সন্ত্রাস দমনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে সরকারের নানা পদক্ষেপ
 
নিউজ ডেস্ক
হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, মানবপাচার এবং ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে মায়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। সূর্য
ডোবার সাথে সাথেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো হয়ে উঠে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। গত দুই বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন রোহিঙ্গা। এ সময়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন ৩২ জন রোহিঙ্গা। রাতে কিংবা দিনের যেকোন সময় ক্যাম্প থেকে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গাদের। পরে চাহিদা মতো মুক্তিপণ না পেলে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হচ্ছে। ইয়াবা, মানবপাচারে যুক্ত থাকার পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গা নারীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটায়।
২০১৬ সালের ১৩ মে টেকনাফের মুছনী রোহিঙ্গা শিবিরের পাশে শালবন আনসার ক্যাম্পে হামলা চালায় হাকিম বাহিনী নামের একটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন। এ সময় আনসার কমান্ডার আলী হোসেন তাদের গুলিতে নিহত হন। তারা লুট করেছিল আনসারের ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৭ শতাধিক গুলি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা এলাকায় যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে (২৪) গুলি করে হত্যা করেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। ফারুক হ্নীলা ইউনিয়ন যুবলীগের ৯নং ওয়ার্ড সভাপতি ও জাদিমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। আবার রোববার রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ ফারুকের ভাইদের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ স্থানীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের জন্য পৃথক পুলিশ স্টেশন, পুলিশ ইনভেস্টিগেশন সেন্টার, ক্যাম্পজুড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। পাশাপাশি জনবল বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে কক্সবাজার জেলা পুলিশের। সংশ্লিষ্টরা জানান, রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে এই মুহূর্তে কেবল বিশেষ দুটি ইউনিটেরই প্রয়োজন ১ হাজার ৬০০ জনবল। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত আছে মাত্র ৪০০ জনবল। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-এপিবিএনের একটি ইউনিটের মাধ্যমে ওই সদস্যরা কাজ করছে। ওই ইউনিটের নাম এপিবিএন-১৪। এই জনবল দিয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাদের এসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দমনে তাই সরকারের পক্ষ থেকে শিগগিরই সেখানে গঠন করা হচ্ছে এপিবিএনের আরও একটি ইউনিট। সেটির নাম হবে এপিবিএন-১৬। এর জন্য চাওয়া হয়েছে নতুন ৮০০ জনবল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল ইসলাম মঙ্গলবার (২৭ আগষ্ট) বিকালে টেলিফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সব উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। পৃথক ব্যাটালিয়নের বিষয়টি এখন সচিব কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে এপিবিএনের নতুন ইউনিট সেখানে কাজ শুরু করবে।
পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ২০১৭ সালে যখন ব্যাপক হারে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে আসা শুরু করে তখন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে জনবল সেখানে দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করি। পরে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন জনবল সৃষ্টির উদ্যোগ নিই। সে অনুযায়ী সেখানে একটি এপিবিএনের ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়।
অতিরিক্ত ডিআইজি আক্তারুজ্জামান বলেন, কেবল এপিবিএনই নয়। জেলা পুলিশের জন্য নতুন করে এক হাজার জনবল চেয়ে শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয়া হবে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের আইজি অবগত আছেন। এরই মধ্যে কক্সবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি প্রস্তাব পুলিশ সদর দফতরে এসেছে। এ প্রস্তাব পাস হলে রোহিঙ্গা মনিটরিং করা পুলিশের জন্য সহজ হবে। তাছাড়া বিভিন্ন মামলা তদন্তের জন্য সুবিধা হবে। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেখানে পুলিশের জনবলের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আড়াই থেকে তিন ফুট ইটের গাঁথুনির ওপর এ প্রাচীর নির্মাণ হবে। এর আগে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তায় চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুশাসন দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, মাদক ও মানবপাচারসহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গত ২ বছরে ৪৭১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মাদক মামলা ২০৮, হত্যা মামলা ৪৩ ও নারী সংক্রান্ত মামলা ৩১টি। এসব মামলায় আসামি ১ হাজার ৮৮ জন রোহিঙ্গা।
