ডাটাবেজে পাসপোর্ট অধিদফতরের প্রবেশাধিকার না থাকায় অবাধে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরী করছে রোহিঙ্গারা! - Southeast Asia Journal

ডাটাবেজে পাসপোর্ট অধিদফতরের প্রবেশাধিকার না থাকায় অবাধে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরী করছে রোহিঙ্গারা!

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

 

নিউজ ডেস্কঃ

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২৮ নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ব্যাপক নির্যাতনের মুখে সেদেশ থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের ডাটাবেজে পাসপোর্ট অধিদফতরের প্রবেশাধিকার না থাকায় রোহিঙ্গারা দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশি পাসপোর্ট বানিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে রোহিঙ্গাদের নিয়ে করা এই ডাটাবেজে ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ অনেক তথ্য রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ জন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৪১৭ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এরমধ্যে আশ্রয়প্রার্থী এতিম শিশু রয়েছে ৩৯ হাজার ৮৪১ জন। নিবন্ধনকৃত আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। বাংলাদেশে অবস্থানের পর আরও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের ডাটাবেজ তৈরির কাজ জানিয়ে আগামী ডিসেম্বর (২০১৯) নাগাদ এর কাজ শেষ করা যাবে । তারা বলছেন, এরপরই এই ডাটাবেজের সঙ্গে পাসপোর্ট অধিদফতরের ডাটাবেজ সংযুক্ত করা হবে। তখন ভুয়া পরিচয়ে পাসপোর্ট বানিয়ে নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে উপস্থাপনের সুযোগ কমে যাবে রোহিঙ্গাদের। তবে, বর্তমানে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর পরিচালিত বায়োমেট্রিক নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে।

এবছরের ১০ মে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে ২৪ রোহিঙ্গাকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দারা। যে বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয় সেই বাড়িটি খিলক্ষেতের মধ্যপাড়া এলাকায়। ওই বাড়িতে রেখে তাদের বাংলা ভাষাও শেখানো হচ্ছিল বলে জানান গোয়েন্দারা। তাদের কাছ থেকে ৫৬টি বাংলাদেশি পাসপোর্টও উদ্ধার করেন তারা। দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে তারা মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় তাদের আটক করা হয়। গত ১৯ মে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে গালফ এয়ারের একটি বিমানে ওঠার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৫ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। গত ২৬ জুন বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় নিয়ে আসা সাত রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে ওইদিন সেখানে যোগাযোগ করলে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

দালালদের মাধ্যমে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে বলে জানান গোয়েন্দারা। তাছাড়া সমুদ্রপথে রোহিঙ্গাদের থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠাতে দালালচক্রটি একটি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে কাজ করে থাকে বলে জানান তারা। গোয়েন্দারা মনে করেন, তাদের প্রতিরোধ করা না গেলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। কারণ, বিভিন্ন দেশে গিয়ে যখন রোহিঙ্গারা ধরা পড়ে, তখন তারা বাংলাদেশের নামই বলে থাকে।

পাসপোর্ট অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও অর্থ) এ টি এম আবু আসাদ বলেন, ‘সব বিষয় মাথায় রেখে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শিগগিরই এর সুরাহা হয়ে যাবে।’ তারা এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরতদের সঙ্গে আলাপ করে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের ডাটাবেজ এখনও পাসপোর্টের ডাটাবেজের সঙ্গে যুক্ত করা যায়নি। এ কারণে পাসপোর্ট দিতে গেলে রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তারা ভুয়া জন্মসনদ দিয়ে অনেক সময় পাসপোর্ট বানিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন এলাকা থেকে।

রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের ডাটাবেজের বিষয়ে জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘এই ডাটাবেজের কাজ শেষ হলে পাসপোর্ট অধিদফতরের ডাটাবেজের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এটার কাজ এখনও চলমান রয়েছে। এই ডাটাবেজের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ডিসেম্বর নাগাদ রেজিস্ট্রেশনের কাজ শেষ হয়ে যাবে আশা করছি।’ তখন পাসপোর্ট অধিদফতরের ডাটাবেজের সঙ্গে এর সংযুক্তি নিয়ে কাজ করা হবে বলেও তিনি জানান।

You may have missed