সীমান্তের ওপারে রাখাইনের আকাশে দেখা গেল ধোঁয়ার কুণ্ডলী

সীমান্তের ওপারে রাখাইনের আকাশে দেখা গেল ধোঁয়ার কুণ্ডলী

সীমান্তের ওপারে রাখাইনের আকাশে দেখা গেল ধোঁয়ার কুণ্ডলী
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের আকাশে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে। রবিবার (০৪ মে) বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। টেকনাফ সীমান্তের এপারে দাঁড়িয়ে ওপারের মংডুর বসতিগুলোতে আগুনের কুণ্ডলী উড়তে দেখেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নাগরিকরা।

টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা বলছেন, রাখাইনের লোকজনের ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন অবকাঠামোতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে তারা। সম্প্রতি মিয়ানমারে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানবিক করিডর নিয়ে আলোচনায় মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে মূলত রোহিঙ্গাদের মাঝে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে আরাকান আর্মি। যাতে ফেরত না যায়। এ ছাড়া সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে নতুন করে আরও বহু রোহিঙ্গা নাগরিক রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।

টেকনাফ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা সাদেক হোসেন ফাহিম বলেন, ‘রবিবার বিকালে শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে গিয়েছিলাম। হঠাৎ জেটির ওপারে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের আকাশে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখেছি। একসঙ্গে ওপারের তিন-চারটি স্থান থেকে আগুনের কুণ্ডলী আকাশে উড়তে দেখা যায়। এ অবস্থায় ফের রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন আছি আমরা।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা বলছেন, রবিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাফ নদের ওপারে মংডু টাউনশিপের আশপাশের গ্রাম সুধাপাড়া, মংনিপাড়া, সিকদারপাড়া, উকিলপাড়া, পতেংজা পাড়া ও হাইরি পাড়ায় আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে। এ ছাড়া শনিবার বিকালেও এসব এলাকায় আগুনের ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। রোহিঙ্গাদের রেখে আসা বাড়িঘরগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে আরাকান আর্মি। গত আগস্ট মাসে এসব পাড়া দখলে নিয়েছিল তারা।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মো. জুবায়ের বলেন, ‘রাখাইনে এখনও রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চলছে। বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে আরাকান আর্মি। পতেংজা পাড়া, মংনিপাড়া ও হাইরি পাড়ায় রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। সেখানে থাকা রোহিঙ্গারা এপারে পালিয়ে আসছেন।’

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, ১১ মাসের বেশি সময় ধরে লড়াই-সংঘাতের পর গত বছরের ৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের ৮০-৯০ শতাংশ এলাকা (২৭০ কিলোমিটার) নিয়ন্ত্রণে নেয় আরাকান আর্মি। এরপর রাজ্যের রাজধানী সিথুয়ে (আকিয়াব) দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে আরকান আর্মি। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি দুই মাস রাখাইনে শান্ত অবস্থা বিরাজ করলেও মার্চের শুরু থেকে আবার সংঘাতে জড়ায় দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী।

এ অবস্থায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানালেন টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মো. আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‌‘সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। নতুন করে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়ার বিষয়টি স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনেছি। তবে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নতুন করে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে জানিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদ ও সীমান্তে কঠোর অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের কাউকে শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করা হবে না।

আরআরআরসি কার্যালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এরপর ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে আরও এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।