মাতৃভূমি রক্ষা করা আমাদের প্রধান কর্তব্য: সেনাবাহিনী প্রধান
নিউজ ডেস্ক
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে সবকিছু করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি : স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন সেনাবাহিনী প্রধান।
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে তারা সবকিছু করছেন।
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশে-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, তারা সুযোগ গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করেন।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘এটি অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে সরকারের সব সংস্থাই দেশের স্বার্থের জন্য কাজ করে। সুযোগ খুঁজে বের করা এবং সহায়ক পরিবেশে কাজ করা হচ্ছে সবচেয়ে ভালো বিষয়। একা একা সফলতা অর্জন করা অসম্ভব। কীভাবে সবার সঙ্গে সহযোগিতা করা যায়, সেটি হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।’
সরকারি কাজ সমন্বয়ের জন্য একটি সংস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক বিষয় আছে যেটি আমরা শুরু করেছিলাম, কিন্তু শেষ করতে পারিনি। কারণ পরবর্তীতে সেটি আমাদের হাতে থাকেনি। যখনই আমি ব্যবসা খাতের জন্য একটি সম্ভাবনা খুঁজে বের করলাম, সেটি পরবর্তীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চলে যায়। কাজেই এখানে যে প্রস্তাব এসেছে সেটি আমি সমর্থন করি এবং মনে করি একটি সংস্থা দরকার যেটি সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করবে যার মাধ্যমে যেটি অর্জন করা হয়েছে সেটি হারিয়ে যাবে না এবং এর ভবিষ্যৎ কার্যক্রম ঠিক করবে।’
নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘অভিপ্রায় হঠাৎ করে বদলে যেতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা হঠাৎ করে বদলায় না। আজ একজন বন্ধু আছে, কিন্তু কাল সে বন্ধু নাও থাকতে পারে। জাতীয় স্বার্থ ও মাতৃভূমি সুরক্ষার জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে। পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র—সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আর সামরিক বাহিনী পররাষ্ট্রনীতির উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সবকিছু করছে।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ‘আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়, কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই আছি।’
সামরিক বাহিনীর মূল কাজ হচ্ছে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং আমরা এটি কখনও ভুলি না। আমরা সবসময় এটির জন্য তৈরি, তিনি উল্লেখ করেন।
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন তারা দেশেই তৈরি করেছেন যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো, তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তাও জানে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হব না।’
একই সঙ্গে জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনো ভুলে যান না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না মন্তব্য করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু নাও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেনেন্টে জেনারেল ওয়াকার উজ্জামান বলেন, ‘অনেকের হয়তো প্রতিরক্ষা কূটনীতি নিয়ে ভুল ধারণা আছে। কিন্তু আমাদের কূটনীতিকরা এর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি খুব ভালো মতো বোঝেন।’ আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার থাকা অবস্থায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক কূটনীতিক আমার অফিসে আসতেন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন।
বিসের চেয়ারম্যান এফএম গওসুল আজম সরকার বলেন, বৃহৎ পররাষ্ট্রনীতির পরিসরে প্রতিরক্ষা কূটনীতি কাজ করে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।