বান্দরবানে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ব্যাপক নিন্দা, প্রশ্নবিদ্ধ ‘নীরব মানবতা’
![]()
নিউজ ডেস্ক
বান্দরবানের কুহালং ইউনিয়নের বাকীছড়া বটতলী মারমা পাড়ায় ম্রো সম্প্রদায়ের এক শিশুকে ধর্ষণের নৃশংস ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। ৮ জুন ভোরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রক্তাক্ত অবস্থায় ভর্তি করা শিশুটির শারীরিক অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মেন ইয়া ম্রো (৪০), যিনি ভুক্তভোগী শিশুটিরই সম্প্রদায়ের, তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
শিশুটির মা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় দুই শিশুকে নিয়ে কাকড়া ধরতে ঝিড়িতে যান মেন ইয়া ম্রো। রাত বেশি হয়ে গেলে তিনি জানান, তারা রাতে জুমের টংঘরে অবস্থান করবেন। রাতেই সেখানে শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। চিৎকার ও রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েটি নিজ বাড়িতে ফিরে এলে ঘটনাটি প্রকাশ পায়। পরে স্থানীয়রা মিলে ভোররাতে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
বান্দরবান সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. দিলীপ চৌধুরী জানান, শিশুটির পায়ুপথ ও জরায়ুর ৯০ শতাংশ অংশ ছিঁড়ে গেছে। তিনি বলেন, “এই ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখে যে কাঁদবে না, সে মানুষ নয়। রক্তস্রাব এত বেশি ছিল যে বেঁচে থাকাটাই এখন অলৌকিক ঘটনা।”
এই নির্মম ঘটনাটি পাহাড়ে বিরাজমান জাতিগত পক্ষপাত ও মানবাধিকার চর্চার দ্বিমুখী অবস্থান নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। অনেকে বলছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি বাঙালি হতেন, তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে ব্যাপক আন্দোলন হতো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বাঙালি ধর্ষক’ হ্যাশট্যাগে ছেঁয়ে যেত, মানবাধিকার সংগঠনগুলো একযোগে প্রতিবাদে নেমে পড়ত। কিন্তু এবার, অভিযুক্ত যেহেতু পাহাড়ি—তাও একই সম্প্রদায়ের, সেখানে এসব স্বরহীন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে জাতিগত পরিচয়কে মুখ্য করে দেখার প্রবণতা পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগজনক। তারা অভিযোগ করেন, পাহাড়ি সংগঠনগুলোর অনেকেই ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এই অবস্থান ন্যায়বিচারকে ব্যাহত করছে এবং বিভাজনের বীজ বপন করছে।
সম্প্রতি, জেএসএস-এর পক্ষ থেকে আগাস্টিনা চাকমার মাধ্যমে জাতিসংঘে বাঙালি সেনা ও সাধারণ বাঙালিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে, যেখানে পাহাড়ি গোষ্ঠীগুলোর ভুক্তভোগিতা তুলে ধরা হয়। কিন্তু উপজাতি সম্প্রদায়ের ভেতর ঘটে যাওয়া নৃশংসতার ঘটনাগুলোর প্রতি অবহেলা সেই প্রতিবাদী অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা জানান, ন্যায়বিচার তখনই প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন অপরাধীর বিচার তার পরিচয় বা জাতিগত ভিত্তিতে নয়, বরং ঘটনার সত্যতা অনুযায়ী করা হয়। “একটি শিশুর উপর এমন পাশবিকতা ঘটার পরও যদি আমরা চুপ থাকি, তবে তা ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ অপরাধের পথ খুলে দেবে,” বলেন এক সিনিয়র মানবাধিকার পর্যবেক্ষক।
বর্তমানে মেন ইয়া ম্রো পলাতক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে এবং ভুক্তভোগী শিশুর চিকিৎসা ও নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এলাকাবাসী ও বিভিন্ন নাগরিক সমাজ সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “পাহাড়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হলে অপরাধের বিচার জাতি দেখে নয়, অপরাধ দেখে হতে হবে।”
তারা আরও বলেন, “উপজাতি মানেই নির্যাতিত আর বাঙালি মানেই নির্যাতনকারী—এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে না আসলে পাহাড়ে কখনোই স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।”
এই ঘটনার প্রকৃত তদন্ত, অপরাধীর দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সকল সম্প্রদায়ের সমান অধিকার ও সুবিচার নিশ্চিত করার দাবি এখন আরও জোরালোভাবে উঠে এসেছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।