ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের (সেভেন সিস্টার্স) নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক একীভূকরণের জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা শাখা। ২০ জুলাই প্রকাশিত এক বিশদ গবেষণা প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দর কেবলমাত্র ভারতের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধাই নয়, বরং এটি ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অরুণাচল, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা – এই সাত রাজ্য ভৌগোলিকভাবে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এবং মাত্র ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত শিলিগুড়ি করিডোরের মাধ্যমে যুক্ত। এই করিডোরের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকিতে ফেলছে।
গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর সেভেন সিস্টারসের নিকটতম গভীর সমুদ্রবন্দর হওয়ায় এর ব্যবহার নিশ্চিত করলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পণ্য পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। বর্তমানে এসব রাজ্য থেকে পণ্য পরিবহনে প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলকাতা বা হলদিয়ায় যেতে হয়। বিপরীতে, চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ২০০ কিলোমিটার।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই), কিয়াকপিউ ও হাম্বানটোটা বন্দরে বিনিয়োগ, এবং বঙ্গোপসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভারতের জন্য একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এর মোকাবেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বিত ও পারস্পরিক অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির প্রসঙ্গে বলা হয়, চট্টগ্রাম এই নীতির বাস্তবায়নে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে ভারতের বাণিজ্যিক সংযোগ জোরদার করতে পারে। এই বন্দর ব্যবহার করে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে, যা ত্রিপুরা, মিজোরাম ও আসামের মতো রাজ্যে পর্যটন, হস্তশিল্প ও কৃষি খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আন্দামান-নিকোবর নৌঘাঁটির সাথে চট্টগ্রামের ভৌগোলিক নৈকট্য ভারতের নৌসামরিক উপস্থিতিকেও শক্তিশালী করতে পারে।
গবেষণা প্রতিবেদনটি চারটি প্রধান বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছে—
১. বাণিজ্য খরচ হ্রাস: চট্টগ্রাম ব্যবহার করলে পণ্য পরিবহনে খরচ কমবে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিল্প প্রতিযোগিতামূলক হবে।
২. সংযোগ বৃদ্ধি: ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু ও কালাদান ট্রানজিট প্রকল্পের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে।
৩. আসিয়ান বাণিজ্য সম্প্রসারণ: বন্দরটি ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট নীতিকে এগিয়ে নিয়ে আসিয়ান বাজারে প্রবেশাধিকার তৈরি করবে।
৪. বিনিয়োগ উৎসাহ: কৃষি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং পর্যটন খাতে বহির্বিশ্ব থেকে বিনিয়োগ আসবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে ভারত পূর্বেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে এই গবেষণা প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিষয়টি একটি কৌশলগত জরুরত হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে দেশটির প্রতিরক্ষা মহল।