‘পার্বত্য জেলার চাকরিতে জাতীয় কোটা ব্যবস্থা কখনোই প্রযোজ্য হয়নি এবং প্রযোজ্যও নয়’
![]()
নিউজ ডেস্ক
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হওয়ার পর নানা আলোচনা–সমালোচনার প্রেক্ষাপটে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সোমবার এক বিস্তারিত লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর পটভূমি, আইনগত অবস্থান, মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ, ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক গোষ্ঠীর দাবিদাওয়া—সবকিছুই ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, জেলা পরিষদ নিজস্ব কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ১৪ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়। এ বিষয়ে ৮ নভেম্বর পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার ঢাকা অবস্থানকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সঙ্গে পরীক্ষার নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন আয়োজন নিয়ে আলোচনা করেন।
এরপর ৬ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সভায় সচিব আব্দুল খালেক, অন্যান্য কর্মকর্তা, রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পরীক্ষার সম্ভাব্য জটিলতা, সাত হাজারের বেশি প্রার্থী, পাঁচটি পরীক্ষা বোর্ড গঠন এবং নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে পরীক্ষা শেষ করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আলোচনার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ হয় এবং পরীক্ষার দ্রুত ও আইনানুগ আয়োজনের বিষয়ে তিনি মত দেন। তবে পরীক্ষার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব জেলা পরিষদকেই নিতে হবে বলে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জানান।
এরই মধ্যে কোটা বিরোধী ঐক্য জোট, সাধারণ শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদে স্মারকলিপি জমা পড়ে, যেখানে তারা জাতীয় পর্যায়ে বিদ্যমান ১৩% মেধা ও ৭% কোটা নীতির আলোকে শিক্ষক নিয়োগের দাবি তোলে। এই চাপের মধ্যেই চেয়ারম্যান ১৪ নভেম্বরের পরীক্ষা স্থগিত করেন। পরে নিয়োগ পরীক্ষার পক্ষে আবার নতুন স্মারকলিপি জমা পড়ে। ১৮ নভেম্বর নতুন তারিখ ঘোষণা করা হলে কোটা বিরোধী পক্ষ ২০–২১ নভেম্বর হরতালের ঘোষণা দেয়। সম্ভাব্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ২১ নভেম্বরের পরীক্ষাও পুনরায় স্থগিত করা হয়।
বিবৃতিতে আঞ্চলিক পরিষদ পরিষ্কারভাবে জানায়— পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকরিতে জাতীয় কোটা ব্যবস্থা কখনোই প্রযোজ্য হয়নি এবং এখানকার জন্য তা প্রযোজ্যও নয়।
চুক্তির অনুচ্ছেদ ১৮ অনুযায়ী, পার্বত্য অঞ্চলে সরকারি ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে। একই নীতি অনুসরণে ২০১৫ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগে জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে—বিবৃতিতে এ তথ্য বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদেও একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, যেখানে জাতীয় কোটা নীতি প্রয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্ন ওঠায় মন্ত্রণালয় আইনগত ব্যাখ্যা চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে পত্র পাঠায়।
আঞ্চলিক পরিষদ আশা প্রকাশ করেছে যে, পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ তাদের অধীন হস্তান্তরিত প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতাধীন সহকারী শিক্ষক নিয়োগে পূর্বের মতোই চুক্তি ও আইন অনুযায়ী স্থানীয় অগ্রাধিকার নীতি অনুসরণ করবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের দ্রুত পরামর্শই অচলাবস্থা নিরসনে সহায়ক হবে বলে পরিষদ মনে করে।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আওতায় বিকেন্দ্রীভূত ক্ষমতা, স্থানীয় অগ্রাধিকার এবং জেলার বাস্তবতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত একটি নীতি—যা বর্তমান জটিলতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।