সাজেকের দুর্গমতা ভেদ করে হেলিকপ্টার যোগে সেনা সহায়তায় হাম ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৫ শিশু চট্টগ্রাম মেডিকেলে - Southeast Asia Journal

সাজেকের দুর্গমতা ভেদ করে হেলিকপ্টার যোগে সেনা সহায়তায় হাম ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৫ শিশু চট্টগ্রাম মেডিকেলে

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

সাম্প্রতিক সময়ে রাঙ্গামাটি জেলার সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম শিয়ালদহ এলাকায় হাম রোগ ছড়িয়ে পড়ে, যা অতিমাত্রায় শিশুদের মাঝে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। গত কয়দিনে এই মহামারি রোগে আক্রান্ত হয়ে সাজেকের দূর্গম পাহাড়ি এলাকা তথা অরুন পাড়া, লুথিয়ান পাড়া ও কমলাপুরপাড়া গ্রামে অন্তত ৮ জন ত্রিপুরা শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এ অবস্থায় উক্ত এলাকায় আক্রান্ত আরো শতাধিক মানুষদের উন্নত চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে গত ২৪ মার্চ বেসামরিক ও সামরিক চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি চিকিৎসক দল সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হেলিকপ্টারযোগে শিয়ালদহ এলাকায় যায়।

জানা যায়, সাজেকের শিয়ালদহ লোকালয় থেকে অত্যন্ত দূরবর্তী এবং দুর্গমতার কারণে সামাজিক সুযোগ-সুবিধার অনেক কিছুই অনুপস্থিত। সেখানে এই অসুস্থ উপজাতিদের উন্নত চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার জন্য দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে দেবদূতের মত সেনাবাহিনীর এমন ছুটে আসা ছিল সকলের কাছে অকল্পনীয়। এসময় সমন্বিত চিকিৎসক দল সেই এলাকায় একটি পরিবারের ৫ জন অপুষ্টি জনিত রোগসহ নিউমনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সন্ধান পান এবং চিকিৎসকগণ শিশুদের জীবন বাঁচাতে জরুরী ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের চট্টগ্রামে পাঠানো প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। বিষয়টি জানার পর সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মহোদয় মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান অতি দ্রুত এই শিশুদের হেলিকপ্টারযোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসার নির্দেশনা প্রদান দিলে ২৫ মার্চ বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে আক্রান্ত শিশুদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।

উদ্ধারকৃত শিশুরা হলো প্রতিল ত্রিপুরা (৫), রোকেন্দ্র ত্রিপুরা (৬), রোকেদ্র ত্রিপুরা (৮), নহেন্দ্র ত্রিপুরা (১০), দিপায়ন ত্রিপুরা (১৩)। সূত্র মতে বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

সেনা বাহিনীর এমন মহানুভবতায় উক্ত এলাকায় মানুষের মাঝে নেমে এসেছে প্রশান্তির ছায়া। হেলিকপ্টারযোগে দুঃস্থ রোগীদের স্থানান্তরের পাশাপাশি অন্যান্য আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতেও যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে সেনা ও বেসামরিক চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত চিকিৎসক দল।

এখানে উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। দূর্গমতার কারণে শিয়ালদহ এলাকায় প্রায়শই অভাব অনটনসহ বিভিন্ন মহামারির প্রকোপ দেখা দেয়। এখানে সুপেয় পানি সংগ্রহ করা অত্যন্ত দুঃসাধ্য। তাই ঐ এলাকার নিরীহ জনগণকে নিজেদের শারীরিক ঝুঁকি নিয়ে দিনযাপন করতে হয়। ইতিপূর্বে ২০১৫ সালে ব্যাপকভাবে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে শিয়ালদহে প্রায় শতাধিক ব্যক্তিবর্গ মৃত্যুবরণ করে। ঐ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল হেলিকপ্টারে করে সেখানে গিয়ে একটি অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করে চিকিৎসা তৎপরতা পরিচালনা ও স্থানীয় জনগণকে প্রতিকুলতার মধ্যেও সুপেয় পানি সংগ্রহ করার বিভিন্ন পদ্ধতিমূলক প্রেষণা প্রদান করার ফলে বিপদজনক হয়ে উঠা মহামারি রোধ করা সম্ভব হয়েছিলো। সেসময়কার মতো বর্তমানেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের এই দূর্যোগ মুহূর্তে পাশে দাঁড়িয়েছে।