অচেনা এক রাখালকে নিয়ে এনসিটিবি-শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অস্বস্তি
![]()
নিউজ ডেস্ক
গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জনের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গঠিত হয় কমিটি। সেই কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ পান রাখাল রাহা। মূলত তার নাম সাজ্জাদুর রহমান। নাম নিয়ে বিভ্রান্তির জন্ম দেওয়া এই লেখক ও গবেষক পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জনে নানা বিতর্কের জন্ম দেন। ফলে তাকে নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ের সংশোধন ও পরিমার্জন করার জন্য অচেনা এই ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন সদ্যবিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ‘সরাসরি তার ছাত্র ছিলেন’— এমন দাবি করে নিয়োগের পর এনসিটিবিতে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। জন্ম দেন বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডের। নতুন বছরের পাঠ্যবইয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে উপস্থাপন করা, জাতীয় পতাকাকে বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় নিয়ে যাওয়া, পাঠ্যবইয়ে আওয়ামী লীগকে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে উল্লেখ করা এবং সেখানে পতিত সরকারের নানা গুণকীর্তন করায় বেশ অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয় এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের।
সর্বশেষ ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন। মামলা ও শিক্ষা উপদেষ্টার পদ রদবদল হওয়ায় অবশেষে মুঠোফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান রাখাল রাহা।

নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ের সংশোধন ও পরিমার্জন করার জন্য অচেনা এই ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন সদ্যবিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ‘সরাসরি তার ছাত্র ছিলেন’— এমন দাবি করে নিয়োগের পর এনসিটিবিতে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। জন্ম দেন বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডের। নতুন বছরের পাঠ্যবইয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে উপস্থাপন করা, জাতীয় পতাকাকে বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় নিয়ে যাওয়া, পাঠ্যবইয়ে আওয়ামী লীগকে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে উল্লেখ করা এবং সেখানে পতিত সরকারের নানা গুণকীর্তন করায় বেশ অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয় এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলা না নেওয়ার জন্য আইন উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ রয়েছে — সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অভিযোগ ওঠার পর আসিফ নজরুল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে জানিয়েছেন, ‘এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা খবর। সাইবার ট্রাইব্যুনালে কোনো মামলা গ্রহণ বা না গ্রহণ করার বিষয়ে আমি বা আমার পক্ষ থেকে কেউ ট্রাইব্যুনালে যোগাযোগ করেনি।’
অন্যদিকে এনসিটিবির একটি সূত্র বলছে, নানা বিতর্কের জন্ম দেওয়া রাখাল রাহা জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে এনসিটিবিতে আসা বন্ধ করে দেন। তার সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করতে পারছে না সংস্থাটি। তবে ভিন্ন একটি সংস্থার তথ্যমতে, তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। পশ্চিমা একটি দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার জন্য ধর্মীয় বিষয়ে উসকানি ছড়িয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তিনি অনেক দিন ধরে এনসিটিবিতে আসছেন না। কেন আসছেন না, উনিই ভালো বলতে পারবেন।’ আত্মগোপনে যাওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলেও জানান চেয়ারম্যান। তবে বলেন, ‘তার (রাখাল রাহা) সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত।’

কে এই রাখাল রাহা
আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বশেষ কারিকুলাম বাতিলসহ আট দফা দাবিতে অভিভাবকদের নিয়ে ‘সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন’-এর ব্যানারে সারা দেশে আন্দোলন কর্মসূচি পরিচালিত হয়। সেই কর্মসূচির সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন রাখাল রাহা। ২০২৩ সালে গড়ে ওঠা কারিকুলামবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। এ ছাড়া শিক্ষা ও শিশুরক্ষা আন্দোলন- ‘শিশির’ নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক তিনি।
অভিভাবকরা জানান, কারিকুলামবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, অর্থাৎ ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চারজন অভিভাবককে গ্রেপ্তার করে তৎকালীন প্রশাসন। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে গা-ঢাকা দেন রাখাল রাহা। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসীন হলে সেই আন্দোলনের ‘পথিকৃৎ’ দাবি করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির সদস্যপদ বাগিয়ে নেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে মামলাগুলো প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেননি রাখাল রাহা। এ নিয়ে তার সঙ্গে আন্দোলনকারীদের মনোমালিন্য চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।
রাখাল রাহার প্রকৃত নাম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তার প্রকৃত নাম সাজ্জাদুর রহমান। কিন্তু তিনি নিজেকে ‘রাখাল রাহা’ বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। এ ক্ষেত্রে তার ধর্মীয় পরিচয় নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে তার নাম ও পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা লেখেন, ‘আমরা ভেবেই নিয়েছি আপনি একজন হিন্দুধর্মের অনুসারী। নিজের নাম গোপন করে কোন এজেন্সির হয়ে কাজ করছেন? কোন দেশের স্বার্থ হাসিল করছেন? আপনার নাম সাজ্জাদ থেকে রাখাল রাহা হলো কেন?’

যেভাবে হয়ে ওঠেন এনসিটিবির সর্বেসর্বা
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের জন্য সমন্বয় কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রাখাল রাহাকে সেখানে অন্যতম সমন্বয়ক করা হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর নানা বিতর্কের জন্ম দেন তিনি। প্রাথমিকের সব শ্রেণির বাংলা বইয়ে জাতীয় পতাকা ও সংগীত পেছনের পৃষ্ঠায় নেওয়া, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে উল্লেখ লেখা এবং শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর তারিখ ভুলভাবে উপস্থাপন ছিল উল্লেখযোগ্য।
দশম শ্রেণির বইয়ে আওয়ামী লীগকে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করা, বিএনপিকে সামরিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত দল বলা এবং বিভিন্ন বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা ও তার দলের (আওয়ামী লীগ) গুণকীর্তন; প্রভৃতি বিষয় মূলত রাখাল রাহার হাত ধরেই পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, বিষয়ভিত্তিক বইয়ের জন্য বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ থাকলেও রাখাল রাহার হাত দিয়েই বইগুলোর সংশোধন ও পরিমার্জন হয়। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সদস্য এমনকি চেয়ারম্যানের ওপরও কৌশলে খবরদারি করতেন তিনি। প্রভাব খাটাতে ব্যবহার করেন শিক্ষা উপদেষ্টার ছাত্রপরিচয়।
জানা যায়, রাখাল রাহা বাংলার বিশেষজ্ঞ হিসেবে মনোনীত হলেও পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের কাজগুলো একাই সামাল দিতেন। এমনকি পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও গণিতের মতো পাঠ্যপুস্তকের পরিমার্জনের কাজ নিজেই করতেন। ধর্ম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মতো পাঠ্যবইয়ের সংশোধন ও পরিমার্জন তার হাত দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

অথচ তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ের জন্য মনোনীত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পরিচালক মাইনুল হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রথম একটি মিটিংয়ে ডাকা হলেও পরবর্তী কাজের বিষয়ে আমাকে আর কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। পরে আর কোনো মিটিংয়েও ডাকা হয়নি। কী কাজ হয়েছে, সেটিও জানতে পারিনি।’
এনসিটিবি সূত্র বলছে, বই পরিমার্জন করতে সর্বোচ্চ দুই মাসের মতো সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু রাখাল রাহা অন্য কাউকে এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত না করে একাই সব কাজ করতেন। পুরো কাজ সম্পন্ন করতে তার প্রায় চার মাস সময় লেগে যায়। ফলে এক থেকে দেড় মাস দেরি করে বইয়ের টেন্ডার দিতে হয়। এ কারণে ফেব্রুয়ারি মাস পার হলেও শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ে যত ভুল পাওয়া গেছে এর দায় এনসিটিবির ওপর বর্তায়। ভুল এড়ানোর জন্য তো পরিমার্জন কমিটি হলো। তারা কি এর দায় এড়াতে পারে?’
৪০০ কোটি টাকার কাগজের ব্যবসায় রাখাল রাহার হাত
চলতি বছর পাঠ্যবই ছাপায় কাগজের বাজারদরের চেয়ে টনপ্রতি ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ না কিনলে বই ছাপার ছাড়পত্র মিলত না। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ কিনতে হবে তা নির্ধারণ করে দিত এনসিটিবি। যা এর আগে কখনও হয়নি। অভিযোগ আছে, এর নেপথ্যে ছিলেন এনসিটিবির সচিব, একজন সদস্য ও সাজ্জাদুর রহমান ওরফে রাখাল রাহা। তাদের পেছনে থেকে কাজ করেছেন তানভীর নামের এক ছাত্র-সমন্বয়ক।
সর্বশেষ চীন থেকে সাড়ে আট হাজার টন কাগজ আমদানি করে এনসিটিবি। বাজারে এক লাখ ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় কাগজ পাওয়া গেলেও মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জিম্মি করে টনপ্রতি দাম নেওয়া হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা।
রাখাল রাহার প্রকৃত নাম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তার প্রকৃত নাম সাজ্জাদুর রহমান। কিন্তু তিনি নিজেকে ‘রাখাল রাহা’ বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। এ ক্ষেত্রে তার ধর্মীয় পরিচয় নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে তার নাম ও পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা লেখেন, ‘আমরা ভেবেই নিয়েছি আপনি একজন হিন্দুধর্মের অনুসারী। নিজের নাম গোপন করে কোন এজেন্সির হয়ে কাজ করছেন? কোন দেশের স্বার্থ হাসিল করছেন? আপনার নাম সাজ্জাদ থেকে রাখাল রাহা হলো কেন

এনসিটিবি জানায়, ৪০ কোটি ১৫ লাখের বেশি বই ছাপাতে এক লাখ টনের বেশি কাগজের প্রয়োজন হয়েছে। এবার শুরু থেকে রাখাল রাহা চক্রের নজর ছিল এ কাগজের প্রতি। আগের বছরগুলোতে মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলো পছন্দের পেপার মিল থেকে কাগজ কিনতে পারত। কিন্তু এবার রাখাল-গংদের নির্দিষ্ট পেপার মিলের বাইরে থেকে কাগজ কিনলে মিলত না ছাড়পত্র। ফলে বাধ্য হয়ে সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ কিনতে হয়েছে। এতে বাজারের চেয়ে কখনও ২০ হাজার, আবার কখনও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কাগজ কিনতে হয়েছে মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। এই বাড়তি টাকা প্রবেশ করেছে রাখাল রাহা-গংদের পকেটে। এভাবে শুধু কাগজ থেকে ৪০০ কোটি টাকার বেশি কমিশন খেয়েছেন তারা— অভিযোগ মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোর।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এনসিটিবি শুধু কাগজের মান ঠিক রাখার জন্য নিদিষ্ট কিছু পেপার মিল থেকে কাগজ কেনার অনুরোধ করে। প্রিন্টার্সদের জিম্মি করা হয়েছে, বিষয়টি সত্য নয়। কাগজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কেউ কমিশন বাণিজ্য করেছে কি না, আমার জানা নেই।’
তবে একাধিক সূত্র বলছে, অর্থ অপচয়ের বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্তে নেমেছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। চলতি বছর প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বেশি খরচ করেও সময়মতো বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। তাহলে এনসিটিবি নিয়ন্ত্রণ করছে কারা— প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রাখাল রাহার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। পরে হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জার নক দিলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি

আত্মগোপনে রাখাল রাহা
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এনসিটিবির পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির অন্যতম সদস্য রাখাল রাহা হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এরপর ‘তৌহিদি জনতা’ নামের একটি সংগঠন এনসিটিবি ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানায়। ইসলামী দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের মুখে ২১ ফেব্রুয়ারি ভুল স্বীকার করে সেই পোস্ট সরিয়ে ফেলেন তিনি। পরে লেখেন, ‘যা কিছু হয়েছে, ঘটেছে— এটা আমার ভুল।’
এনসিটিবি থেকে তার অপসারণের দাবিতে বিবৃতি দেন ১৫০ আলেম। তাদের অভিযোগ, রাখাল রাহার ফেসবুক পোস্ট দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ওপর আঘাত। এদিকে, ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয় কবি সোহেল হাসান গালিবকে। এরপর আত্মগোপনে চলে যান রাখাল রাহা।
এবার রাখাল-গংদের নির্দিষ্ট পেপার মিলের বাইরে থেকে কাগজ কিনলে মিলত না ছাড়পত্র। ফলে বাধ্য হয়ে সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ কিনতে হয়েছে। এতে বাজারের চেয়ে কখনও ২০ হাজার, আবার কখনও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কাগজ কিনতে হয়েছে মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। এই বাড়তি টাকা প্রবেশ করেছে রাখাল রাহা-গংদের পকেটে। এভাবে শুধু কাগজ থেকে ৪০০ কোটি টাকার বেশি কমিশন খেয়েছেন তারা— অভিযোগ মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোর
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রাখাল রাহার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। পরে হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জার নক দিলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
তবে, এর আগে একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাখাল রাহা দাবি করেন, ‘আমি পাঠ্যবইয়ের সংশোধন ও পরিমার্জনের দায়িত্বে থাকলেও আমার একক কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না।’ গ্রাফিতিতে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার এবং সেখানে চূড়ান্ত স্বাক্ষরে নিজের নাম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে কেউ না কেউ দায়িত্বে থাকবেন, সেটাই স্বাভাবিক। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছি।’
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অধিকার কারও নেই। তিনি যা করেছেন, সেটি তার ব্যক্তিগত। এখানে এনসিটিবির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’
সূত্র: ঢাকা পোষ্ট।