একাত্ন পাহাড়ের সকল বাঙালি সংগঠন, নতুন নামে আত্নপ্রকাশ - Southeast Asia Journal

একাত্ন পাহাড়ের সকল বাঙালি সংগঠন, নতুন নামে আত্নপ্রকাশ

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ দিন ধরে নিজেদের অধিকার আদায় সহ সকল বৈষম্যে বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করা বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক বাঙালি সংগঠন এবার নিজেদের মধ্যকার অতীতের ভূল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে একই মঞ্চে উঠে এসেছেন। নিজেদের সকল সংগঠন বিলুপ্ত ঘোষণা করে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে “পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ” নামে নতুন সংগঠনের নাম ঘোষনা করা হয়েছে।

৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সভাপতি ও “পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ”র স্টিয়ারিং কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আলকাছ আল মামুন ভূইয়ার সভাপতিত্বে ও বাঘাইছড়ির সাবেক পৌর মেয়র আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় নতুন সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটির মধ্য থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন, বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবুর রহমান, সম অধিকারের সাবেক মহাসচিব মো: মনিরুজ্জামান মনির, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহবায়ক অধ্যক্ষ আবু তাহের, যুগ্ন আহবায়ক আবদুল হামিদ রানা, শেখ আহমেদ রাজু, বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুল কাইয়ুম, পার্বত্য গণ পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো: পারভেজ তালুকদার, পার্বত্য অধিকার ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএম মাসুম রানা, সাংবাদিক মো. সোলাইমান, শেখ আহমেদ রাজু, সাব্বির আহমেদ, সালমা আহমেদ মৌ, শাহাদাত ফরাজী সাকিব, হাবিবুর রহমান, লোকমান হোসেন প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আলকাছ আল মামুন ভূইয়া বলেন, “১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে স্বাধীন হয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তারই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম। সুজলা সফলা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এই জাতির জন্য স্রষ্টার দেওয়া এক শ্রেষ্ঠ উপহার। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অপরূপ সৌন্দর্যময় সবুজ পার্বত্য ভূমি নিয়ে ষড়যন্ত্র আজকের নয়। সেই ১৯৪৭ এ দেশ বিভাগের সময় থেকেই এ অঞ্চল নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। যে কারণে ৪৭ এ দেশ বিভাগের সময় যেমন পার্বত্য এলাকার কতিপয় উপজাতীয় নেতৃবৃন্দের ইন্ধনে সাধারণ জনগোষ্ঠীকে ভুল পথে পরিচালিত করা হয়েছিল, তেমনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও একই গোষ্ঠী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। আর এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ১৯৭৪ সালে এক ঠুনকো অজুহাতে শান্তিবাহিনীর ন্যায় একটি পাহাড়ি জঙ্গী সংগঠনের জন্ম হয়।”

তিনি আরো বলেন, ৮০’র দশকে এসে এই ষড়যন্ত্রকারীরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক বিভিষীকাময় অঞ্চলে পরিণত করে। মূলত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর পার্বত্যম চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি আলাদা রাষ্ট্র তৈরীর জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বিগত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বারুদের গন্ধে বিষাক্ত করে তোলা হয়েছে। এই হিংসা, হানাহানি, দ্বন্দ্ব ও সংঘাত বন্ধের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ ও কৌশল গ্রহণ করলেও স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতার কারণে সমস্যা আরো জট পাকিয়েছে। সমস্যা সমাধানে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কোন ঘাটতি কখনই ছিল না। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে বর্তমান সরকার কর্তৃক রাঙ্গামাটিতে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। কিন্তু শান্তি ও উন্নয়নে গৃহিত সরকারী সকল প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজাতীয় আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলো জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ খুনের ঘটনা অব্যাহত রেখেছে এবং চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। পক্ষান্তরে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অজুহাতে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে বিশেষ সুবিধা দেয়ার কারণে অবৈধ অস্ত্রধারীদের নির্যাতনের পাশাপাশি পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালিসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে সৃষ্টি হয়েছে বঞ্চনা ও হতাশা। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৯১ সালে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ নামে একটি সংগঠনসহ অন্যান্য বঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কর্তৃক বিভিন্ন সময় নানা সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, রাষ্টীয় অখন্ডতা বজায় রেখে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক “পার্বত্য চুক্তি” সম্পাদিত হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী শান্তিবাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও কিছু অস্ত্র জমা দিয়ে তাদের সশস্ত্র তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। শুধু তাই নয় বরং চাঁদাবাজীর টাকায় তাদের অস্ত্রের ভাণ্ডার দিন দিন আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। আর এই চাঁদাবাজীর টাকার লোভে জনসংহতি সমিতি ভেঙ্গে একের পর এক মোট চারটি উপজাতীয় আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্ম হয়েছে। যার ফলে পার্বত্য চুক্তির কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না পার্বত্যবাসী। এরই পাশাপাশি স্বার্থান্বেষী মহল উপজাতীয় জনগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান এবং দুস্কৃতিকারীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের স্বাধীন ‘জুম্মল্যান্ড’ তৈরির প্রক্রিয়া তরান্বিত করার প্রয়াস চালাচ্ছে। এ কথা আপনাদের কারো অজানা নয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি জনগোষ্ঠী একটি গুরুত্বপুর্ণ আঞ্চলিক অংশীদার এবং নাগরিক হিসেবে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা দায়বদ্ধ। আর এ দায়িত্ব পালনে তারা সকল শ্রেনীর নির্যাতিত মানুষকে সাথে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে এসব ষড়যন্ত্র অনন্তকাল ধরে চলতে দেয়া যায় না। একই সাথে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোকে সংখ্যাগরিষ্ঠ পাহাড়িদের হাতে বলির পাঠা হতে দেয়াও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সময় এসেছে পাহাড়ি-বাঙালি ভেদাভেদ ভুলে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। আর এই লক্ষ্যেই আমাদের আজকের আয়োজন।”

সাংবাদিক সম্মেলনে আলকাছ আল মামুন ভূইয়া বলেন, “আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত সংগঠনগুলো তথা পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, পার্বত্য অধিকার ফোরামসহ অন্যান্য সংগঠন এর সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম বিলুপ্ত করা হলো। সেই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি-বাঙালি সকল সম্প্রদায়ের গণমানুষকে সাথে নিয়ে এক ও অভিন্ন লক্ষ্যে “পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ” নামে নতুন একটি সংগঠনের নাম ঘোষণা করছি। এ মূল সংগঠনের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে থাকবে “পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ” ও “পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা পরিষদ”। আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানাতে চাই যে, নবগঠিত এই সংগঠনটি কোনভাবেই শুধুমাত্র বাঙালিদের সংগঠন নয়। বরং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সকল নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য এর দ্বার উন্মুক্ত থাকবে। পরিশেষে দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করছি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের স্বার্থ রক্ষায় নবগঠিত এই সংগঠনটি উপজাতি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মত চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত হবে না। আমাদের বিশ্বাস পাহাড়ের সর্বস্তরের ও সব সম্প্রদায়ের শান্তিকামী ও দেশ প্রেমিক মানুষ এই নব সংগঠনের ছায়াতলে এসে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হবে।”

পরে সংবাদ সম্মেলনে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট স্টিয়ারিং কমিটিতে খাগড়াছড়ির পৌর মেয়র রফিকুল আলম, রাঙ্গামাটি জেলা আওয়া্মীলীগের সাবেক সেক্রেটারি কাজী মুজিবুর রহমান, দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আবুল কাশেম, মানিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিনসহ অন্যান্যদের নাম ঘোষনা করা হয়।