আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন গলার কাঁটা: সালিশি আদালতে বাংলাদেশ
![]()
নিউজ ডেস্ক
ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় নির্মিত আদানির ১,৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন বাংলাদেশের জন্য ‘গলার কাঁটা’। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরুর দুই বছর পরও পাওনা ও কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি।
পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় আদানির কেন্দ্রের কয়লার দাম প্রতি টনে ১৫-২০ ডলার বেশি। চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পায়রা কেন্দ্রের কয়লা যেখানে ৬৫-৭০ ডলারে কেনা হয়, সেখানে আদানি ৮০ ডলার দাবি করছে।
ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদানির বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি খরচ দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৮৭ পয়সা, যেখানে ভারতের অন্যান্য কেন্দ্র থেকে আমদানিতে খরচ ৮ টাকা ৪০ পয়সা। অন্তর্বর্তী সরকারের ন্যাশনাল রুফটপ সোলার প্রোগ্রাম এই আমদানি নির্ভরতা কমানোর কৌশলগত পদক্ষেপ।
জানা গেছে, অতিরিক্ত দামের কারণে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকেই আদানির বিল বকেয়া পড়তে শুরু করে। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৭০ কোটি ডলার বা প্রায় ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ২০ কোটি ডলারের বিরোধ এখনো নিষ্পত্তিহীন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ আদানি বিদ্যুৎ রফতানি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২০২১ সালে গড্ডা কেন্দ্র নির্মাণ শেষ পর্যায়ে গেলে ২০২৩ (মার্চ) বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। ২০২৪ (জুন) বকেয়া বাড়তে শুরু ও মূল্যবিরোধ তীব্র হয়। ২০২৫ (সেপ্টেম্বর) আদানির বকেয়া আদায়ের চিঠি প্রধান উপদেষ্টার কাছে ২০২৫ (অক্টোবর) ভারত সরকার গড্ডা কেন্দ্রকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার অনুমোদন দেয়। ২০২৫ (অক্টোবর) অন্তর্বর্তী সরকার নবায়নযোগ্য শক্তি কর্মসূচি ঘোষণা করে।
ভারতের গ্রিডে সংযুক্তি ও সালিশি আদালতের পথে: সম্প্রতি ভারত সরকার গড্ডা কেন্দ্রের বিদ্যুৎ দেশটির জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। এতে বাংলাদেশে রফতানির পাশাপাশি আদানি এখন ভারতেও বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে। পিডিবি সূত্রে জানা যায়, এ পদক্ষেপের পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্য দিকে, আদানি নিয়োগ দিয়েছে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক Daxuton Hill Chambers ও The Arbitration Chambers নামের দুই আইন সংস্থা।
বকেয়ার পরিমাণ ও আর্থিক অবস্থা (২০২৫ পর্যন্ত) চিত্রে দেখা যায়- আদানির দাবিকৃত মোট পাওনা ৭০ কোটি মার্কিন ডলার (৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা)। এই পাওনা পরিশোধের জটিলতা অব্যাহত রয়েছে। এতে বিতর্কিত বাড়তি বিল রয়েছে-২০ কোটি মার্কিন ডলার (২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা) এখন সালিশি আলোচনায় রয়েছে। পিডিবি কর্তৃক পরিশোধিত অতিরিক্ত অর্থ (জুন ২০২৫ পর্যন্ত) ৩৩.৬ কোটি মার্কিন ডলার (৪১০০ কোটি টাকা আংশিক নিষ্পত্তি)।
চুক্তির অসমতা ও সরকারের পদক্ষেপ: অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে পিডিবি-আদানির চুক্তি পর্যালোচনায় গঠিত কমিটি জানিয়েছে, চুক্তিটি ‘অত্যন্ত অসম’ এবং আদানিকে বেশ কিছু অস্বাভাবিক সুবিধা দেয়া হয়েছে। কমিটির এক সদস্যের ভাষায়- ‘চুক্তিটি দেখে মনে হয়, আদানি বিদ্যুৎ নয়, কয়লা বিক্রি করেই বেশি লাভ করতে চেয়েছে।’
পিডিবি চেয়ারম্যান মো: রেজাউল করিম বলেন, ‘আদানি কয়লার যে দাম চাইছে, তা সত্য হলে দিতে সমস্যা নেই। কিন্তু একই সূচক ধরে অন্য জায়গা থেকেও আমরা কয়লা কিনছি। তাই বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম মনে করেন, ‘এ ইস্যুটি আন্তর্জাতিক দক্ষ আইনজীবীর কাছে নিতে হবে। চুক্তির অসমতা ও কয়লার মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া আইনি উপায়ে যাচাই করতে হবে। এটি ২৫ বছরের চুক্তি, তাই এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।”
আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্পের আর্থিক বোঝা ও চুক্তিগত জটিলতা এখন বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন সোলার নীতি হয়তো এই নির্ভরতা কাটানোর প্রথম বাস্তব পদক্ষেপ হতে পারে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।