রাঙামাটিতে আবারো প্রসুতির জীবন রক্ষায় এগিয়ে এসেছে সেনাবাহিনী - Southeast Asia Journal

রাঙামাটিতে আবারো প্রসুতির জীবন রক্ষায় এগিয়ে এসেছে সেনাবাহিনী

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে আবারো এক প্রসুতি নারীর জীবন রক্ষায় এগিয়ে এসেছে সেনা সদস্যরা। শুক্রবার (১লা মে) রাঙামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ধামাইছড়া গ্রামের বাসিন্দা ঐ প্রসুতি নারীকে নিজেদের গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী।

সূত্র মতে, করোনা পরিস্থিতিতে সড়কে দায়িত্বপালনকালে জেলার সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ধামাইছড়া গ্রামের বাসিন্দা ম্যারাডোনা চাকমাকে শিল্পকলা ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাঙামাটি সদর জোনের টহল দলের নেতৃত্বে থাকা ক্যাপ্টেন রেজাউল করিম দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জানতে চায় তার কাছে। এসময় ম্যারাডোনা চাকমা জানান, তিনি তার প্রসুতি স্ত্রীকে নৌকাযোগে নিয়ে এসেছেন, কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার জন্য কোন গাড়ী পাচ্ছেন না। তাৎক্ষনিক টহল কমান্ডার এর নেতৃত্বে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, সেনাসদস্য ও পুলিশ সদস্যগণ উক্ত প্রসুতি নারীকে নৌকা থেকে তুলে এনে সেনা সদস্যদের নিজস্ব টহল গাড়ী খালি করে উক্ত গাড়ীতে করে প্রসুতি নারীকে রাঙামাটি সদর হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়ে দেন।

এঘটনায় সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ম্যারাডোনা চাকমা বলেন, আজ সেনাবাহিনী না থাকলে হয়তো গাড়ির অভাবে তার স্ত্রীর প্রাণ বাঁচানো তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়তো।

উল্লেখ্য, এর আগেও গত বছরের ২৯শে এপ্রিল সোমবার একই উপজেলার দুর্গম এলাকার এক প্রসূতি নারীকে হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে এসে নজির গড়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর এমন দায়িত্বশীলতায় বেঁচে গিয়েছে দুটি প্রাণ। রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত বগাখালী গ্রামের এক প্রসূতি নারী জিতনি তংচঙ্গ্যার (২৩) হঠাৎ প্রসব ব্যথা শুরু হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে ডাকা হয়েছিল ধাত্রী ও ওঝাকে। কিন্তু চারদিন ধরে ধাত্রী তার প্রসব করাতে ব্যর্থ হয়। এদিকে কাছাকাছি কোনো হাসপাতাল না থাকায় এক পর্যায়ে তাকে বাঁচানো অসম্ভব বলেই ধরে নিয়েছিল তার পরিবার। এভাবে চার দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েন তিনি। গ্রামটি এতটাই প্রত্যন্ত যে, তাকে হাসপাতালে নিতে হলে ঝিরি, নদী ও রাস্তা মিলিয়ে শহরে যেতে প্রায় ৭ দিন লেগে যেত। তাই কোনো উপায় না পেয়ে অবশেষে তাকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে প্রাণে বাঁচিয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এর আগে, বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে সোমবার সকালে জতনিকে বগাখালীর বিজিবির সীমান্ত চৌকিতে নিয়ে যান তার পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এই প্রসূতিকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। দুপুর ২টার দিকে হেলিকপ্টার সেনানিবাসে অবতরণের পর দ্রুত এ্যাম্বুলেন্সে করে জিতনিকে সিএমএইচে নেয়া হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর একই গ্রাম থেকে সোনাপতি চাকমা নামে আরো এক প্রসূতিকে হেলিকপ্টারে সিএমএইচে এনে প্রাণ বাঁচায় সেনাবাহিনী।

এছাড়া রাঙ্গামাটি জেলার সাজেকের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় জুম চাষ শেষে বাড়ি ফেরার পথে গতবছর সাজেক ইউনিয়নের নিওথাংনাং পাড়ার অলীন্দ বিকাশ ত্রিপুরার ছেলে পণবিকাশ ত্রিপুরাকে (১৬) আক্রমণ করে একটি বন্য ভালুক। ক্ষতবিক্ষত হয় কিশোরের পুরো শরীর। ভালুকের থাবায় কয়েকটি দাঁতও পড়ে যায় তার। ২০১৯ সালের ১২ মে রবিবার বেলা সোয়া ২টায় আহত কিশোরকে নিয়ে রাঙামাটি থেকে আসা হেলিকপ্টারটি চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অবতরণ করে। এসময় সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা ওই কিশোরকে হেলিকপ্টার থেকে নামিয়ে সিএমএইচের এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেন।

অতি সম্প্রতি রাঙামাটির সাজেকের দুর্গম এলাকা লুংথিয়ান ত্রিপুরাপাড়ায় হামে আক্রান্ত মুমূর্ষু পাঁচ শিশুকে বাঁচিয়ে রাখতে চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর এক বিশেষ হেলিকপ্টার গিয়ে সেখান থেকে তাদের এনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২৫শে মার্চ বুধবার দুপুরে তাদের রাঙামাটির সাজেকের দুর্গম শিয়ালদহ মৌজার লুংথিয়ান ত্রিপুরাপাড়া থেকে সেনাবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে প্রথমে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে, পরে সেখান থেকে এ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে তারা সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে যায়।

সূত্র মতে, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী অনেক মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বেঁচেছে সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল ভূমিকার কারণে। এদের মধ্যে রয়েছে- পায়ে পচন ধরা বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সদস্য চাথুইমা মারমা, লক্ষ্মীছড়ি থানার পুলিশ কনস্টেবল মংজয় চাকমা প্রমুখ। গতবছর খাগড়াছড়ির দুরছড়ি এলাকায় ডায়রিয়া দেখা দিলে সেনা সদস্যরা মানবিক সহযোগিতা দিয়ে প্রায় ৩০টি পরিবারের সদস্যদের সুস্থ করে তোলে। এর পাশাপাশি সাজেকে মহামারি ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিলে সেখানেও মেডিকেল ক্যাম্প করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আক্রান্তদের সুস্থ করে তোলে সেনাবাহিনী।