রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ভরণপোষণে কমছে তহবিল, চাপে বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর নৃশংস দমন-পীড়ন, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মুখে জীবন বাঁচতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ অভিমুখে নেমেছিল রোহিঙ্গাদের ঢল। সাড়ে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ বহন করে চলেছে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে গণহত্যার শিকার হয়ে পালিয়ে আসা সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা। এ বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর ভরণপোষণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এগিয়ে এলেও ক্রমেই কমছে তার তহবিল। চাপ বাড়ছে বাংলাদেশের।
চীনের মধ্যস্থতায় ঢাকা-নেপিদো ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার সফলতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো ভূমিকায় পৌঁছাতে আরও কৌশলী হতে হবে বাংলাদেশকে। রাখাইনে গণহত্যার স্বীকৃতির ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক আদালতের মামলায় মার্কিন অর্থায়নসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আবারও ইস্যুটি তুলে ধরতে ঢাকাকে পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
অন্যদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ২০১৮ সালে স্বাক্ষর হওয়া চুক্তি কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ। রাখাইনে নিরাপদ ঘরবাড়ি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রস্তুত, ঢাকা-নেপিদো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক, মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের কক্সবাজার শিবির পরিদর্শন একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরাতে পারেনি নিজ দেশে।
রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতাকে ২০২২ সালের মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণহত্যা হিসেবে ঘোষণা করলেও, দৃশ্যত কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেয়নি দেশটি। বরং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশটির সঙ্গে বাড়িয়েছে বাণিজ্য।
এমন প্রেক্ষাপটেই ঢাকায় এসেছেন বেসামরিক, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। পরিদর্শনে যাবেন কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প।
সাবেক কূটনীতিক ও পররাষ্ট্র সচিব অধ্যাপক শহীদুল হকের মতে, নেপিদোর নিস্ক্রিয় মনোভাব সচল করতে শক্তিধর বন্ধুরাষ্ট্রকে আরও সম্পৃক্ত করতে হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার চায় এটা স্থগিত হয়ে যাক। এটা নিয়ে কেউ কথা না বলুক, সবাই এটা ভুলে যাক। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এটা উল্টো। রোহিঙ্গা ইস্যুকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, সব সময় কথা বলতে হবে। নতুন নতুন অপশন খুঁজতে হবে কীভাবে সমাধান করা যায়।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তিধর দেশের ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতাকে মাথায় নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা অনুযায়ী সক্রিয় পদক্ষেপের দিকে আলোচনা এগিয়ে নিতে হবে ঢাকাকেই। রাখাইনে গণহত্যার স্বীকৃতির ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক আদালতের মামলায় মার্কিন অর্থায়নসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আবারও ইস্যুটি তুলে ধরতে হবে।
ঢাকা-ওয়াশিংটন কূটনীতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গকে প্রাধান্য দেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।