ধর্ষক চয়ন শীল ৬ দিনের রিমান্ডে, বিচারের দাবি তুলে জেলাজুড়ে অবরোধ ইউপিডিএফের
![]()
নিউজ ডেস্ক
গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সিঙ্গিনালা এলাকায় মারমা সম্প্রদায়ের এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে খাগড়াছড়ি জেলাজুড়ে সহিংস সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ চলছে।
ওই দিন সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে এক স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। রাতে বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি করে বাড়ির আশে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা বাদি হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরদিন বুধবার সকালে সিঙ্গিনালা এলাকা থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর জোনের সদস্যরা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। আটককৃত শয়ন শীল সিঙ্গিনালার বাপ্পী শীলের ছেলে। সে এখন ৬ দিনের পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে।
ধর্ষকের বিচার চাই, কিন্তু সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি কেন?- একটি দ্বৈত মানসিকতার বিশ্লেষণ
এদিকে, আজকের অবরোধে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানার ব্যবহার করলেও মূলত প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ ও সংগঠনটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরাই এ অবরোধে মূখ্য ভূমিকা রাখছেন।
অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ি ও সাজেকে আটকা পড়েছে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার পর্যটক। তার মধ্যে শুধু সাজেকে সাজেকে আটকা পড়েছে ২ হাজার ১০০ জন পর্যটক।

এদিকে, অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ির অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অবরোধ সমর্থনে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সড়কে রাস্তায় গাছ ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে পিকেটিং চলছে। তবে, পুলিশ টহলে থাকলেও নিস্ক্রিয় দেখা গেছে। ঢাকাসহ জেলা বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা একাধিক যাত্রীবাহী বাস পথে আটকা পড়ায় পর্যটকসহ শত শত যাত্রী সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন পর্যটক ও শ্রমজীবী মানুষ।

অবরোধের নামে ভোরে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির প্রবেশমুখ রামগড় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে গাছ কেটে ও আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ঢাকা থেকে আসা নৈশ কোচের বাসগুলো জেলায়ে প্রবেশ করতে চাইলেও ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের বাঁধার মুখে তা সম্ভব হয় নি।

জেলা সদরের মেইন পয়েন্ট চেঙ্গী স্কয়ারেও সকালে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ইউপিডিএফ। এতে জেলা সদরে বসবাসকারী জনসাধারনের নিত্যনৈমত্তিক কর্মকান্ড থমকে গেছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে জেলা সদরজেুড়ে।

এছাড়া, জেলা সদরের মহিলা কলেজ গেইট ও ফায়ার সার্ভিস এলাকায় আগুন জ্বালিয়ে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ইউপিডিএফ। এই সড়কে চলাচলকারী ব্যাটারি চালিত টমটম ও মোটরসাইকেল চলাচলও বন্ধ করে দেয় সন্ত্রাসীরা।

রাঙামাটিতে থেকে খাগড়াছড়িতে প্রবেশের একমাত্র আঞ্চলিক সড়ক জেলার মহালছড়ি উপজেলাতেও ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের নৈরাজ্য লক্ষ্য করা গেছে। সড়কে আগুন জ্বালিয়ে স্থানিীয়দের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে স্থানীয় ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের ভাইবোনছড়ার ছোটনালা এলাকায় সকাল থেকেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা। আতঙ্কে সড়কে যানচলাচল সীমিত রেখেছেন পরিবহন চালকরা।

জেলার গুইমারা উপজেলার খাগড়াছড়ি-ঢাকা ও খাগড়াছড়ি- চট্টগ্রাম মহাসড়কের জোড়া ব্রীজ এলাকায় সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে অকটেন দেয়ে আগুন জ্বালিয়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সন্ত্রাসীরা। অভিযোগ উঠেছে, সকালে এই সড়কে যাতায়াতকারী কয়েকজন মোটরসাইকেল ও সিএনজি চালককে মারধর করেছে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীর। আতঙ্ক ছড়িয়ে পুরো উপজেলা জুড়ে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা করা হলেও তা সরিয়ে দিতে কাজ চলছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পু্লিশ মোতায়ন রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ইউপিডিএফ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মাঝে নিজেদের গ্রহনযোগ্যতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়ে জুন্ম ছাত্র জনতার ব্যানার ব্যবহার করে মাঠে নেমেছে। প্রতিবাদের নামে গত তিনদিনে পাহাড়ে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তারা। এতে করে তারা রাজনৈতিক ফাঁয়দা লুটে নিলেও সাধারণ পাহাড়িদের সাথে বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে অবিশ্বাস ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত উসকে দিয়েছে। সেনাবাহিনী ও সাধারন পাহাড়িদের মুখোমুখি দাঁড় করাতেই ইউপিডিএফ গতকাল শান্তিপূর্ন সমাবেশের নামে সেনা টহলে হামলা চালিয়েছে।
ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত এক যুবককে আটক ও পরবর্তীতে তাকে আদালত কর্তৃক রিমান্ডে পাঠানো হলেও এ ঘটনায় জল ঘোলা করে বিচারের দাবির আড়ালে ইউপিডিফের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি স্থানীয়দের।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।