আবারও উত্তপ্ত রাখাইন, টেকনাফে রোহিঙ্গা প্রবেশের ঢল
নিউজ ডেস্ক
কক্সবাজারের টেকনাফে বাংলাদেশের অংশে নাফ নদীতে কড়া নজরদারি ও পাহারা থাকার পরেও মিয়ানমারে জান্তাবাহিনী এবং সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চলমান সংঘাতে রোহিঙ্গাদের ঢল আবার অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড কার্যত অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারছে না।
বিজিবি ও কোস্টগার্ড কর্মকর্তাদের দাবি, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা সামান্যই। রোহিঙ্গা বোঝাই অনেক নৌকাকে অনুপ্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং অনেক রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করা হয়েছে।
প্রাণে বাঁচতে গতকাল রাতে ২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। আরও হাজার হাজার বেশি রোহিঙ্গা সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে পালিয়ে আসার পথে দুদেশের মধ্যকার সীমান্ত নির্ধারণকারী নাফ নদীতে কয়েকটি নৌকা ডুবির ঘটনায় ১০-১৫ প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এ পর্যন্ত নাফ নদী থেকে ১৯ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ থানার ওসি ওসমান গণি।
শাহপরীরদ্বীপ বিওপির কোম্পানি কমান্ডার আব্দুর রহমান বাহার বলেন, গতকাল রাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে, কিন্তু তাদের আটক করা হয়েছে। এ সংখ্যা বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
এদিকে সোমবার রাতে দুটি নৌকা নিয়ে ২০০ শতাধিক জনের ওপরে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের অনেকের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা এখন উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে।
টেকনাফ সাবরাং খুরের মুখ বিজিবি অস্থায়ী ক্যাম্পের কর্মকর্তা বলেন, আমরা ২১ জন রোহিঙ্গা আটক করেছি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় তাদের পুশব্যাক করা হবে।
সাবরাং নয়া বিওপির বিজিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, গভীর রাতে ২০০ শতাধিকের ওপরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে টেকনাফে।
আজ রাতে অনুপ্রবেশকারী হাছান মাহমুদ বলেন, আরকান আর্মি ৩০টি গ্রামে তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা বেশি রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য এখন রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করতে নতুন নতুন এলাকা বেছে নিচ্ছে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের এলাকায় এসে যুদ্ধ করলে তখন আমাদের গ্রামকে লক্ষ্য করে মিয়ানমার বাহিনী গুলি বর্ষণ করে। গত কয়েক দিন ধরে ৩ শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এতেই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। নারী, শিশু, বৃদ্ধ নিহত হচ্ছে।
মরিয়ম আক্তার নামের এক নারী জানান, মংডু সুএজাতে আমাদের গ্রামে মগবাগি ঢুকে আছে। আমরা বেশি কষ্টে ছিলাম। আমাদের নির্যাতন করেছে। আমরা ঘরবাড়ি পেলে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। আমাদের এলাকার দুজন মানুষ তার ঘর দেখতে গেছে দেখে আরকান আর্মি তাকে জবাই করে হত্যা করেছে। আমরা আসার আগেও হত্যা করেছে তিনজনকে। তাই ছেলেমেয়েকে নিয়ে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে চুরি করে চলে আসি। পথে তার স্বামীকে গুলি করে আরকান বাহিনী। টাকা ও গয়না যা ছিল সব লুট করে নিয়েছে তারা।
চট্টগ্রাম কোস্টগার্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি বলেন, আমাদের সব সময় চেষ্টা অব্যাহত আছে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে। অনেক রোহিঙ্গা পুশব্যাক করা হয়েছে ইতোমধ্যে।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারিতে আছে এবং ফাঁকফোকর দিয়ে দালালের মাধ্যমে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। সেসব দালালদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন চালায়। সে সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। আগে আসা রোহিঙ্গাসহ ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ঠাঁই হয় উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।