সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াইয়ের প্রত্যয় মোদি-পুতিনের

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াইয়ের প্রত্যয় মোদি-পুতিনের

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াইয়ের প্রত্যয় মোদি-পুতিনের
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করছে রাশিয়া।’ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পাশে নিয়ে এমনটাই বললেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নেন মোদি ও পুতিন।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের প্রচেষ্টার দৃঢ় সমর্থক রাশিয়া। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর এক প্রতিক্রিয়া জানায় পুতিনের সরকার। হামলার নিন্দা জানিয়ে মস্কো বলেছিল, ‘সকল ধরণের সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের জন্য ভারতের সাথে সংহতি প্রকাশ করবে’।

সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গও উঠে আসে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আশ্বস্ত করে পুতিন বলেন, ইউক্রেনের সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে রাশিয়া। তিনি আরও জানান, কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সংঘর্ষ থামানোর প্রচেষ্টা চলছে, তার পরিকল্পনা মোদির সঙ্গে শেয়ার করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদি রুশ প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, ভারত সবসময় শান্তিকে সমর্থন করেছে এবং শান্তির পক্ষে রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেনও দ্রুত শান্তির পথে হাঁটবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

মোদি বলেন, ‘ইউক্রেন সঙ্কট শুরুর পর থেকে আমরা ক্রমাগত আলোচনা করেছি। সময়ে সময়ে আপনিও (পুতিন) আমায় সবকিছু জানিয়েছেন। আমি মনে করি যে, এই বিশ্বাস আমাদের শক্তি। আমি আপনার সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। একসঙ্গে আমরা শান্তির পথে এগিয়ে যাব।’

সফরটি এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন নয়াদিল্লি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় রয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ তেল কেনার কারণে ভারতীয় পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যা প্রত্যাহারের জন্য ভারত আলোচনা করছে।

গত বছর দশেক ধরে ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হচ্ছে রাশিয়া। মস্কো বলেছে, তারা ভারতীয় পণ্যের আমদানি বৃদ্ধি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে, যা এখন পর্যন্ত ভারতের জ্বালানি আমদানির কারণে রাশিয়ার পক্ষেই ঝুঁকে আছে।

শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নেন নরেন্দ্র মোদি ও ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপে রুশ জ্বালানির বাজার ছোট হয়ে গেলে ভারত কম দামে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কেনা বাড়ায়। তবে মার্কিন শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞার চাপে চলতি বছরে সেই আমদানি কমাতে হয়েছে।

বৈঠকের শুরুতে মোদি বলেন, ভারত নিরপেক্ষ নয়। আমাদের অবস্থান শান্তির পক্ষে। আমরা শান্তির জন্য গৃহীত প্রতিটি উদ্যোগকে সমর্থন করি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াই।

এর প্রতিক্রিয়ায় সংঘাত নিরসনে মোদির প্রচেষ্টার প্রশংসা করে পুতিন বলেন, ইউক্রেন ইস্যুতে যা ঘটছে এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য সহযোগীর সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছি, সে বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার সুযোগ আপনি আমাকে দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশ ও অর্থনীতি যত বড় হচ্ছে, সহযোগিতার ক্ষেত্রও তত বিস্তৃত হচ্ছে। নয়া প্রযুক্তি, উড়োজাহাজ, মহাকাশ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় আমাদের মধ্যে অত্যন্ত আস্থাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা এসব ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যেতে চাই।

পুতিনের সফরসঙ্গী হিসেবে আছেন বড় ব্যবসায়িক ও সরকারি প্রতিনিধি দল রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলউসোভ। তিনি বৃহস্পতিবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদনে আত্মনির্ভরতা অর্জনে রুশ প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বেলউসোভ।

বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন চাপের সমালোচনা করে পুতিন বলেন, যে চাপের কারণে ভারতকে তাদের জ্বালানি না কিনতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই রাশিয়ার পারমাণবিক জ্বালানি কিনছে।

তিনি বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জ্বালানি কিনতে পারে, তবে ভারত কেন একই সুবিধা পাবে না? এই প্রশ্নের গভীরভাবে আলোচনার প্রয়োজন আছে, এবং আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গেও তা আলোচনায় প্রস্তুত।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ভারত–রাশিয়া বাণিজ্যে সামান্য পতন হলেও জ্বালানি বাণিজ্য ‘স্বাভাবিকভাবে চলছে’।

ভারত বলেছে, ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য, এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়ার সঙ্গে চলমান বাণিজ্যের বিষয়টিও তুলে ধরেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও রাশিয়া থেকে এলএনজি থেকে শুরু করে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম পর্যন্ত কয়েক বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি ও পণ্য আমদানি করছে।

দুইদিনের সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি পৌঁছান রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। মোদি সশরীরে উপস্থিত হয়ে তার ‘বন্ধু’ পুতিনকে বিমানবন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেন।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed