রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসেছে: জাতিসংঘ র্যাপোর্টিয়ার

নিউজ ডেস্ক
রোহিঙ্গারা গণহত্যার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা পালিয়ে এলেও এই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের কোনও র্যাপোর্টিয়ার ঘটনাটিকে গণহত্যা হিসাবে অভিহিত করলেন।
চরম দারিদ্র্য এবং মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অলিভিয়ার ডি শ্যুটার বাংলাদেশে ১২ দিনের সফর শেষে সোমবার (২৯ মে) সংবাদ সম্মেলনে জানান, শরণার্থী শিবিরগুলোতে ৯৭৭,৭৯৮ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে তাদের মাতৃভূমির গণহত্যার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, আমি আশা করি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত সম্ভব হবে। আমি বিশ্বাস করি প্রত্যাবাসনের ভার মিয়ানমারের নেওয়া উচিত এবং দেশটির ওপর আরও চাপ প্রয়োগ করা দরকার, যাতে রোহিঙ্গাদের প্রতি সঠিক আচরণ করে তারা।
‘রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও অবদান রাখা উচিত। এটি বাস্তবতা যে আন্তর্জাতিক দাতারা বেশি অবদান রাখছে না। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা এজেন্ডা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু এখন সেটি কমে গেছে এবং এটি গ্রহণযোগ্য নয়। আমি আহ্বান জানাচ্ছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, যেন এ বিষয়ে আরও বেশি অবদান রাখে বলে তিনি জানান।
বিশেষ প্রতিবেদক জানান, এটি ‘অনভিপ্রেত’ যে ২০২৩ সালে রোহিঙ্গা শিবিরে জরুরি মানবিক প্রয়োজন মোকাবিলায় ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের যৌথ পরিকল্পনার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক দাতারা এতই কম অবদান রেখেছে যে চাহিদার মাত্র শতকরা ১৭ ভাগ অর্থায়ন জোগাড় হয়েছে। মার্চ ২০২৩ সাল থেকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে তার খাদ্য ভাউচারের মূল্য প্রতি মাসে ১২ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করতে হয়েছে, এবং এটি আগামী জুনে আরও কমিয়ে ৮ ডলার করা হবে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন
বাংলাদেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘ প্রতিবেদক।
তিনি উল্লেখ করেন, ওই আইনের অধীনে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং শিক্ষাবিদদের তাদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার প্রয়োগের কারণে আটক করা হয়েছে।
ডি শ্যুটার বলেন, “এই বিষয়গুলো দেশটি যে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে চাচ্ছে কেবল তাদেরই শঙ্কিত করবে না, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে।” “আপনি জবাবদিহি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা বা সামাজিক সুরক্ষা দিতে পারবেন না।”
দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নয়ন
বাংলাদেশ সফরকালে বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকা, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও কক্সবাজার পরিদর্শন করেন এবং দারিদ্র্যসীমায় থাকা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশে দারিদ্র্য পরিস্থিতির অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০০০ সালে দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল ৪৮.৯ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে ৩৪.৩ শতাংশ লোক। কিন্তু বর্তমানে এর সংখ্যা যথাক্রমে হচ্ছে ১৮.৭ শতাংশ ও ৫.৬ শতাংশ।
তবে তিনি উল্লেখ করেন, “দেশ সামগ্রিক আয়ের বৈষম্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করলেও এখনও বহুমাত্রিক দারিদ্র্য রয়ে গেছে এবং বিশেষ করে, শহরাঞ্চলে আয়-বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।”
বিশেষ প্রতিবেদক বলেন, “সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি অসম হয়েছে; আদিবাসী, দলিত, বেদে, হিজরা এবং ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘু, যেমন- বিহারিদের সুযোগ বঞ্চিত করা হয়েছে।”