রোহিঙ্গা গণহত্যার কথা অস্বীকার করলেন সু চি
 
                 
নিউজ ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। গত ১১ ডিসেম্বর বুধবার নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এ রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
রাখাইনে সেনা অভিযানের সময় যা ঘটেছে তা গণহত্যার সংজ্ঞার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না- সেই প্রশ্ন তুলে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি বলেন, জাতিসংঘের আদালতে গাম্বিয়ার করা মামলা ভুল দিক নির্দেশ করছে। রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করেই তিনি বলেন, রাখাইনে সেনা অভিযানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ হয়ত উড়িয়ে দেয়া যায় না, তবে তার পেছনে গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল- এমন ধরে নেয়াটাও মিয়ানমারের জটিল বাস্তবতায় ঠিক হবে না। আন্তর্জাতিক আইন ও সনদসমূহের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে সু চি বলেন, রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘন কোনোভাবেই মেনে নেবে না মিয়ানমার সরকার। তবে যখন দেশের বিচার ব্যবস্থা ব্যর্থ হবে, শুধু তখনই আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এর বিচার করতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, যেসব সেনার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি মিয়ানমার সামরিক বাহিনী এমন কোনো কাজ করে যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। তাহলে দেশের সংবিধান অনুযায়ী তাদের বিচার হবে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানে যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করার অভিযোগে মিয়ানমারকে জাতিসংঘের এই সর্বোচ্চ আদালতে এনেছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। গত ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার শুনানির প্রথম দিনে দ্য হেগের পিস প্যালেসে গাম্বিয়ার পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন দেশটির আইনমন্ত্রী আবুবকর তামবাদু। তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেন এবং এই গণহত্যা বন্ধের দাবি জানান।
এরপর বুধবার মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য দিতে এসে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর সু চি দাবি করেন, রাখাইনের পরিস্থিতি সম্পর্কে গাম্বিয়া যে চিত্র এ আদালতে উপস্থাপন করেছে তা ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’। রাখাইন পরিস্থিতি জটিল এবং রোহিঙ্গারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে স্বীকার করেন সু চি। যে কারণে অনেকে নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশে পালিয়েছে। ২০১৭ সালের রক্তাক্ত অভিযানকে বারবার তিনি অভ্যন্তরীণ সংঘাত বলে দাবি করে আসছেন।
সু চি বলেন, স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার জবাবে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের এ মামলায় গণহত্যার অভিপ্রায় শুধু অনুমান নির্ভর হতে পারে না। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন গণহত্যার উদ্দেশ্য কী হতে পারে যা অন্যায় কাজ করার দায়ে অভিযুক্ত সেনা ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে তদন্ত, বিচার ও শাস্তি দেয়? যদিও এখানে সবার মনোযোগ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ওপর তারপরও আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বেসামরিক অপরাধীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। মিয়ানমারের এই রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার দাবি, সেনা সদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করে থাকলে তা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে। এ বিষয়টিকে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ নেই। ১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদ এখানে প্রযোজ্য নয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট নিরাপত্তাচৌকিতে সন্ত্রাসীদের হামলার অজুহাত দেখিয়ে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নৃশংসতা শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেসময় সীমান্ত পেরিয়ে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এর পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ।
