সেনা সহায়তায় কোটি টাকার লোকসান থেকে রক্ষা পাচ্ছে পাহাড়ের বাঁশ ব্যবসায়ীরা
![]()
নিউজ ডেস্ক
করোনা ভাইরাসের কারণে খাগড়াছড়িতে কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়েছিলো বাঁশ ব্যবসায়ীরা। বিভাগীয় বন অফিস বন্ধ থাকায় মিলছিলো না বাঁশ পরিবহনের অনুমতি। এতে দুই কোটি টাকা লোকসানের মুখে ব্যবসায়ীরা। খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বাবুছড়ায় দেশের অন্যতম বৃহৎ বাঁশের বাজার। বাবুছড়া বাজার সংলগ্ন ৪টি ঘাট থেকে প্রতিদিন অন্তত ২৪টি বাঁশ বোঝায় ট্রাক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত। রাঙামাটি উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন নাড়াইছড়ি রেঞ্জ থেকে স্থানীয়দের মাধ্যমে এসব কিনে নিয়ে আসে ব্যবসায়ী। প্রতিটি বাঁশ বাবদ ১ টাকা ৭০ পয়সা রাজস্ব হিসেবে বন বিভাগে জমা দেয় ব্যবসায়ীরা।। বাঁশ বিপণন থেকে সরকার প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে।
বাবুছড়া বাঁশ কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা যায় ,‘ গত অর্থ বছরের নয় মাসে অর্থাৎ ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ১লা মে পর্যন্ত পরিবহন করা হয়েছে ২৮ লাখ ৪৪ হাজার বাঁশ। চলতি বছরে বছরের তিন মাস বাঁশ কর্তন বন্ধ থাকে। এই বাঁশ কর্তন,পরিবহন ও লোডিংয়ের সাথে জড়িত অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। এখন বাঁশের মৌসুম চললেও কোন কর্মব্যস্ত নেই পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের । করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে বাঁশ পরিবহন। এতে বেকার হয়ে পড়েছে শত শত শ্রমিক। লোকসানের মুখে ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে বাবুছড়া সংলগ্ন মাইনী নদীতে পড়ে আছে অন্তত ৫ লাখ বাঁশ। বাঁশের বিপরীতে ুরাজস্ব পরিশোধ করা হলেও বাঁশ পরিবহন করতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ ,‘করোনার কারণে রাঙামাটি বনবিভাগ অফিস বন্ধ থাকায় মিলছে না পরিবহন অনুমতি। এর মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নদীতে রাখা বাঁশ। নদীতে রাখা বাঁশ নষ্ট হয়ে গেলে ব্যবসায়ীদের লোকসান হবে ২ (দুই) কোটি টাকা।
বাবুছড়া বাঁশ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অরুন বিকাশ চাকমা জানান ‘ বাঁশ ব্যবসায় এখানকার অনেক মানুষই জড়িত। বাঁশ ব্যবসার উপর অন্তত ৫০ হাজার মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। কিন্তু করোনার কারণে বিভাগীয় বন অফিস বন্ধ রয়েছে। এতে আমাদের বাঁশ পরিবহনের অনুমতি মিলছে না। এখন নদীতে পড়ে আছে প্রায় ৫ লাখ বাঁশ । এসব বাঁশ দ্রুত বিপণন করতে না পারলে সব নদীতেই পঁচে যাবে। সরকার বা বন বিভাগ দ্রুত বাঁশ পরিবহনের অনুমিত না দিলে আমাদের পথে বসতে হবে । এছাড়া এই পেশায় জড়িত সবাইকে অনাহারে থাকতে হবে ।
নদীতে আটকে থাকা ৫ লাখ বাঁশ দ্রুত পরিবহনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছে ব্যবসায়ীরা। বাবুছড়ার বাঁশ ব্যবসায়ী মো.শরীফুল ইসলাম,বদিউল আলম ও মো আব্দুল্লাহ জানান,‘নাড়াইছড়ি থেকে অগ্রীম টাকা দিয়ে বাঁশ কিনে নিয়ে এসেছি। বাবুছড়া থেকে বাঁশ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। এক মাসের বেশি সময় ধরে বাঁশগুলো নদীতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কদিন পরই ভারী বর্ষণ ও উজানের পানিতে নদীতে ঢল নামবে। এভাবে বাঁশগুলো নদীতে পড়ে থাকলে পাহাড়ি ঢলে মূল্যবান বাঁশ ভেসে যাবে।
এদিকে কোটি টাকার লোকসান থেকে এবার বাঁশ ব্যবসায়ীদের রক্ষায় এগিয়ে এসেছে সেনাবাহিনীর দীঘিনালা জোন। দীঘিনালা সেনা-জোনের উদ্যোগের ফলে বন্ধ থাকা মাইনী নদীর বাঁশ পরিবহনের ছাড়পত্র (টিপি) পাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন সেনাবাহিনী। বাঁশ পরিবহনের ফলে পাহাড়ী ঢলে ভেসে যাওয়া এবং রোদে পুড়ে প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার বড় ধরনের আশঙ্কা থেকে রক্ষা পেলেন বাবুছড়ার বাঁশ ব্যবসায়ী। এ উদ্যোগের ফলে খুশি বাবুছড়া বাঁশ ব্যবসায়ী ও বাঁশ কাটা স্থানীয় লোকজন।
বাবুছড়া বাঁশ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অরুন বিকাশ চাকমা জানান, ‘করোনা ভাইরাসের কারনে বাঁশ পরিবহন বন্ধ থাকায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়ায়, ঠিক সে মুহুর্তে দীঘিনালা জোনের অধিনায়ক লে. কর্ণেল আদনান কবির এর উদ্যোগ খুব প্রশংসনীয়। স্যারের উদ্যোগের ফলে আমরা একদিকে বাঁশ পরিবহনের ছাড়পত্র (টিপি) পাচ্ছি অন্যদিকে বড় ধরনের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আমরা বাঁশ কাটা শ্রমিক এবং ব্যবসায়ী জোন কমান্ডার এর নিকট কৃতজ্ঞ।’
এব্যাপারে দীঘিনালা জোন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আদনান কবির, জানান, এব্যাপারে রাঙ্গামাটি বন বিভাগের প্রধান কার্যালয় এবং জামতলী রেঞ্জের একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে মাইনি নদীতে অপেক্ষামান বাঁশ সরেজমিনে পরিদর্শন করে ছাড়পত্র প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই এসব বাঁশ সমতলে পরিবহনের ছাড়পত্র (টিপি) পেয়ে যাবে।