ফের যুদ্ধ প্রস্তুতি কঙ্গোর সেনাবাহিনী ও এম২৩ বিদ্রোহীদের
![]()
নিউজ ডেস্ক
কঙ্গোর সেনাবাহিনী ও রুয়ান্ডা সমর্থিত বিদ্রোহীরা শন্তি চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করে সামরিক অবস্থান জোরদার করে তুলছে। এতে ফের দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘাত পুনরুজ্জীবিত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা; যা শেষ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
এম২৩ বিদ্রোহীরা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে নিয়েছিল। তখন থেকে এম২৩ দুই দশকের মধ্যে কিনশাসার সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে ওঠে। এই আক্রমণে প্রতিবেশী সেনাবাহিনী অংশ নেওয়ায় ফের আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।
তারপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের নেতৃত্বে ধারবাহিক শান্তি আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে আস্থা তৈরি করার আগেই চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য তাড়াহুড়া করায় এসব প্রচেষ্টা ম্লান হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
বিদ্রোহীরা চায়, আলোচনা এগিয়ে যাওয়ার আগে বিদ্রোহীদের মুক্তি ও কঙ্গোর যে অংশ এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে সেখানে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব চুক্তি।
কিন্তু কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেডির সরকার নিয়ন্ত্রণ হারানো অঞ্চলের কর্তৃত্ব দিতে বা কোনো বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়নি।
এসব বিষয় নিয়ে রয়টার্স কঙ্গোর চারজন সরকারি কর্মকর্তা, তিন বিদ্রোহী কর্মকর্তা, ছয় কূটনীতিক, দুইজন সাবেক কর্মকর্তা ও দুইজন কঙ্গো বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে।
রয়টার্স কঙ্গোর সরকারি ও বিদ্রোহী কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, উভয়পক্ষই এখন রুয়ান্ডা ও বুরুন্ডির সীমান্তবর্তী কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোর একাধিক ফ্রন্টলাইনে শত শত লোক পাঠাচ্ছে। আর গ্রহণযোগ্য সমাধান ছাড়াই চলতে থাকা আলোচনার মধ্যেই ওই ফ্রন্টলাইন এলাকাগুলোতে সহিংসতা আগেই মতোই অব্যাহত আছে।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ওই অঞ্চলে সংঘটিত শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নথিবদ্ধ করেছে। এর পাশাপাশি প্রথমে ওয়াশিংটনে ও পরে দোহায় প্রাথমিক শান্তি চুক্তি হওয়ার পর থেকে উভয়পক্ষই নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়েছে।
জুনে মার্কিন মধ্যস্থতাকারীরা কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি করাতে সক্ষম হয়। ওয়াশিংটন ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কঙ্গোর বিদ্রোহীদের প্রতি রুয়ান্ডার সমর্থন বন্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে চুক্তিটি হয়েছিল।
এর পাশাপাশি কাতারের নেতৃত্বাধীন শান্তি উদ্যোগের কঙ্গোর সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে একটি চুক্তি করানোর প্রচেষ্টা ছিল, কিন্তু দুই পক্ষের অনমনীয়তায় ১৮ অগাস্টের সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরও তা সম্ভব হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে হওয়া শান্তি চুক্তির কিছু অংশ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও কঙ্গো বিশেষজ্ঞ ক্রিস্তফ টিটেকা জানান, ঘটনাস্থলগুলোতে শন্তির কোনো লক্ষণ নেই।
বেলজিয়ামের এন্টওয়ার্প বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, “প্রতিশ্রুত ভঙ্গ, চুক্তির নড়বড়ে বাস্তবায়ন এবং গভীর অবিশ্বাসের কারণে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এর সবগুলো মিলে যেটি হচ্ছে সেটি একটি অন্তহীন দুষ্ট চক্রের মতো।”
ট্রাম্প জানিয়েছেন, কঙ্গোর খনিজ সম্পদের ওপর মার্কিন কোম্পানিগুলোর চোখ আছে আর যদি লড়াই শেষ হয় তারা সেখানে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।
কিন্তু এটি করতে গেলে যে সংঘাতের সমাধান করতে হবে তার গোড়া আছে ১৯৯৪ সালে হওয়া রুয়ান্ডা গণহত্যায়। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ওই গণহত্যার কারণে কঙ্গোতে ধারাবাহিক অনেকগুলো যুদ্ধ শুরু হয় আর তাতে লাখ লাখ মানুষ নিহত, পঙ্গুত্ব ও বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়।
ওই গণহত্যায় প্রায় ১০ লাখ তুতসি এবং মাঝারি সংখ্যক হুতু জাতির মানুষ নিহত হয়। রুয়ান্ডার পরাজিত হুতু মিলিশিয়ারা প্রতিবেশী কঙ্গোতে পালিয়ে যায়, সেখানে তারা এফডিএলআর নামে একটি দল গড়ে তোলে। তারপর থেকে এফডিএলআর বেসামরিকদের সম্পদ লুঠ ও হত্যা শুরু করে এবং কঙ্গোর বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেয়, মাঝে মাঝে রাজধানী কিনশাসার সরকারের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে।
অপরদিকে কঙ্গোর তুতসিদের সুরক্ষা দিতে ২০১২ সালে এম২৩ বিদ্রোহীদের আবির্ভাব হয়। রুয়ান্ডা এম২৩ বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে, কিন্তু বলেছে এফডিএলআরের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষায় তারা প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে।
কঙ্গোর অভিযোগ, রুয়ান্ড কঙ্গোর পূর্বাঞ্চল থেকে মূল্যবান খনিজ সম্পদ লুন্ঠন করতে এম২৩-কে নিজেদের ছায়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করছে এবং ‘ব্যাপক ও পদ্ধতিগত অপরাধ’ ঘটাচ্ছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা রুয়ান্ডা হয়ে রপ্তানি হওয়া প্রচুর পরিমাণ লুণ্ঠিত খনিজ চালান নথিবদ্ধ করেছে। এসব খনিজের মধ্যে সোনা ও কোল্টান অন্যতম। কোল্টান স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং ডিফেন্স প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়। কঙ্গোর সীমান্তে অবস্থিত খনিগুলো থেকে তোলা এসব পণ্যের সাপ্লাই চেইন এখন এম২৩ নিয়ন্ত্রণ করে।
রুয়ান্ডা ও বুরুন্ডির সীমান্তবর্তী কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ উত্তর ও দক্ষিণ কিভুতে এখন এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অন্তত ১৪ হাজার যোদ্ধা আছে। এদের মধ্যে নয় হাজার নতুন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের দুই কর্মকর্তা ও তিন কূটনীতিক।
এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কিভুর টাঙ্গানিকা হ্রদের তীরবর্তী ফ্রন্টলাইন শহর উভিরায় এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
এম২৩, রুয়ান্ডার বাহিনী এবং মিত্র স্থানীয় তুতসি নেতৃত্বাধীন মিলিশিয়ারা অগ্রসর হয়েছে আর তারা কঙ্গোর সরকারি বাহিনীর শত শত সেনা, মিত্র বুরুন্ডির সেনাবাহিনী ও ওয়াজালেন্দো নামের সরকারপন্থি স্থানীয় মিলিশিয়া যোদ্ধাদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।
কঙ্গোর সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, “তারা এই অবস্থানে দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে পরে তাদের সরিয়ে দেওয়া অসম্ভব হবে।”
বিদ্রোহী জোট এখন যে দুর্গম উঁচু ভূমি নিয়ন্ত্রণ করছে তার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন তিনি।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।