কক্সবাজারে বহিরাগত বার্মিজ বৌদ্ধদের তান্ডবে সংখ্যালঘু স্থানীয়রা, এনজিও’র সাহায্যে চলছে ধর্মান্তকরণ
![]()
নিউজ ডেস্ক
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবান সংলগ্ন পর্যটন শহর কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন, খাস ও সরকারি রিজার্ভ ফরেষ্টের জমি দখল করে গড়ে উঠেছে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার থেকে আসা বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের বসতবাড়ি, দোকানপাট ও ধর্মীয় উপাসনালয়। নির্বিচারে পাহাড় কাটা ও বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে স্থানীয় বাংলাদেশীদের জীবনযাত্রা। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে বেশ কয়েকটি বিদেশী এনজিওর গোপন মিশন বাস্তবায়নের ফলে চলছে নিরবে ধর্মান্তকরণ। এতে করে মিয়ানমার থেকে আসা বৌদ্ধদের পাশাপাশি বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে খৃষ্টধর্মে ধর্মান্তকরণ করা হচ্ছে স্থানীয় বাংলাদেশীদেরও।
সূত্র মতে, ২০১৭ সালের আগষ্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা গণহত্যা শুরু হলে বাংলাদেশ সরকারের উদারতার সুযোগ নিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি অবাধে কক্সবাজার জেলায় আসতে শুরু করে মিয়ানমারের বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী কয়েক হাজার বাসিন্দা। এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের চাপে জেলার টেকনাফ ও উখিয়া বর্তমানে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হয়ে গেছে এবং স্থানীয় বাংলাদেশীরা এখন সংখ্যালঘুতে পরিনত হয়েছেন। ২০১৮ এর দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘর্ষ শুরু হলে বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবান সীমান্ত সংলগ্ন মায়ানমারের শিন রাজ্য থেকে যুদ্ধ থেকে বাঁচতে প্রচুর বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টান লোকজন পুনরায় থানচি সীমান্ত পথে এদেশে চলে আসে। এদেশে আসার পরে তারা থানচি-রুমা এলাকার স্থানীয় পাহাড়ি পাড়ায় অবস্থান নেয়। তখন এসব বার্মিজ বৌদ্ধ শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে লেখালেখি শুরু হলে পরবর্তী পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে বান্দরবানের বিভিন্ন সংস্থার বাঁধার মুখে তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পায়নি।

এমতাবস্থায়, আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি এনজিও সংস্থা এসব বার্মিজ বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান লোকজনকে নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করে। তারা কৌশলে এসব শরণার্থীকে কক্সবাজার জেলা লাগোয়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার পাহাড়ে এনে পুনর্বাসন করে। এই কাজের জন্য তারা টাকার বিনিময়ে স্থানীয় রাজনৈতিক এবং প্রভাবশালীদের মুখ বন্ধ রাখে। পূর্ব থেকেই উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ে বসবাসরত স্বল্প সংখ্যক তঞ্চঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস ও তাদের সাথে এসব শরণার্থীদের চেহারা ও ভাষাগত মিল থাকায় এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এনজিওগুলো বার্মিজ বৌদ্ধ শরণার্থীদের উখিয়ার এসব উপজাতি পাড়ার আশেপাশে নিয়ে আসে। এতে করে স্থানীয় বা প্রশাসনের কোন প্রকার সন্দেহের সুযোগ হয়নি। আর দুর্গম উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় পাড়াগুলো অবস্থিত হওয়ায় নিচের অধিবাসীরা জানতেও পারেনি সেখানে কী হচ্ছে।
জানা যায়, উখিয়া উপজেলার ইনানী সমুদ্র সৈকত থেকে দক্ষিণে উখিয়া রাজাপালং ইউনিয়নের শফির বিল নামে গ্রাম থেকে সরাসরি পূর্ব দিকে একটি পাহাড়ে উঠে গেছে। ওই পাহাড়ে স্থানীয়রা বাঁশ, কাঠ, বিভিন্ন বনজ দ্রব্য সংগ্রহের জন্যই যেতো। সংরক্ষিত বনাঞ্চল হওয়ায় সেখানে মানুষের বসতি মোটামুটি নিষিদ্ধ বললেই চলে। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৮ সালে মিয়ানমার থেকে আসা এসব উপজাতি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান শরণার্থীকে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি বলে বান্দরবানের শীর্ষ এক জাতীয় পরযায়ের জনপ্রতিনিধি তাদের উখিয়ার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ওই পাহাড়ের তেছড়ি নামক অংশে পুনর্বাসন করেন। বর্তমানে ওই সকল শরণার্থীরা সেখানে রীতিমতো পাড়া, দোকান, বাগান, ক্ষেত-খামার, বাড়ি-ঘর বানিয়ে জমজমাট লোকবসতি তৈরী করে নিয়েছে। এছাড়া তারা নতুন করে ওই এলাকার নাম দিয়েছে তেছড়ি সারিপুত্র গ্রাম। এরই মধ্যে গত ২রা জুলাই সেখানে পাহাড় কেটে রেবত জ্যোতিসেন বৌদ্ধ বিহার নামের একটি বিহারও তৈরি করেছে। এদিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল করে এসব স্থাপনা, বসতি ও ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মান করে তারা গত ২বছর সেখানে বসবাস করলেও সংবাদমাধ্যমগুলোর কাছে এ বিষয়ে কোন তথ্যই নেই বলে জানা গেছে। তবে স্থানীয় কয়েকজন গনমাধ্যম কর্মীকে এনজিও সংস্থার অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র মতে, উখিয়ার পাহাড় একদিকে দখলে নিয়েছে রোহিঙ্গারা, পাশাপাশি প্রায় ৩ লক্ষ বার্মিজ বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান শরণার্থীও উক্ত বনাঞ্চলে জমি দখল করে বসবাস শুরু করেছে স্থায়ীভাবেই। তারা সেখানে পাহাড় এবং বনাঞ্চল পরিষ্কার করে বৌদ্ধ মন্দির ও বিহার নির্মাণ করছে। একাজে অর্থের বিনিময়ে তাদের বিভিন্ন ধরণের সহায়তা করছে স্থানীয় বাংলাদেশী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
স্থানীয়দের দাবি, আন্তর্জাতিক এসব এনজিও সংস্থাগুলো পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফ-কক্সবাজার অঞ্চল নিয়ে নতুন করে ধর্মান্তরকরণসহ নানা ষড়যন্ত্র করে চলেছে। এসব এনজিওদের প্রত্যক্ষ ইশারায় একদিকে চলছে রোহিঙ্গাদের নীরবে খ্রিস্টান বানানো, অন্যদিকে বার্মিজ বৌদ্ধ রোহিঙ্গাদেরকেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে পুনর্বাসন চলছে। উখিয়ার পাহাড় চূড়াগুলো এখন খ্রিস্টান রোহিঙ্গাদের গীর্জা এবং বৌদ্ধ প্যাগোডা স্থাপন করা হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন এখনই সরকারি উদ্যোগে এসব ষড়যন্ত্র বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ ও এনজিও সংস্থাগুলোর কর্মকান্ড নজরে না আনলে ভবিষ্যতে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাশাপাশি কক্সবাজারেও স্থানীয় মুসলমানদের বসবাস হুমকি স্বরুপ হয়ে যাবে।