‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অপরাধী তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে’ - Southeast Asia Journal

‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অপরাধী তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে’

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

কক্সবাজারের সদ্যবিদায়ী সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেছেন, কক্সবাজারের প্রধান সমস্যা মাদক চোরাচালান। বর্তমানে এখানকার আদালতে ১০ হাজারের বেশি মাদক মামলা চলছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অপরাধী তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে।

শনিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে কক্সবাজার নাগরিক ফোরাম আয়োজিত বিদায়ী সংবর্ধনায় জেলা জজ এ কথা বলেন।

নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে বিদায়ী সংবর্ধনায় জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল কক্সবাজারে সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালনকালে নানা অভিজ্ঞতা, বিচারাঙ্গনে নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, মাদক, অস্ত্র ও খুনের মামলায় রোহিঙ্গা আসামিদের জামিন নিতে কিছু আইনজীবী ও দালাল কোটি কোটি টাকার লেনদেন করছে। তারা জজ কোর্টে জামিন না পেলে হাইকোর্টে যায়। রোহিঙ্গাদের অপরাধের কারণে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে কক্সবাজারের। ক্যাম্পগুলো এখন ইয়াবা কারবারিদের মূলকেন্দ্র। মাদকের মামলা নিষ্পত্তির জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের বিদায়ী সিনিয়র জেলা জজ ইসমাইল বলেন, কৃষিপ্রধান দেশ হয়েও আমাদের উৎপাদনযোগ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কৃষিপণ্য আমদানি করতে হয়। গ্রামাঞ্চলের কৃষি উৎপাদনে সম্পৃক্তদের বিশাল এক অংশকে কোনো না কোনো মামলায় জড়ানো হয়। এদের সিংহভাগই নির্দোষ। আসামি হয়ে সারাবছর আদালতে ধরনা দিতে ব্যস্ত থাকায় উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। এভাবে মামলা দেশের উৎপাদনকেও বাধাগ্রস্ত করছে।

তিনি বলেন, দেশে সবচেয়ে হত্যা মামলা বেশি কক্সবাজারে। এরমধ্যে রোহিঙ্গাদের কারণে খুন খারাবিসহ নানা অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। আমি কক্সবাজারে যোগদানকালে বিচার শেষ না হওয়া ৯৯৮টি হত্যা মামলা ছিল। শুধুমাত্র রোহিঙ্গা হত্যা মামলা রয়েছে ১৫০টি। ইয়াবার মামলা রয়েছে ১০ হাজার। এসব নিয়ে জামিন বাণিজ্যও চলছে রমরমা। অনেক আইনজীবী তদবির করতে আসেন জামিন দেওয়ার জন্য। পাঁচ শতাধিক মিস মামলা জমা রেখেছি। এসব মামলায় জামিন দিতে অনেকে তদবির করেছেন প্রতিনিয়ত।

বিদায়ী জজ বলেন, অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি বলে অনেকে আমার নামে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যও করেছেন। কিন্তু আমি আইন ও সরকারি দায়িত্বের প্রতি অটুট ছিলাম। সরকার আমাকে যে দায়িত্ব দিয়ে এখানে পাঠিয়েছে, সেই দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালন করেছি। কক্সবাজারের অনেক কয়েদি অন্য জেলার কারাগারে ছিল, যাতে আদালতে অনুপস্থিত দেখিয়ে ভিন্ন সুযোগ নেওয়া হয়। আমি তা টের পেয়ে সেই সিস্টেম বাতিল করেছি। আমি সবসময় চেয়েছি জামিন করে দেওয়ার নামে অসহায় মানুষকে হয়রানি তথা জামিন বাণিজ্য বন্ধ হোক।

কক্সবাজারে বিদায়ী সংবর্ধনায় জজ ইসমাইল

মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) সিনহা হত্যা মামলাসহ কক্সবাজারের বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর মামলা নিষ্পত্তির কারণে নিজের নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিদায়ী জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। তিনি বলেন, ওসি প্রদীপের মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ায় কক্সবাজারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়েছে। এছাড়া মেজর সিনহা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগীরা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলেও দাবি করেন তিনি।

সদ্য বিদায়ী সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল কক্সবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ও চাঞ্চল্যকর মামলা নিষ্পত্তিকারী জেলা জজ। কিন্তু সম্প্রতি বিধিবহির্ভূতভাবে কয়েকটি জামিন নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে উচ্চ আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি কক্সবাজারে তার সাড়ে তিন বছরের অর্জনকে ছাপিয়ে গেছে। কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্ত সবার নজরে এসে তা নিয়ে সমালোচিত হন বিচারক ইসমাইল। এরপরও এক সময়ে কক্সবাজার আদালতে জটে পড়া প্রায় ৮০ হাজার মামলা থেকে সাড়ে তিন বছরে ২৮ হাজার ৬০০ মামলা নিষ্পত্তিকে ইতিহাস হিসেবে উল্লেখ করছেন কক্সবাজারের আইনজীবী ও জেলা বিচার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কক্সবাজারের ১৭তম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে তিন বছর ৬ মাস ৮ দিন দায়িত্ব পালন করা মুহাম্মদ ইসমাইল চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি অনার্সসহ এমএলএম সম্পন্ন করেন। পরে তিনি বিসিএস (জুডিসিয়াল) ১০ম ব্যাচের ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পান। কক্সবাজারে আসার আগে তিনি বান্দরবানের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইলের সরকারি চাকরির বয়সসীমা পূর্ণ হওয়ায় তার করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৩ এর উপসচিব (প্রশাসন-১) মোহাম্মদ ওসমান হায়দার সই করা এক প্রজ্ঞাপনে ৯ আগস্ট কক্সবাজার থেকে বদলি করে তার চাকরি আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। আইন মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত মোহাম্মদ ইসমাইল সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী ১৪ আগস্ট অবসরে যাবেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম।