গাইবান্ধায় সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সংবিধানবিরোধী ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের প্রচার
 
                 
নিউজ ডেস্ক
‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত জনগোষ্ঠীর কিছু সদস্য নিজেদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে পরিচয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন। শনিবার (২৪ মে) গাইবান্ধায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এমন দাবি ওঠায় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা ও সংবিধান মানার দায়বদ্ধতা নিয়ে।
গাইবান্ধা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘আদিবাসী-বাঙালি যুব মিলনমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব’-এ সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর যুব নারী-পুরুষরা বলেন, আদিবাসী হিসেবে তাদের পরিচয় স্বীকার না করায় তারা সাংস্কৃতিক ও অস্তিত্বগত হুমকিতে পড়েছেন। বক্তারা দাবি করেন, জনসাধারণের মাঝে আদিবাসী ও দলিত বিষয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে এবং বাঙালি জনগোষ্ঠীর উচিত আরও সংবেদনশীল হওয়া।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইয়ুথ লিডার ললিতা কিস্কু। স্বাগত বক্তব্য দেন এনজিও অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মাহফুজার রহমান, উদীচী জেলা সভাপতি অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, গাইবান্ধা প্রেসক্লাব সভাপতি অমিতাভ দাশ হিমুনসহ অনেকে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিরিন আক্তার।
এর আগে সকাল ১০টায় ঐতিহ্যবাহী পোশাকে তিন শতাধিক সাঁওতাল ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রায় ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও অধিকার রক্ষার দাবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন প্রদর্শিত হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের সংবিধানে ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার প্রত্যাখ্যান করে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ পরিভাষা গ্রহণ করা হয়। সংবিধানের এই নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি নিজেদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে উপস্থাপন করে, তবে তা রাষ্ট্রবিরোধী পরিচয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টার শামিল হতে পারে। তাই রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বা সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সংবিধানবিরোধী পরিচয়ের প্রচার রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, একক জাতিসত্তা এবং সংবিধানিক কাঠামোর প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়। ভবিষ্যতে এমন আয়োজনে সরকারি অংশগ্রহণের আগে জাতীয় স্বার্থ ও সাংবিধানিক নির্দেশনার প্রতি কঠোর দৃষ্টি রাখা জরুরি।
অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি এবং এ ধরনের বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ না করায় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সংবিধানের প্রতি আনুগত্য থাকা সত্ত্বেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেখানে থেকে নীরব দর্শক হয়ে থাকা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সচেতন মহল বলছে, এমন স্পর্শকাতর ইস্যুতে প্রশাসনের আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা জরুরি।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
