পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬ সশস্ত্র গ্রুপের চাঁদাবাজিতে অসহায় মানুষ - Southeast Asia Journal

পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬ সশস্ত্র গ্রুপের চাঁদাবাজিতে অসহায় মানুষ

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ছয় সশস্ত্র গ্রুপের চাঁদাবাজিতে অসহায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জেলার প্রায় ১৯ লাখ মানুষ। প্রতিবছর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চারশো কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে এসব গ্রুপের বিরুদ্ধে। বছরের পর বছর সশস্ত্র গ্রুপগুলো বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে গেলেও অভিযোগ না পাওয়ার অজুহাতে অনেকটা নির্বিকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে একদিকে যেমন চাঁদাবাজি ঘিরে হচ্ছে প্রাণহানি, তেমনি বাড়ছে জীবনযাত্রার খরচ ও উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়।

সবুজ পাহাড়, বিস্তীর্ণ হ্রদ আর নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা–অপার সৌন্দর্যের এই পাহাড়ে কতোটা ভালো আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা? এ প্রশ্নের উত্তরে–মিশে আছে এক গভীর আতঙ্ক। কারণ, দিনের পর দিন এখানে চলছে এক নীরব চাঁদাবাজি। জুমের ফসল, ফলমূল কিংবা হস্তশিল্পের ব্যবসা, পরিবহন থেকে ঠিকাদারি অথবা অবকাঠামো নির্মাণ–সবকিছুতেই চাঁদা না দিলে নিস্তার নেই কারও।

চাঁদাবাজির স্বীকার এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘বলা হয় পরিবারপ্রতি ১০০ টাকা করে তুলে দিতে দাও, আমাদের চাঁদা দিতেই হবে। ভয়ে তো সবাইকেই দিতে হয়।’

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখানে আমি ব্যবসা বাণিজ্য করছি। আমাকে বলা হলো, তুমি একটু হেল্প করো। এরকম ৫ হাজার, ১০ হাজার, ২০ হাজার, ১ লাখ এরকম দাবি করে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানাচ্ছে, ৩ পার্বত্য জেলায় টোকেনের মাধ্যমে বছরে প্রায় চারশো কোটি টাকা চাঁদা তোলে অন্তত ৬টি সশস্ত্র গোষ্ঠী। চাঁদাবাজি থেকে বাদ পড়ে না সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও। তবে এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘শুধু পার্বত্য অঞ্চলকে দেখা হয় যে কোটি কোটি টাকা এখানে চাঁদাবাজি হচ্ছে। কিন্তু আমি যদি বলি যে পেপারে দেখেছি, শুধু গুলিস্তানেই নাকি প্রতিদিন তিন কোটি টাকা চাঁদা ওঠে। তাহলে এখানে কয় টাকা ওঠে।’

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘আঞ্চলিক দলগুলো অস্বীকার করে যে তারা চাঁদাবাজি করে। তাহলে কারা করে? তোমরা যদি জনগনের রাজনীতি করে থাকো তোমাদের অবস্থান হলো ইনটেয়ার এরিয়া, যেখানের বেশিরভাগই হয়তো প্রশাসনের নাগালের বাহিরে।’

চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করছে না প্রশাসনও। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কেউ অভিযোগ না করায় ব্যবস্থা নেয়া কঠিন, বলছে পুলিশ।

রাঙামাটির পুলিশ সুপার (এসপি) মীর আবু তৌহিদ বলেন, ‘চাঁদাবাজি নিয়ে এখানে একটা বড় অভিযোগ আছে। আমাদের পুলিশ রেকর্ডে গত জানুয়ারি থেকে মাত্র চারটি ঘটনার কথা আছে। অপহরণের ঘটনা হলো ৪টা।’

পাহাড়ে নির্বিঘ্নে চাঁদাবাজি করতে বিভিন্ন এলাকার দখল নিয়ে প্রায়ই সংঘাতে জড়াচ্ছে সশস্ত্র গ্রুপগুলো। আবার প্রতিটি গ্রুপের ভেতরে চাঁদার টাকা নিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন সংঘাত।