বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় নৌকা ডুবে ৯ রোহিঙ্গার মৃত্যু
 
                 
নিউজ ডেস্ক
কক্সবাজারের টেকনাফে বঙ্গোপসাগরে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকা ডুবে শিশুসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ২২ জন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধের মুখে পালিয়ে আসার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাবিরছড়া ও রাজারছড়া পয়েন্ট এলাকার সাগরে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুর ১২টার পরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের মধ্যে আট জন শিশু-কিশোর ও নারী। একজন পুরুষর রয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে দুই জনকে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গনি বলেন, সাগরে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাডুবির ঘটনায় জেলেরা ৯ জনের লাশ উদ্ধার করেছে। যেহেতু বাংলাদেশে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি চলছে। তাই আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কথা বলে লাশগুলোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
এ বিষয়ে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুর রশিদ বলেন, মিয়ানমার থেকে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে আসার সময় টেকনাফে সাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্যাম্পে থাকা স্বজনদের কাছে নিহতদের লাশগুলো হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে। ডুবে যাওয়া নৌকায় ৩১ রোহিঙ্গা ছিল বলে জানা গেছে।
স্থানীয় এক জেলে বলেন, হাবির ছড়া ঘাটের শরীফ মাঝির নৌকায় করে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা পারাপারের সময় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া মোহাম্মদ নাজির, নুর আলম ওরফে নুরু মাঝি, মোহাম্মদ হোসেন, কবিরের নৌকা মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা পারাপার করে আসছে। এখনও রোহিঙ্গা বোঝাই কয়েকটি নৌকা সাগরে ভাসছে।
নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার রোহিঙ্গা নারী তবেদিলা বেগম বলেন, মিয়ানমারের ফয়েজি পাড়া ও আলী পাড়ায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধে বোমা হামলা হয়েছে। এতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তাই আমরা প্রাণে বাঁচতে টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি।
তিনি বলেন, নৌকায় আমার দুই মেয়েসহ চার জন সদস্য ছিলাম। ছোট মেয়ে এবং এক নাতনির লাশ পাওয়া গেছে। বাকিদের কোন খোঁজ মেলেনি এখনও। আমরা এই নৌকায় ৩১ জন যাত্রী ছিলাম। যারা গুলির মুখে পড়ে এখানে পালিয়ে আসতে রওনা করেছিলাম মিয়ানমার থেকে। আমাদের মতো অনেকে ওপার থেকে এপারে পালিয়ে আসছে।
মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা দিনরাত নাফনদ ও সীমান্ত সড়কে টহল বৃদ্ধি করেছে। সেটি চলমান এবং যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সবসময় প্রস্তুত সীমান্তরক্ষী বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, সাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় ৯ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধারের খবর শুনেছি। এ বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। বাংলাদেশে এই পরিস্থিতিতে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সীমান্তে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও বর্ডার গার্ড বিজিবি সর্তক অবস্থানে রয়েছে।
সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পারাপার ঠেকাতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এখনও মিয়ানমারে যুদ্ধ চলছে। তবে আমরা সীমান্তে সর্তক অবস্থায় রয়েছি।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
