত্যাদি নানা আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছে। জাপান প্রলম্বিত রোহিঙ্গা সমস্যার একটি টেকসই সমাধান চায় এবং এই বিষয়ে বাংলাদেশকে যেকোনো ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

বেশ কয়েকটি মানবাধিকার গোষ্ঠী এখন পর্যন্ত জাপানের অবস্থানের নিন্দা করেছে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে পরিস্থিতির প্রতি জাপান সরকারের প্রতিক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি ইস্ট এশিয়া ডিরেক্টর লিসা টাসি কূটনীতিকদের বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নৃশংসতার বিষয়ে জাপান ইতিহাসের ভুল দিকে ছিল।

এশিয়ার উদার গণতন্ত্রের নেতা এবং দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও মানবিক সমর্থক জাপানের কাছ থেকে রোহিঙ্গা সংকট খুব বেশি মনোযোগ পায়নি। এটি মিয়ানমার সম্পর্কে জাতিসংঘের কোনো প্রস্তাবে ভোট দেয়নি। যদিও বার্মা সরকার রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সাথে নিয়মিত খারাপ আচরণ করে, জাপান ৭০ বছর ধরে দেশটিকে অর্থ ও অন্যান্য সাহায্য দিয়েছে।

মানবাধিকার কর্মী এবং নোবেল শান্তি বিজয়ী ডেসমন্ড টুটু একবার বলেছিলেন, যদি একটি হাতি একটি ইঁদুরের লেজে পা রাখে এবং আপনি দাবি করেন যে আপনি নিরপেক্ষ, তবে ইঁদুর আপনার নিরপেক্ষতার প্রশংসা করবে না।

মিয়ানমার দীর্ঘদিন ধরে জাপানের একটি নির্ভরযোগ্য বন্ধু এবং এখন জাপান মিয়ানমারে ব্যবসায় ভালো করতে চায়। মিয়ানমারের কৌশলগত অবস্থান এবং চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে জাপান উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। সরকারি উন্নয়ন বিনিয়োগ এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ফলে মিয়ানমার বিনিয়োগকারীদের জন্য খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (JICA) এবং জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (JETRO) উভয়েরই মিয়ানমারে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে।

জাপানের ভূ-রাজনৈতিক খেলায় মিয়ানমার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জাপান বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্টের প্রতি তার আর্থিক প্রতিশ্রুতি বাড়াচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ), জ্বালানি খাত এবং যোগাযোগ খাত।

থিলওয়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র পুনর্বাসন প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছিল। বিনিয়োগ বাড়াতে মিয়ানমার ও জাপান ২০১৯ সালে রাখাইন রাজ্য বিনিয়োগ মেলার আয়োজন করে।

সামরিক-থেকে-সামরিক সহযোগিতার বাইরে, জাপান মিয়ানমারের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, সরকার মিয়ানমারকে ২০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি সাহায্য ও উন্নয়ন তহবিল দিয়েছে।

জাপান এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (UNHCR) ২০২২ সালে সুরক্ষা এবং মানবিক সহায়তার জন্য ৩.৫ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ১৭ আগস্ট ২০১৭ সাল থেকে কক্সবাজার ও ভাসান চরে ইউএনএইচসিআর, জাতিসংঘ সংস্থা এবং এনজিওগুলো জাপান থেকে ১৭৫ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অন্যান্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ লোড ভাগাভাগি করতে সাহায্য করার জন্য শরণার্থীদের গ্রহণ করেছে। একই সময়ে, জাপানই ছিল প্রথম এশিয়ান দেশ যারা ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে মিয়ানমারের শরণার্থীদের তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসনের নীতি পরীক্ষা করে।

এই পরিকল্পনাটি আশীর্বাদ না হয়ে সমস্যার কারণ হতে পারে। কোনো তৃতীয় দেশে মাত্র কয়েকশ শরণার্থী পুনর্বাসন করলে কোনো লাভ হবে না, যদি শরণার্থীর সামগ্রিক সংখ্যা দশ লাখের বেশি না হয়। যাই হোক, একটি সভ্য দেশে উন্নতমানের জীবনযাত্রার প্রলোভন রোহিঙ্গাদের তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়াকে কম আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশকে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যা তুলনামূলকভাবে শিগগিরই ঘটবে না। জাপান, যখন এশিয়ার একটি অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ এবং মিয়ানমারের একটি কৌশলগত বন্ধু, তাতমাদোকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে উৎসাহিত করে বাংলাদেশের পক্ষের বন্ধু হিসেবেও পরিচয় দিতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকট জাপানের জন্য একটি হুমকি এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি, নীল অর্থনীতি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সামুদ্রিক বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক সংযোগের মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য জাপানকে উদ্যোগ নিতে হবে।

তার শান্তিকেন্দ্রিক সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, জাপানকে অবশ্যই তার শীতল নীতি পরিত্যাগ করতে হবে এবং রোহিঙ্গা ট্র্যাজেডি সম্পর্কিত সব বহুপাক্ষিক ফোরামে মানবাধিকার ও সমতার জন্য দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।

বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে, জাপানের উচিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় স্বদেশে প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে নেতৃত্ব দেওয়া কারণ রোহিঙ্গা দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য স্বদেশ প্রত্যাবর্তনই একমাত্র কার্যকর বিকল্প।

লেখক: ইরিনা হক, গবেষক এবং ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট।