শিক্ষকদের ৩ দিনের ধর্মঘটে বন্ধ নেপালের ৩০ হাজার স্কুল
জার্নাল ডেস্ক
প্রস্তাবিত শিক্ষা সংস্কার বিলের প্রতিবাদে ধর্মঘট করেছেন নেপালের শিক্ষকরা। বুধবার থেকে টানা তিন ধরে এই কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন তারা। এতে নেপালের ৩০ হাজার সরকারি স্কুলের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর পাঠদান ব্যাহত হয়েছে। এই ধর্মঘটে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার শিক্ষক সমবেত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়েছে, স্কুলগুলোকে স্থানীয় সরকারের তদারকির আওতায় আনার প্রস্তাবিত বিলের বিরুদ্ধে ধর্মঘট করছেন শিক্ষকরা। তাছাড়া এই প্রস্তাবে শিক্ষকদের রাজনৈতিক দলে যোগদানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী শিক্ষক রাজধানী কাঠমান্ডুর সংসদ ভবনের সামনে মিছিল করেছেন। বিক্ষোভকারীরা একটি ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন দাঙ্গা পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ধর্মঘটের অবসান চেয়েছেন। শিক্ষকদের এই ধর্মঘট নিয়ে ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী সিমরান ভট্টাচার্য বলেন, শিক্ষকরা কীভাবে আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলছেন? আমি সামনে জাতীয় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে সিমরানের মা সাবিত্রী আচার্য বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমার মেয়েকে দেখাশোনা করার জন্য কয়েকদিনের ছুটি নিতে হয়েছে। আমি এভাবে ছুটি নিয়ে কত দিন মেয়েকে দেখাশোনা করতে পারবো? শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের অধিকার বজায় রেখে নিজেদের অধিকারের আন্দোলন করা।
নেপালের শিক্ষকরা দেশটির গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৫৯ সালে নেপালে প্রথম সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। তারপর থেকেই শিক্ষকদের কর্মী হিসেবে সংগ্রহের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে রাজনৈতিক দলগুলো।
এই পরিস্থিতিতে কিছু শিক্ষাবিদ বলেছেন, রাজনীতিতে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ শিক্ষার মান নষ্ট করেছে। বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে শিক্ষাবিদেরা বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বন্ধ করা উচিত।
স্থানীয় সরকারের অধীনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিকল্পনার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, স্কুল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত হওয়া উচিত। কিন্তু ২০১৫ সংবিধান পরিবর্তন করে কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে স্কুল ও হাসপাতাল।
গত আট বছর ধরে শিক্ষকদের একাংশ অভিযোগ করে আসছেন যে, স্থানীয় কর্মকর্তারা বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নন। তাদের দ্বারা শিক্ষার মানের অবনতি হচ্ছে।
শিক্ষকদের অপর দাবির মধ্যে রয়েছে, বেতন বৃদ্ধি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা এবং চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের স্থায়ী হওয়ার সুযোগ।
নেপালের শিক্ষক সমিতির প্রধান কমলা তুলাধার অভিযোগ করে বলেন, সরকার আমাদের দাবির পূরণ করেনি। অনেক সমস্যা সমাধান করেনি সরকার। তাই আমরা আন্দোলনে নেমেছি।
নেপালের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী পুর্না বাহাদুর বলেছেন, শিক্ষকরা তাদের দাবি না জানিয়েই আন্দোলন শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার আন্দোলকারীদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারা দেখা করেছেন। কিন্তু কোনও সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। দুই পক্ষই শুক্রবার আলোচনায় বসার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে।