বান্দরবানে পাথর উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহের জেরে ৫ সাংবাদিককে মারধরের হুমকি এক পাথর ব্যবসায়ীর
![]()
নিউজ ডেস্ক
বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদমে সংঘবদ্ধ একটি চক্রের অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহের জেরে পাথর ব্যবসায়ী এক স্কুল শিক্ষক কর্তৃক ৫ সাংবাদিককে মারধরের হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
পাথর সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য মিনহাজ উদ্দিন রোকন নামের এক প্রাথমিক শিক্ষক স্থানীয় সাংবাদিকদের পিটানোর হুমকি দিয়েছে এমন একটি অডিও গত ৪ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এঘটনার দুইদিন আগে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সায়েদ ইকবাল রোপার পাড়ার দুপ্রু ঝিরি এলাকায় পাথরের বিরুদ্ধে অভিযান চলাকালে জনৈক হোসেন সর্দার নামক এক ব্যক্তিকে প্রহার করেছে বলে পার্শ্ববর্তী লামা উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক কামরুজ্জামান ফেসবুকে একটি বিতর্কিত পোষ্ট আপলোড করেন।
সূত্র মতে, পাথরের অভিযানের ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় ৫জন সাংবাদিক সরেজমিনে অনুসন্ধানে গেলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই পাথর ব্যবসায়ী রোকন মাষ্টার স্থানীয় সাংবাদিকদের পিটানোর পরিকল্পনা করেন। তার পরিকল্পনা স্থানীয় অপর এক সাংবাদিকের মুঠোফোনের রেকর্ড করা হয়। পরে তা ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
জানা যায়, গত ৩রা নভেম্বর আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার সায়েদ ইকবাল মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে লামা উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক কামরুজ্জামান এর ১১’শ ঘনফুট অবৈধ পাথর জব্দ করেন। বলে রাখা যায় ইউএনও মোঃ সায়েদ ইকবাল আলীকদম যোগদানের পর থেকে অবৈধভাবে পাথর ও বালি উত্তোলনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেন। প্রতিনিয়ত অভিযানের ধারাবাহিকতায় গত ০২ মে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবৈধ পাথর উত্তোলনের অভিযান পরিচালনা করতে বের হন ইউএনও মোঃ সায়েদ ইকবাল। যাওয়ার পথে স্থানীয় জনৈক হোসেন সর্দার এর সাথে দেখা হলে তিনি হোসেন সর্দার এর কাছে পাথরের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চান। এসময় পাথরের কাজে ব্যবহৃত একটি গাড়ি সর্দারের বাড়ির উঠানে দেখতে পেয়ে হোসেন সর্দারকে অবৈধ পাথরের ব্যবসায়ীদের সহায়তা না করার জন্য সতর্ক করেন এবং দুর্গম পাহাড়ি পথ হওয়ার দরুন অভিযান পরিচালনা করতে না পেরে তিনি ফেরত আসেন। এসময় আরো জানা যায়, তাহার অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং ক্ষোভ মিটাতে গিয়ে সাংবাদিক কামরুজ্জামান কৌশলে হোসেন সর্দারকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেরেছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি বিতর্কিত ষ্ট্যাটাস দেন। ওই ষ্ট্যাটাসে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে সাংবাদিক কামরুজ্জামান উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নিয়ে মানহানীকর কথাসহ মারধর করার হুমকি প্রদান করেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস রহমান জানান, অবৈধ পাথর বিরোধী অভিযান পরিচালনা কালে তিনি ইউএনও’র সাথে ছিলেন। উক্ত অভিযান পরিচালনাকালে ইউএনও কর্তৃক কোন সর্দার বা অন্য কোন ব্যক্তিকে মারধর এর ঘটনা ঘটেনি। অভিযান চলাকালে সর্দারের মোবাইলে রোকন মাস্টার ফোন করলে ইউএনও কলটি রিসিব করেন, এসময় অপর দিক থেকে রোকন মাস্টার ইউএনও স্যারের গাড়ি ভিতরে যেতে না পারে এজন্য আটকানোর কথা বলায় স্যার সর্দারকে ধমক দিয়েছিলো।
অন্যদিকে অভিযান চলাকালে সাথে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাও সর্দারকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন আমাদের সামনে কাউকে মারধর করা হয়নি। সর্দারের মোবাইলে পাথর ব্যবসায়ী রোকন মাষ্টারের কল আসাতে ইউএনও স্যার সর্দারকে ধমক দিয়ে সতর্ক করেছে।
এদিকে দৈনিক গণমুক্তি পত্রিকার আলীকদম প্রতিনিধি রাসেল মজুমদার জানান, তিনি একজন পাথর দস্যু এবং পাথর সিন্ডিকেটের প্রধান। যেকোন মুহুর্তে অনাকাঙ্খিত ঘটনার সূত্রপাত ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। সুতরাং অতি দ্রুত তাহার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের বিনীত দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
অপরদিকে চ্যানেল আই বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি এসএম ইসমাইল হাসান বলেন, রোকন মাষ্টার ইতোপূর্বে চেক জালিয়াতি মামলায় পুলিশ কর্তৃক আটক হয়ে জেলে গিয়ে চাকুরি হতে সাসপেন্ড অবস্থায় আছেন। একজন সরকারি শিক্ষক হয়ে অবৈধ পাথর ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন, যা সম্পুর্ণ নিয়ম পরিপন্থী। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সাথে সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, যেন দ্রুত এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।