নারীদের জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করছে মিয়ানমার জান্তা
 
                 
নিউজ ডেস্ক
মিয়ানমারে পুরুষদের পর এবার নারীদের সেনাবাহিনীতে জোরপূর্বক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। সেই লক্ষ্যে আইয়ারওয়াদি ও বাগো অঞ্চলে নারীদের তালিকা প্রস্তুত শুরু করেছেন সেনা কর্মকর্তারা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মিয়ানমার নাউ-এর এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
আইয়ারওয়াদি ও বাগো অঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় এরই মধ্যে অন্তত তিনবার নারীদের তালিকা প্রস্তুত ও জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছে। এরপর অন্যান্য এলাকাতেও শুরু হয়েছে।
স্থানীয় অধিবাসীদের বরাতে মিয়ানমার নাউ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তানিনথারি ও বাগো অঞ্চলে সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক চাকরির জন্য যোগ্য নারীদের তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন সামরিক পরিষদের প্রশাসকরা।
তানিনথারি অঞ্চলের মায়েক এলাকার একজন বাসিন্দা দাবি করেছেন, জান্তা-নিযুক্ত প্রশাসকরা মায়েক ও কাওথাউং শহরে স্থানীয় নারীদের তালিকা তৈরি করছেন। ওই বাসিন্দা আরও বলেন, তারা শুধুমাত্র নাম সংগ্রহ করছে। কিন্তু কম বয়সীরা এরই মধ্যে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
মায়েকের ওই বাসিন্দা জানান, সেনাবাহিনীতে জোরপূর্বক নিয়োগের ভয়ে মায়েকের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এরই মধ্যেই থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছে।
বাগো অঞ্চলের ইয়েদাশে টাউনশিপে স্থানীয় জান্তা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ আছে এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, টাউনশিপ-পর্যায়ের কর্মকর্তারা সেনাবহিনীতে নিয়োগের জন্য যোগ্য নারীদের নাম তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাখাইন রাজ্যে জোর করে রোহিঙ্গা পুরুষদের সেনাবাহিনীতে ঢোকাচ্ছে জান্তা সরকার। অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে যেসব রোহিঙ্গা শিবিরে থাকতেন, তাদেরই সেনাবাহিনীতে নেয়া হচ্ছে। ওই রাজ্যের অধিকারকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এসব রোহিঙ্গাকে সেনাবাহিনীতে নিয়ে মূলত ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগের আইন প্রয়োগ করা হয়। নতুন আইন বলবৎ করার পর থেকেই সামরিক বাহিনী বুথিডং, মংডু ও সিতওয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের নেতা, স্থানীয় প্রতিনিধি এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু শিবিরে গিয়ে সেনাবাহিনীতে সদস্য নিয়োগের জন্য চাপ দিতে থাকে।
সেনাবাহিনীতে নেয়া যাবে-এমন ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মানুষের তালিকা চাওয়া হয়। এরপর শুরু হয় জোরপূর্বক নিয়োগ। চলতি বছরের এপ্রিলে এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, ফেব্রুয়ারি থেকে রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে অপহরণ ও জোরপূর্বক নিয়োগ দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
এক বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, রাতে অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের তুলে নেয়া এবং নাগরিকত্বের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। সেই সঙ্গে হুমকি দিয়ে গ্রেফতার ও অপহরণের পর মারধর করা হয় তাদের। মোতায়েনের আগে তাদের দুই সপ্তাহের একটা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, যা প্রতিবেদনে ‘অবমাননাকর’ বলে জানানো হয়েছে।
জোরপূর্বক নিয়োগ করা এসব রোহিঙ্গা সেনার মধ্যে অনেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থেকে মারা গেছেন। গত বছরের (২০২৩) অক্টোবর-নভেম্বর থেকে মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে তীব্র হামলা চালিয়ে আসছে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের একটি জোট।
মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) ও আরাকান আর্মি (এএ) নিয়ে গঠিত এই ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। গোষ্ঠীটির জান্তাবিরোধী অপারেশন ১০২৭ শুরুর পর এখন পর্যন্ত বহু এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে মিয়ানমার জান্তা।
