ব্রিকস কি নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে?

নিউজ ডেস্ক
দক্ষিণ আফ্রিকায় মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হচ্ছে বিশ্বের পাঁচটি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের জোট ব্রিকস। জোটের সদস্য ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জনসংখ্যাও বিশাল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বে নতুন মেরুকরণ শুরু হওয়ায় এবারের সম্মেলনে বিশ্বের নজর থাকবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের সম্মেলনে সশরীরে যোগ দিচ্ছেন না। ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় পুতিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্মেলনে যোগ দেবেন। দক্ষিণ আফ্রিকা আইসিসির সদস্য, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পুতিন সফরে গেলে তাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য দেশটি। এ কারণেই পুতিন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করছেন না।
ইউক্রেনের সংঘাত এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে গভীরতর ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার পটভূমিতে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজিত হলেও মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার একটি শক্তি হিসেবে ক্রমবর্ধমান অবস্থানকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারে ব্রিকস। এবারের সম্মেলনে জোট সম্প্রসারণের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আলজেরিয়া থেকে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত অন্তত ৪০টি দেশ এই জোটে যোগ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
এই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হলো ব্রিকসের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবণতা। ক্রয় ক্ষমতার নিরিখে ব্রিকস দেশগুলোর জিডিপি শিল্পোন্নত সাতটি দেশের জোট জি-৭ এর চেয়ে বেশি। সাধারণভাবে বৈশ্বিক জিডিপির ২৬ শতাংশ ব্রিকস দেশগুলোর। তবু এই দেশগুলোর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) ভোট দেওয়ার ক্ষমতা মাত্র ১৫ শতাংশ।
এই ধরনের ভারসাম্যহীনতার অভিযোগের সঙ্গে গ্লোবাল সাউথের উদ্বেগ বাড়ছে যে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ডলারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। এর ফলে ব্রিকস দেশগুলো তাদের নিজস্ব মুদ্রায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মার্কিন মুদ্রার ওপর তাদের নির্ভরতা হ্রাস করার জন্য পৃথক এবং সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কোনও কিছুর পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন, এই বিষয়ে একমত হওয়া এবং কীভাবে এই বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করা যায় তা নিয়ে সম্মত হওয়া ভিন্ন কিছু। ২০২০ সাল থেকে সীমান্তে উত্তেজনা নিয়ে অচলাবস্থায় রয়েছে ভারত ও চীন। আর ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিল পশ্চিমাদের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা চায়।
ফলে ব্রিকস কি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিকল্প অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক ভিত্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে? অথবা তাদের অভ্যন্তরীণ মতভেদ কি তাদের সম্ভাবনাকে সীমিত করে দেবে?
সংক্ষেপে এর উত্তর হলো, বিশ্লেষকদের মতে, ব্রিকস দেশগুলোর প্রভাব বাড়তে পারে। তবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে নাটকীয়ভাবে প্রতিস্থাপনের চেয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বিকল্প প্রস্তাব করার সম্ভাবনা বেশি। এটিও পশ্চিমাদের সঙ্গে ব্লকটির উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ ব্রিকস নেতারা বিশ্বে নিজেদের স্বাধীন পথ তৈরি করতে চান। কিন্তু কার্যকর হিসেবে বহাল থাকার জন্য ব্রিকসকে তার দেশগুলোর বৈষম্যপূর্ণ অগ্রাধিকারগুলো মোকাবিলা করতে হবে। যা গ্রুপটির জন্য সহজ কাজ হবে না।