পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে: মেনন - Southeast Asia Journal

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে: মেনন

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি একটি বড় অর্জন। চুক্তির একটি বড় দিক ছিল বেসামরিকিকরণ। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে সেকানকার রাজনৈতিক অস্থিরতার দোহায় দিয়ে সেখানে এখন উল্টো সামরিকায়ন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সামরিক সমাধান নেই, রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে।

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন রাশেদ খান মেনন। বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের উদ্যোগে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলগুলোকেও যুক্ত করা যায় কিনা সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে। কেননা, আমাদের দেশের বাস্তবতায় বাম-প্রগতিশীল দলগুলোর যে শক্তি-সামর্থ্য সেটা এই আন্দোলনকে সফল করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়।

বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন যে জাতি সমূহ রয়েছে তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এখনও নেই। পাহাড় এবং সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবীর সাথে বাসদ সম্পূর্ণ একমত। আজকের মতবিনিময় সভায় উত্থাপিত মূল বক্তব্যে যেসব দাবী পেশ করা হয়েছে তার অধিকাংশ বিষয়াবলীর সাথে বাসদ একমত।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, জনসংহতি সমিতি কেবল আঞ্চলিক দল হিসেবে নয়, জাতীয় পর্যায়েও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে এবং এক্ষেত্রে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। উপজাতিদের মধ্যকার ঐক্য-সংহতি জোরদার করার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। ৭২ এর সংবিধানের কিছু অসম্পূর্ণতা থাকলেও সেই সংবিধানের আলোকে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।

এস এম এ সবুর বলেন, পাহাড় বা সমতল অঞ্চলে বসবাসরত উপজাতিদের আজকের যে সমস্যা তার মূল উৎপত্তিস্থল কিন্তু সংবিধান। সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি না থাকায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। উপনিবেশিক আমলে প্রবর্থিত আইন এবং বিধিবিধান অনুযায়ীও পার্বত্য অঞ্চল একটি বিশেষ অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। সেখানে বাইরের কেউ বসতি করতে পারবে না এমন ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু আজকে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন দেশের নির্বাচিত সরকারগুলো সে বিশেষ শাসনব্যবস্থা স্বীকৃতি দিতে পারছে না। যে কোন গণতান্ত্রিক দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, উপজাতি, নারী অধিকার এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গৃহিত হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা দেখা যায় না।

তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই তো শান্তিচুক্তি করা হয়েছিল। এখন, চুক্তি বাস্তবায়িত না হলে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ যে নতুন করে অস্ত্র হাতে তুলে নেবে না তার নিশ্চয়তা তো দেওয়া যায় না।

বাংলাদেশ জাসদ এর সাংগঠনিক সম্পাদক মুকসেদুর রহমান লাভু বলেন, বাংলাদেশ জাসদ জন্মলগ্ন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলন এবং িউপজাতিদের অধিকারের প্রশ্নে বরাবরই সোচ্চার ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা জাসদের অন্যতম একটি মূল দাবি। আগামী দিনেও জাসদ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন এবং আদিবাসীদের ন্যায্য আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে যাবে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়ক অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক সব দলের প্রতি পাঁচটি দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। সেগুলো হলো, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী–সম্পর্কিত নীতি ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দাবি গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত করা; পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি আন্দোলনের পক্ষে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ঘোষণা করা; রাজনৈতিক দল ও সহযোগী সংগঠনে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিষয়ে মুখপাত্র ও সম্পাদকীয় পদ তৈরি করা এবং জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় সরকার পরিষদের সব স্তরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দলীয় মনোনয়ন দেওয়া।