কাশ্মিরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন নিয়োগ করার দাবি - Southeast Asia Journal

কাশ্মিরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন নিয়োগ করার দাবি

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

কাশ্মিরের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে অভিযোগ করে নাগরিক ফোরাম দাবি তুলেছেন, কাশ্মিরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন নিয়োগ করতে হবে।

শুক্রবার (৪ আগস্ট) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তন) ‘‘মৌলিক অধিকার-মানবিক কর্তব্যঃ প্রেক্ষাপট কাশ্মির ” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নাগরিক ফোরাম এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, কাশ্মিরের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। কাশ্মিরিরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। ভারতের বিজেপি ধর্মের মধ্যে সংঘর্ষ তৈরি করছে। তাদের উগ্র আচরণ দক্ষিণ এশিয়া অস্থিতিশীল হচ্ছে। মানবিক বিপর্যয় হওয়ায় কাশ্মিরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন পাঠানোর সময় হয়েছে। জাতিসংঘের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করে কাশ্মিরিদের সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হবে তারা স্বাধীন হবে না কি ভারতের সঙ্গে থাকবে।

নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কবি আবদুল হাই শিকদার, ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক কামাল মজুমদার, দৈনিক ভোরের খবরের প্রধান সম্পাদক ও ড. হারনুর রশিদ ভুঁইয়া, বিএনপি নেতা সাইফুর রহমান মিহির ও প্রকৌশলী শরীফুজ্জামান প্রমুখ।

সভায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার(সিইসি) ও বিচারপতি আবদুর রউফ বলেন, ‘‘আজকে যারাই বেশি মানবাধিকারের কথা বলছে তারাই মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। আর মানবাধিকার প্রশ্নটাই ঠিক না। মানুষ পৃথিবীতে অধিকারের জন্য আসে নাই। মানুষকে পাঠানো হয়েছে কর্তব্য পালনের জন্য। কারণ সে এসেছে রিপ্রেজেন্টেটিভ অফ দ্যা ক্রিয়েটার হিসেবে। সৃষ্টিকে পরিচর্যা করবে।

তিনি আরও বলেন, চোখের সামনে যদি একটা পিপড়া পানিতে পড়ে যায়, মানুষ হিসেবে যেহেতু আল্লাহর রিপ্রেজেন্টেটিভ। আমার প্রথম ডিউটি হচ্ছে পিঁপড়াটাকে তুলে শুকনা জায়গায় নিয়ে আসা। মানুষ হিসেবে এটাই হচ্ছে কর্তব্য। উপমহাদেশে কাশ্মির এখন আলোচনার বিষয়। সবকিছু মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে এতো দ্বন্দ্বের তৈরি হয় না। মজলুম কাশ্মিরের জনগণের প্রতিও আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব বিশ্ববাসীকে পালন করতে হবে।

এসময় কবি ও সাংবাদিক আব্দুল হাই শিকদার বলেন, ভূস্বর্গ কাশ্মিরে এখন মানবাধিকার নেই। সাধারণ মানুষতো নয়ই সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরাও কথা বলতে পারছেন না। চারিদিকে এক ধরনের ভয়-ভীতি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভয়ের পরিবেশ এখন কাশ্মিরে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে এখন যা খুশি তাই করছে ভারতের উগ্র বিজেপির রাজনীতিবিদরা। তারা যা বলছে, তাই আইন। যেটা খুশি করছে সেটাই আইন। আইনের কোনো বালাই নাই। এর বাইরে কোনো নিয়ম-কানুন মানছেন না।

তিনি আরও বলেনে, কাশ্মিরের জনগণ ভারতের বিজেপির নেয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছেন। উচ্চ আদালত সেই পিটিশনের শুনানি শুরু করেছে। আমরা আশা করবো ভারতের উচ্চ আদালত সুচিন্তিত মতামত দিবে। কাশ্মিরের স্বাধীনতা নিয়ে যারা যুদ্ধ করছে তাদের জঙ্গি বলছে এক শ্রেণির মিডিয়া। এটি মুক্তিযুক্তের বিশ্বাসের বিপরীত। কারণ হচ্ছে তারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। তারা স্বাধীনতাকামী, তাদেরকে সেভাবেই লিখতে হবে মিডিয়ায়।

মূল প্রবন্ধে নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহিল মাসুদ বলেন, কাশ্মিরের অনেক সাংবাদিককে ২০১৯ সাল থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, হয়রানি করা হয়েছে, থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রশাসন রিপোর্টিং নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে একটি নতুন মিডিয়া নীতিও বাস্তবায়ন করেছে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের তত্বাবধানে কাশ্মিরে শান্তিরক্ষী মিশন পাঠানোর সময় হয়েছে। জাতিসংঘের তত্বাবধানে কাশ্মিরে গণভোট করে তাদের ভাগ্যর সিদ্ধান্ত তাদের নিতে দেন। ভোটের আগ পর্যন্ত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন কাশ্মিরেই থাকবে। এতে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। যতোদিন ভোট না হয় ততোদিন প্রতি বছরে কাশ্মিরে প্রতিনিধি পাঠিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিশ্ববাসীকে রিপোর্ট দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার রিপোর্টে উঠে এসেছে, ২০১৯ সাল থেকে স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, জননিরাপত্তা আইন অনুযায়ী সাজা খাটছেন, এমন কারও মামলা যদি হাইকোর্ট বাতিল করে দেয়, সঙ্গে সঙ্গেই তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দিয়ে দেওয়া হয়। এরফলে ওই ব্যক্তি জেলেই থাকতে বাধ্য হন। এভাবে, একবার কেউ যদি ফেঁসে যান, তার পক্ষে জেল থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। কাশ্মিরে কি হচ্ছে প্রকৃত চিত্র কেউ জানতে পারছে না।

এসময় দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, কাশ্মীরের জনগণের ওপর জুলুম নির্যাতন আজকে কারও চোখে চোখে পড়ছে না, যেন কারও দায় নেই। কারণ এতে মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে, আমরা সাম্প্রদায়িকতাকে সমর্থন করি না। যেকোনো স্থানে কেউ নির্যাতিত হলে আমরা নির্যাতিতদের পক্ষে কথা বলবোই। আমরা মজলুমের পাশে দাঁড়াবই। নির্যাতিত ব্যক্তি যে ধর্মেরই হোক না কেন আমরা তাদের পাশে থাকবো। একজন হিন্দু নির্যাতিত হলে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো, তেমনি একজন মুসলমান নির্যাতিত হলে আমাদের দায়িত্ব হবে তাদের পাশে দাঁড়ানো

প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সাল থেকে ভারতের সংবিধানে কাশ্মীরকে বিশেষ স্বায়ত্বশাসিত এলাকার মর্যাদা ছিল। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের সঙ্গে থাকলেও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কাশ্মিরের নিজস্ব পতাকা, আইন, মুদ্রাসহ থাকবে নিজেদের। শুধু পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা থাকবে ভারতের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু বিশেষ মর্যাদার সেই ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট। গত ৭০ বছর ধরে চলা চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে ভারত। যার প্রতিবাদ প্রায় সব রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হচ্ছে।