হালদায় ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্ছ মাছের ডিম সংগ্রহ - Southeast Asia Journal

হালদায় ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্ছ মাছের ডিম সংগ্রহ

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

মৌসুমের একেবারে শেষে এসে হালদা নদীতে বিপুল পরিমাণ ডিম দিয়েছে কার্পজাতীয় মা মাছেরা। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জোয়ার ও ভাটার সময় মা মাছেরা নদীর ৮ থেকে ১০টি স্থানে ডিম ছাড়ে। ফলে পুরো মৌসুম ধরে অপেক্ষায় থাকা ডিম আহরণকারীরা একেকটি নৌকায় ৫০ কেজির ওপরে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন।

৫ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে বলে নদী গবেষক, মৎস্য অধিদপ্তর ও সংগ্রহকারীরা জানিয়েছেন। সঠিক পরিমাণটি বের করতে আরেকটু সময় লাগবে।

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ চট্টগ্রামের হালদা নদী। গতকাল রোববার দুপুর থেকে আজ সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত নদীর হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাসমুন্সিরহাট, মাছুয়াঘোনা ও আমতুয়া, নাপিতের ঘাট, পোড়া কপালী, গড়দোয়ারা ইউনিয়নের নয়াহাট, রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট, কাগতিয়া ও খলিফারঘোনা এলাকায় অন্তত ৩০০টি নৌকায় জেলেরা ডিম সংগ্রহ করেছেন।

প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী হাটহাজারীর গরদোয়ারা ইউনিয়নের মুহাম্মদ কামাল সওদাগর বলেন, এবার তিনি পাঁচটি নৌকায় ১২ থেকে ১৪ জন লোক নিয়ে ডিম সংগ্রহের কাজে নদীতে ছিলেন। প্রতিটি নৌকায় তিনি পাঁচ থেকে ছয় বালতি (এক বালতিতে ১০ কেজি) পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করেছেন। গত কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ ডিম পেয়েছেন তাঁরা। এসব ডিম পরে গরদোয়ারা নয়াহাট হ্যাচারিতে রেণু ফোটানোর জন্য নিয়ে যাবেন।

গত শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন ডিম সংগ্রহকারীরা। গতকাল সকালে জোয়ারের শুরুতে এবং দুপুর ও বিকেলে সাত থেকে আটটি স্থানে ২০০-৩০০ গ্রাম ডিম পেয়েছিলেন তাঁরা। এতে হতাশ হলেও রাতের জোয়ারে মা মাছ আবার ডিম ছাড়বে এমন আশায় জাল পেতে রেখেছিলেন তাঁরা। শেষে রাত সাড়ে ১১টায় মিলল কাঙ্ক্ষিত ডিম। রাতেই নৌকা ভর্তি হয়ে যাওয়ায় সরঞ্জামের অভাবে অনেকে নদীতে ডিম দেখতে পেলেও বালতিতে তুলতে পারেননি।

এর আগে গত ১৭ মে রাতে এবং ১৮ মে দিনের জোয়ারে এই মৌসুমের প্রথম অল্পসংখ্যক নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। এরপর আর কোনো জোয়ারে মা মাছ ডিম ছাড়েনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা যায়, প্রজনন মৌসুমের শুরুতে হালদা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রতি লিটারে সাড়ে ৩ হাজার মিলিগ্রাম, যা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে ২০ থেকে ৩০ মিলিগ্রাম। তবে গত ২০ দিনের বজ্রবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সে লবণাক্ততা কমে এসেছে।

আজ সকালে হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, নদীর স্বাভাবিক পরিবেশ এবার শতভাগ অনুকূলে থাকলেও প্রচণ্ড দাবদাহ আর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই প্রতিকূল ছিল। মা মাছের ডিম ছাড়া নিয়ে এতে তাঁরা শঙ্কিত ছিলেন। পুরো মৌসুমে ডিম ছাড়ার পরিমাণ খুব কম ছিল। তবে গতকাল রাত সাড়ে ১১টা থেকে নদীর প্রায় ২০টি স্থানে প্রচুর পরিমাণ ডিম ছাড়া শুরু হয়। তিনি নিজে রাতভর ডিম সংগ্রহ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।

এবার বেশ দেরি করেই ডিম ছাড়া শুরু করেছিল কার্পজাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ) মা মাছেরা। অন্যান্যবার এপ্রিলের শুরু ও মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে চার থেকে পাঁচবার ডিম ছাড়ে মা মাছ। কিন্তু এবার প্রচণ্ড দাবদাহ ও ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে হালদা নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ডিম ছাড়তে দেরি হয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরির তথ্যমতে, গত বছর মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৬ হাজার কেজি। এর আগে ২০২১ সালে ৮ হাজার ৫০০ কেজি।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ শাহিদুল আলম বলেন, নদীর পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনিকভাবে যা যা করণীয়, সবই করা হয়। এবার ডিম ছাড়ার বিষয়ে শুধু প্রাকৃতিক বিষয়ই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, ‘রাতভর আমরা ডিম সংগ্রহ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে নদীতে ছিলাম। সংগ্রহকারীদের ডিম সংগ্রহ এবং হ্যাচারিতে নিয়ে রেণু ফোটানোর কাজে সহযোগিতা করতে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার মৎস্য বিভাগের লোকজনও ছিল। রেণু ফোটানো ও পোনা সংরক্ষণের জন্য তাঁরা কাজ করছেন। গতকাল মোট ডিম সংগ্রহের পরিমাণ তাঁরা বের করবেন। ডিম আহরণ ও সংরক্ষণের হিসাব পেতে একটু সময় লাগবে।’