রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণসহ এক ডজন সিদ্ধান্ত - Southeast Asia Journal

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণসহ এক ডজন সিদ্ধান্ত

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে চারদিকে নিরাপত্তাবেষ্টনী নির্মাণসহ এক ডজন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্য সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রাতে যৌথ টহল, কঠোরভাবে নজরদারি, ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের নৌপথে অন্য স্থানে আসা-যাওয়া বন্ধ করা, নতুন করে অবৈধভাবে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ, রোহিঙ্গাদের জন্য টেলিটকের সিম বিক্রির অনুমতি, রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রচার বাড়ানো। এ ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবে অপপ্রচারকারীদের আইনের আওতা নিয়ে আসা ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করা। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জামেল হকের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, সেনা সদরের চিফ অব জেনারেল স্টাফ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব, সুরক্ষা বিভাগের সচিব, মহাপুলিশ পরিদর্শক, এনজিও মহাপরিচালক, এনটিএমসি মহাপরিচালক, র‌্যাব মহাপরিচালক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এনএসআই প্রতিনিধি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী তার স্বাগত বক্তব্যে বলেছেন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে মাদকের ব্যবসা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন বাহিনীর যৌথ টহল ও অভিযান বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে তিনি সীমান্তে মাদক চোরাচালান বন্ধ করার জন্য সীমান্ত বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর তাগিদ দেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সভায় বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের তুলনায় তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ব্যাপারে তাদের মনোযোগ বেশি। তিনি আরও বলেছেন, মিয়ানমার নাগরিকরা বর্তমানে একসঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দুই-তিনটি অপারেটরের সিম ব্যবহার করে। মিয়ানমারের সিম ব্যবহার বন্ধ করা প্রয়োজন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেকোনো একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির কভারেজের মধ্যে দিয়ে নিয়ে আসা প্রয়োজন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য একটি চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসতে হবে। যেন এই দুর্ভোগ থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পায়।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। যেন মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেছেন, বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছে। তহবিল ঘাটতির কারণ দেখিয়ে জাতিসংঘ খাদ্য সহায়তা কমানোর যে পরিকল্পনা করেছে তাতে খাদ্য নিরাপত্তার সংকট ও পুষ্টিহীনতা আরও ঘনীভূত হবে। বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হলে তারা কাজের খোঁজে আরও মরিয়া হয়ে উঠবে। তাতে তাদের ক্যাম্পের মধ্যে রাখা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। আইনগতভাবে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে কাজের সুযোগ নেই। ক্যাম্প থেকে পালিয়ে অনেকেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে চেপে সাগরপথে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

চিফ অব জেনারেল স্টাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হওয়ার অনুরোধ জানান।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার এ পর্যন্ত মিয়ানমার সরকারের কাছে ৮ লাখ ২৯ হাজার ৩৩৬ জনের নামের তালিকা হস্তান্তর করেছে। মিয়ানমার সরকার ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৬৮ জনের তালিকা বাংলাদেশের কাছে ফেরত পাঠিয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে প্রথম যাচাই-বাছাই করে ৬১ হাজার ৯২১ জনের নামের তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে। সেখান থেকে তারা ৩৭ হাজার ৭০০ জনের নামের তালিকা পাঠিয়েছে। এখানে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে সহায়তা দাতা দেশগুলো থেকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। তহবিল সংকট কারণ দেখিয়ে জাতিসংঘ খাদ্য সহায়তা জনপ্রতি ১২ ডলার থেকে ১০ড লার ও পরবর্তী সময়ে ৮ ডলার প্রদান করছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাবির্ক অবস্থা আরও নাজুক পরিস্থিতি সম্মুখীন হবে। তিনি সভাকে আরও জানান, সস্তা শ্রমের কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা রোহিঙ্গাদের তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিচ্ছে। এ কারণে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে।

পুলিশ মহাপরিদর্শক সভায় বলেছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় মূলত মাদকের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সিসি ক্যামেরাগুলোর অনেকই নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো মেরামত করা প্রয়োজন।

এনটিএমসি মহাপরিচালক বলেছেন, রোহিঙ্গা নাগরিকদের কাছে স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে টেলিটক সিম দেওয়া যেতে পারে। টেলিটক সিম দেওয়া হলে তাদের মধ্যে মিয়ানমারের সিম ব্যবহার প্রবণতা কমে যাবে।

এনজিও মহাপরিচালক বলেছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেকেই বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের আইনের আওতায় আনা হলে বেশ কিছু এনজিও অপরাধীদের বিভিন্নভাবে আইনি সহায়তা প্রদান করে থাকে। কিছু এনজিও তাদের ছাড়িয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা করে থাকে।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেছেন, যারা অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা যায়।

এনএসআই প্রতিনিধি বলেছেন, কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা বিভিন্নভাবে এই সমস্যা জিইয়ে রাখতে চায়। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সময় বিরোধিতা করা হয়েছিল।